৮ হাজার মানুষের দেহভস্ম মিলল পোল্যান্ডের গণকবরে
পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় শহর দিজিয়ালদোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময়কার নাৎসী বাহিনীর বন্দিশিবিরের একটি গণকবরে ১৭ দশমিক ৫ টন মানব দেহভস্ম পাওয়া গেছে। অন্তত ৮ হাজার মানুষকে হত্যার পর পুড়িয়ে তাদের ছাই রাখা হয়েছিল সেখানে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডে নিহতদের স্মরণে দেশটির সরকারের গঠিত প্রতিষ্ঠান পোল্যান্ড’স ন্যাশনাল রিমেমব্রান্স ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা টমাজ জ্যাংকোস্কি বিবিসিকে জানিয়েছেন এসব তথ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দিজিয়ালদোর নাম ছিল সোলদাউ। যুদ্ধের শুরুর বছর, ১৯৩৯ সালেই এ শহরে রাজনৈতিক বন্দিশিবির (কনসেনট্রেশন ক্যাম্প) খুলেছিল নাৎসি বাহিনী। গণকবরটি সেই বন্দিশিবিরের সংলগ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, লোকজনকে ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যার পর তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে তার ছাই এই গণকবরে ফেলে দেওয়া হতো।
তবে টমাজ জ্যাংকোস্কি আট হাজার মানুষের দেহাবশেষ থাকার দাবি করলেও পোল্যান্ডের ইতিহাসবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই গণকবরে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহের ছাই রয়েছে। এই নিহতদের মধ্যে দিজিলয়ালদো ও তার আশপাশের এলাকার ধর্মযাজক ও বুদ্ধিজীবীরাও ছিলেন।
নিহতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ডিএনএ টেস্টের জন্য এসব দেহভস্মের নমুনা বিজ্ঞানাগারে পাঠানো হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
গনকবরটিতে মানব দেহভস্মের পাশাপাশি আধপোড়া কাপড়, বোতাম ও অন্যান্য জিনিসও পাওয়া গেছে, তবে কোনোটিই মূল্যবান নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, হত্যার পর মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে নিহতদের দেহ তল্লাশি করে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করত নাৎসী সেনারা।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউজ মোরাউইকি বুধবার এক বিবৃতিতে জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসী বাহিনী পোল্যান্ডে যে গণহত্যা ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করেছে, সে বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে দেশটির সরকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের যেসব দেশে সবচেয়ে নিষ্ঠুর অভিযান চালিয়েছে নাৎসী সেনারা, সেসবের মধ্যে অন্যতম পোল্যান্ড। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল নাৎসী সেনারা, তাদের মধ্যে ৩০ লাখই ছিল ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার বাইরে দেশটির যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল নাৎসীরা, বর্তমান সময়ের নিরিখে তার পরিমাণ ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
প্রধানমন্ত্রী মোরাউইকি অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি বাবদ এখনও কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি জার্মানি।
জার্মানির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ক্ষতিপুরণ দেওয়া থেকে দায়মুক্তি নিয়েছে জার্মানি।
এসএমডব্লিউ