শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান
শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত লঙ্কান নেতাদের সর্বদলীয় বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় সর্বদলীয় ওই বৈঠকে দেশটির স্পিকারকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
আরও পড়ুন: দেশ ছেড়ে পালিয়েও মুক্তি নেই, মালদ্বীপেও বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পালিয়ে যাওয়ায় লঙ্কান নেতারা স্পিকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে পদত্যাগও করতে বলা হয়েছে।
এদিকে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে সৃষ্ট বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ার শেল নিক্ষেপের পর শ্রীলঙ্কায় এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে পালিয়ে গেলেও বেসামরিক নাগরিকদের বিক্ষোভের ভয়ে তাকে সিঙ্গাপুরে চলে যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেট বিমানের ব্যবস্থা করে দিতে মালদ্বীপ সরকারকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
এনডিটিভি বলছে, চলমান সংকট নিরসনে বুধবার লঙ্কান রাজনৈতিক নেতারা একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেন। সেখানে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকারকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জরুরি অবস্থা জারি করে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হলেন প্রধানমন্ত্রী
তবে রনিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয় বলেছে, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলকে অবশ্যই সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হবে। একইসঙ্গে সরকার এবং বিরোধীপক্ষ উভয়ের কাছেই গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার জন্য স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনাকে অবহিত করেছেন বিক্রমাসিংহে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়ার পর কলম্বোতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় বুধবার শ্রীলঙ্কাজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এদিন পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুসারে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বুধবার রাতের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় সংকটের জন্য দায়ী রাশিয়া: জেলেনস্কি
সেসময় তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেকে দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে মালদ্বীপে পালালেও প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে দক্ষিণ এশীয় এই দ্বীপরাষ্ট্র থেকে এবার পাড়ি জমাতে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে মালদ্বীপে তিনি প্রাইভেট বিমানের জন্য অপেক্ষা করছেন।
শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে অবস্থান করছেন এবং দেশটির রাজধানী মালে থেকে নির্ধারিত সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে এখনও রওনা হননি। যদিও বুধবার রাতেই তার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মিরর আরও জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে, তার স্ত্রী ইওমা রাজাপাকসে এবং দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তার আজ (বুধবার) রাতে মালে থেকে এসকিউ৪৩৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে তারা ফ্লাইটে আরোহণ করেননি।
আরও পড়ুন: পালিয়েও মিলছে না শান্তি, মালদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন গোতাবায়া
অন্যদিকে মালদ্বীপের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় মালে থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের জন্য একটি প্রাইভেট বিমানের ব্যবস্থা করার বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে।
মালে বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালদ্বীপে পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে, তার স্ত্রী এবং দেহরক্ষীদের পুলিশ পাহারায় একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্টের ছোট ভাই ও সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসেও দেশ ছেড়েছেন।
টিএম