শ্রীলঙ্কা এখন কার হাতে?
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি।
আর এরপরই প্রশ্ন উঠেছে প্রেসিডেন্টের পলায়নের পর শ্রীলঙ্কার শাসনভার এখন কার হাতে। কার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও আগেই পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা কে পরিচালনা করছেন বা করতে যাচ্ছেন, সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সামরিক বিমানে করে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে মালদ্বীপে পাড়ি জমানোর ফলে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা কঠামোয় উল্লেখযোগ্য শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে গোতাবায়া রাজাপাকসে বিস্তৃত নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সেইসাথে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
অবশ্য শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ক্ষমতা গ্রহণ করা উচিত। কারণ শ্রীলঙ্কান পার্লামেন্টে তিনি প্রেসিডেন্টের ডেপুটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন।
কিন্তু বিবিসি বলছে, রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কায় গভীরভাবে অজনপ্রিয়। এছাড়া গত শনিবার বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন দেওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
যদিও বিক্ষোভকারীদের হামলার সময় তিনি ও তার পরিবার ওই বাসভবনের ভেতরে ছিলেন না। এছাড়া রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগের কথা বললেও এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তারিখ তিনি ঘোষণা করেননি।
সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে সামনে চলে আসতে পারেন শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসাবে তারই শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তিনিও রাজাপাকসে পরিবারের মিত্র এবং এই কারণে জনগণ তাকে গ্রহণ করবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সজিথ প্রেমাদাসা বিবিসিকে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে যেতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সন্দেহের কারণে তারও জনসমর্থনের অভাব রয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একটি সামরিক বিমানে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ পালিয়ে যান বলে জানান দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া, তার স্ত্রী ও এক দেহরক্ষীসহ চার যাত্রী নিয়ে সামরিক বিমান অ্যান্তোনভ–৩২ মঙ্গলবার মধ্যরাতে বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করে।
এর আগে বিমানব্ন্দরে অভিবাসন কর্মকর্তাদের বাধার মুখে আকাশপথে বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর সমুদ্রপথে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন গোতাবায়া। বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্মকর্তারা গোতাবায়ার পাসপোর্টে সিল মারতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার এই দ্বীপ দেশটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য নৌবাহিনীর টহল নৌযান ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
দেশটিতে চলমান অস্থিরতা এবং এর জেরে সাধারণ জনগণের ক্ষুব্ধ আন্দোলনের দাবানল আছড়ে পড়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাসভবনে। গত শনিবার দেশটির শীর্ষ এই দুই নির্বাহীর বাসভবনের দখল নেন বিক্ষোভকারীরা, এখনও তারা সেখানেই অবস্থান করছেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বুধবার পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের পথ তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পদত্যাগের আগে তারা দখলে নেওয়া বাসভবন ছাড়বেন না।
দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নেওয়ার আগ মুহূর্তে সেখান থেকে পালিয়ে যান ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া। পরে তিনি দুবাইয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার কোনো আইনেই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের বিধান নেই। তবে পদত্যাগের পর গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টিএম