হামলায় কোনো বিরতি নিচ্ছে না রুশ সামরিক বাহিনী: জেলেনস্কি
কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিযোগ, মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে প্রায় পুরো ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা বেজেছে।
আর তাই রুশ হামলা মোকাবিলায় কিয়েভকে আরও আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
মঙ্গলবার রাতে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘এর আগে রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে কিছু সময়ের জন্য কোনো বিমান হামলার সতর্কতা ছিল না। তবে কিছু লোক এমন অস্বাভাবিক নীরবতার কারণে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন বোধ করেছিল। তারা অত্যাধিক চিন্তা করছিল, ভয় পাচ্ছিল, কোন ধরনের ব্যাখ্যা খুঁজছিল – যেন দখলকারীরা কিছু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে…।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে যুক্তি খোঁজা উচিত নয়। রাশিয়ান সেনাবাহিনী কোনো বিরতি নিচ্ছে না। তাদের একটিই কাজ - আর তা হলো- মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া, মানুষকে ভয় দেখানো। আজ সন্ধ্যায়, কিয়েভ এবং আবারও প্রায় পুরো ইউক্রেন বিমান হামলার সতর্কতা অ্যালার্ম শুনেছে।’
জেলেনস্কি বলেন, পশ্চিম ইউক্রেনের খমেলনিতস্কি অঞ্চল, দিনিপ্রোপেত্রোভস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চল, সুমির সীমান্ত অঞ্চল এবং কৃষ্ণ সাগরের বন্দর শহর মিকোলাইভ ও অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে।
তার ভাষায়, ‘কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ইউক্রেনের জন্য আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা পেতে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা এক দিনের জন্যও আমরা কম করিনি এবং কমাব না।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সম্প্রতি লুহানস্ক অঞ্চল দখলে নেওয়ার পর রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দোনেতস্ক অঞ্চলে। চলতি সপ্তাহে এই অঞ্চলের স্লোভিয়ানস্ক শহরে বেশ কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা।
মূলত লিসিচানস্কের পতনের পর পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক অঞ্চলের এই শহরটি যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন হয়ে উঠেছে।
টিএম