নোবেলজয়ী সাংবাদিকের সংবাদমাধ্যম বন্ধের নির্দেশ ফিলিপাইনে
২০২২ সালে সাহিত্য শাখায় নোবেল পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসার নিউজ সাইট র্যাপলার বন্ধের নির্দেশ ফিলিপাইনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তহবিল গঠন ও র্যাপলারের আংশিক মালিকানা বিক্রির অভিযোগে বুধবার এই আদেশ দেওয়া হয়।
র্যাপলারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ২০২২ সালে সাহিত্যে রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পাওয়া সাংবাদিক মারিয়া রেসা অবশ্য আইনভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন এসইসির এই পদক্ষেপ ‘ষড়যন্ত্রমূলক’। পাশাপাশি, সরকারি এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী, দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যম যদি বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির কাছে অর্থের বিনিময়ে মালিকানা বিক্রি করে, সেক্ষেত্রে সেই সংবাদমাধ্যমটি আর পুরোনো নামে ও মালিকের অধীনে চলতে পারবে না।
২০১৫ সালে অলাভজনক মার্কিন বিনিয়োগ কোম্পানি ওমিদার নেটওয়ার্ক থেকে তহবিল গ্রহণ করেছিল র্যাপলার। মার্কিন ধনকুবের ব্যবসায়ী ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে’র প্রতিষ্ঠাতা পিয়েরে ওমিদার এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।
তহবিল গঠনের সময় ওমিদার নেটওয়ার্কের সঙ্গে র্যাপলারের কর্তৃপক্ষের কী চুক্তি হয়েছিল— জানা যায়নি। তবে তিন বছর পর, ২০১৮ সালে ওমিদার নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়— তহবিলের সেই অর্থের ওপর আর কোনো দাবি নেই কোম্পানির। র্যাপলারের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই অর্থ কোম্পানির পক্ষ থেকে দান করা হয়েছে।
ওমিদার নেটওয়ার্কের এ ঘোষণার পর ওই বছরই র্যাপলার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠায় ফিলিপাইনের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। সেই নোটিশে বলা হয়, বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে অর্থগ্রহণ ও নিউজ সাইটের মালিকানা বিক্রি করে তা গোপন রাখার অভিযোগে র্যাপলার বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে এসইসি।
নোটিশ জারির পর সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করে র্যাপলার কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি আদালত সেই আপিল খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে র্যাপলারের অর্থ গ্রহণ অসাংবিধানিক ছিল।
ফিলিপাইনের অল্প যে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে বিচার করে, সেসবের মধ্যে র্যাপলার একটি। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই নিউজ সাইটটি ব্যাপক পরিচিতি পায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে।
র্যাপলার মূলত একটি অনুসন্ধানী সংবাদভিত্তিক নিউজসাইট। ২০১৬ সালে দুতার্তে দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর এই অভিযানের খুঁটিনাটি ও মানবাধিকার লঙ্ঘণ সম্পর্কিত প্রচুর সংবাদ প্রকাশ করেছিল র্যাপলার। এছাড়া ফিলিপাইনের দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল এই পত্রিকা।
২০১৮ সালে প্রথমবার যখন র্যাপলারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তখন দুতার্তে ক্ষমতায় ছিলেন। এবারের নোটিশ জারি হলো দুতার্তের বিদায়ের ঠিক আগে আগে। সামনের মাসেই ফিলিপাইনের নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন ফার্দিনান্দ মার্কোস জে.আর। ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসক ইমেলদা মার্কোসের ছেলে ফার্দিনান্দ দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট দুতার্তের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
এদিকে, এসইসির এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বুধবার রাজধানী ম্যানিলায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ক্ষমতাবানদের হয়রানির শিকার। রাজনৈতিক কলাকৌশল ব্যবহার করে আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে, কিন্তু আমরা হাল ছাড়ব না।’
‘র্যাপলার আগের মতোই চলবে। নিজেদের অধিকার আদায়ে আমরা ফের আদালতে যাব। আমাদের লড়াই চলবে।’
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ