চরম রাজনৈতিক সংকটে ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য
আদর্শগতভাবে বিজেপিবিরোধী দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের জেরে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে ভারতের অন্যতম প্রভাশালী রাজনৈতিক দল শিব সেনায়।
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিদ্রোহে ইতোমধ্যে অবস্থান টালমাটাল হয়ে উঠেছে ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় ক্ষমতাসীন এই দলটির। দলের প্রেসিডেন্ট উদ্ভব ঠাকরেও তার পদ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।
ভারতের রাজনীতিতে গত ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রভাব রেখে চলা মারাঠা জাতির প্রধান মুখপাত্র রাজনৈতিক দল শিব সেনা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা মহারাষ্ট্রের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ বালাসাহেব কেশব ঠাকরে, যিনি বাল ঠাকরে নামেই অধিক পরিচিত।
২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছেলে উদ্ভব ঠাকরে। মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীও তিনি।
বিজেপির মতো শিব সেনাও কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। দশকের পর দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে উষ্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল এই দলটির, এমনকি জাতীয় রাজনীতির একাধিক ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনও করেছে শিব সেনা।
কিন্তু গত দশকের শেষ থেকে এই সমঝোতায় চিড় ধরে। দুই দলের মধ্যে বৈরীতা আরও গভীর হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে, মহারাষ্ট্রে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনের সময়।
ওই নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের বর্ষীয়ান রাজনীতিক শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ও কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’ জোট গঠন করেন উদ্ধভ ঠাকরে।
মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় আসন সংখ্যা মোট ২৮৮টি। কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায়, সেক্ষেত্রে ওই দলকে বিধানসভায় ন্যূনতম ১৪৫টি আসান পেতে হবে।
কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি; বিজেপি পায় ১০৬টি আসন, শিব সেনা পায় ৫৬ আসন, এনসিপি পায় ৫৪ আসন আর কংগ্রেস পায় ৪৪ আসন।
বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন হয় ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’ জোট এবং জোটের প্রধান মুখপাত্র ও মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ভব ঠাকরে।
কিন্তু এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তুষ্ট ছিলেন শিব সেনার একদল আইন প্রণেতা। শেষে সরকার গঠনের প্রায় আড়াই বছর পর শিব সেনার অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা ও মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের পূর্ত ও নগর উন্ননয়ন মন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে বসেন শিব সেনার একদল বিধায়ক।
তাদের অভিযোগ, এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার মাধ্যমে শিব সেনা তার মূল নীতি ‘হিন্দুত্ববাদ’ থেকে সরে গেছে এবং দলের প্রকৃত আদর্শকে বাঁচাতে হলে এই জোট থেকে বেরিয়ে আসা উচিত উদ্ভব ঠাকরের।
৯ দিন আগে বিদ্রোহের ডাক দিয়ে কয়েক জন বিধায়কসহ মহরাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই ত্যাগ করেন একনাথ শিন্ডে এবং পার্শ্ববর্তী গুজরাট রাজ্যের সুরাট নগরে একটি হোটেলে অবস্থান নেন।
সেখানে দু’দিন থাকার পর আরও প্রায় ২১ জন বিধায়ককে নিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের রাজধানী গুয়াহাটির বিলাসবহুল হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে ওঠেন তিনি। এই ২১ জনের মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্য রয়েছেন ৮ জন।
একনাথ শিন্ডের দাবি, বিধানসভার অন্তত ৪০ জন বিধায়কের সমর্থন তার সঙ্গে রয়েছে; এবং উদ্ভব ঠাকরে যদি ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’ জোট ত্যাগ না করেন তাহলে ‘শিব সেনা-বালাসাহেব’ নাম নতুন দল গঠনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, শিন্ডের এই দাবিকে ‘অন্যায়’ উল্লেখ করে উদ্ভব ঠাকরে পরিষ্কার জানিয়ে দেন- জোট ভাঙা সম্ভব নয়। পাশপাশি, দলের মধ্যে শুরু হওয়া এ বিদ্রোহের জন্য বিজেপিকে সরাসরি দায়ী করেন তিনি।
বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহী মন্ত্রীদের ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ