সেভেরোদোনেতস্ক জয়ের পর রাশিয়ার নজর এখন লিসিচানস্ক শহরে
টানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। উভয়পক্ষের এই সম্মুখ সমরে রাশিয়ার ‘অর্জনই’ যেন বেশি। মূলত পুরো ইউক্রেন ছেড়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলেই এখন চলছে তীব্র লড়াই। এই লড়াইয়ে দিন দু’য়েক আগেই পূর্ব ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শহর সেভেরোদোনেতস্কের দখল নিয়েছিল রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
আর এরপরই রুশ সেনা ও মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের নজর এখন লুহানস্ক প্রদেশে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে থাকা শেষ বড় শহর লিসিচানস্কে। যোদ্ধাদের ইতোমধ্যেই এই শহরের ভেতরে পাঠানো শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সোমবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
প্রসঙ্গত, শনিবার ইউক্রেনের লুহানস্কের সেভেরোদোনেতস্ক শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এর মাধ্যমে পুরো লুহানস্ক অঞ্চলটি রাশিয়ার দখলে চলে এলো। অবশ্য একইদিন দেওয়া ওই ভাষণে জেলেনস্কি রুশ নিয়ন্ত্রণ থেকে ভূখণ্ড ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারও করেছেন।
রয়টার্স বলছে, গত শনিবার লুহানস্কের সেভেরোদোনেতস্ক শহরের দখল নেওয়ার পর রাশিয়ার নজর এখন লিসিচানস্ক শহরে। এই শহরটি সেভেরোদোনেতস্ক শহরের জমজ শহর (টুইন সিটি) নামে পরিচিত।
সেভেরোদোনেতস্ক শহরটি মূলত পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের সিভারস্কি ডোনেটস নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। আর এর পার্শ্ববর্তী ছোট শহর লিসিচানস্ক এবার দখলে নিতে পারলে মস্কো লুহানস্কের পুরোটাই দখল করতে সক্ষম হবে। মূলত লুহানস্ক হচ্ছে ডনবাসের দু’টি প্রদেশের একটি যা রাশিয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার নামে দখলের জন্য হামলা চালাচ্ছে।
রোববার রুশ বার্তাসংস্থা তাস মস্কোপন্থি এক বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী পাঁচ দিক থেকে লিসিচানস্কে প্রবেশ করেছে এবং ইউক্রেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। রয়টার্স অবশ্য এই দাবি স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী কামান ব্যবহার করে দক্ষিণ থেকে লিসিচানস্ককে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শহরে প্রবেশ করেছে কি না সেটি উল্লেখ করেননি তিনি।
এলেনা নামে লিসিচানস্কের একজন বয়স্ক নারী নিজ এলাকা ছেড়ে বাসে করে ইউক্রেনীয়-নিয়ন্ত্রিত শহর পোকরভস্কে পৌঁছেছেন। তিনি বলছেন, ‘লিসিচানস্কে গত সপ্তাহে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছিল। অবস্থা এতোটাই ভয়াবহ যে, আমরা সেখানে আর অবস্থান করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই আমার স্বামীকে বলেছিলাম, যদি আমি মারা যাই, দয়া করে আমাকে বাড়ির পেছনে দাফন করো।’
অন্যদিকে বার্তাসংস্থা আরআইএ একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী রোববার সেভেরোদোনেতস্কের অ্যাজোট রাসায়নিক প্ল্যান্ট থেকে শিশুসহ আড়াইশো জনেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।
টিএম