মতবিরোধ সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আশাবাদী ইরান
পরমাণু সমঝোতায় কে আগে ফিরবে; এ নিয়ে চলমান কূটনৈতিক মতবিরোধের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগে তেহরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করবে বলে নিজেদের বিশ্বাসের কথা জানিয়েছে ইরান। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ইরান সরকারের এক মুখপাত্র একথা জানান বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে কে আগে ফিরবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক মতবিরোধ চলছে। তেহরান বলছে, ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে চায়; তবে এর আগে দেশটির ওপর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন বলছে- ইরানকেই এই চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে আগে ঘোষণা দিতে হবে।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ইরান ও অন্য প্রধান শক্তির সঙ্গে আলোচনার পূর্বে তেহরানের চাপের কারণে ২০১৫ পরমাণু চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
শনিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা’কে দেশটির সরকারের মুখপাত্র আলী রাবায়ি বলেন, ‘(তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে) মতবিরোধ সত্ত্বেও কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলাফল আমাদের পক্ষেই আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সকল পক্ষ ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ নিকট ভবিষ্যতে তাদের সব অঙ্গীকার পূরণ করবে।’
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি সমঝোতায় টিকে থাকলেও সমঝোতা মেনে চলার ক্ষেত্রে এসব দেশের ঢিলেঢালা মনোভাব ছিল লক্ষ্য করার মতো।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় ফেরার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার বিষয়ে তেহরানের অঙ্গীকার করার আহ্বান জানায় ওয়াশিংটন।
প্রেসিডেন্ট রুহানির প্রশাসনের দাবি, আগে ইরানের ওপর থেকে সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, এরপরই সমঝোতায় ফিরবে দেশটি। এবিষয়ে উভয় দেশ অনড় অবস্থানে থাকায় পরমাণু সমঝোতায় ফেরা নিয়ে সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা।
এ অবস্থায় ইরানের পার্লামেন্ট গত ডিসেম্বর মাসে একটি আইন পাস করে। এতে বলা হয়েছে- যদি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া আরও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন স্থগিত করবে ইরান। এছাড়া ইরান সরকারকে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ওই আইনে। নিশ্চিতভাবে এই বিষয়টিকেও ভালোভাবে দেখছে না বাইডেন প্রশাসন।
আলী রাবায়ি বলেন, পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে ইরানের অঙ্গীকারের ব্যাপারে এই আইন কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। এছাড়া আমেরিকার পদক্ষেপের সঠিক জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটা কোনো বাধা নয়।
এদিকে পূর্ব নির্ধারিত সফরে শনিবার ইরানে পৌঁছেছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। সংস্থাটিতে নিযুক্ত ইরানের দূত কাজেম ঘারিবাবাদি টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় একথা জানান।
ইরান বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সূত্র: রয়টার্স
টিএম