চীনের বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে অভিযোগের হুমকি তাইওয়ানের
কোনো সতর্কবার্তা না দিয়ে তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিপণ্য গ্রুপার মাছ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাজেশেনে অভিযোগ দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তাইওয়ানের সরকার।
স্বায়ত্বশাসিত এই দ্বীপ ভূখণ্ডের কৃষি বিষয়ক সর্বোচ্চ সরকারি সংস্থা কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারের (সিওএ) সদস্যরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত বছর থেকেই ‘কীটনাশক ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের অতিমাত্রায় উপস্থিতি’র অভিযোগ তুলে তাইওয়ানের একের পর এক কৃষিপণ্য নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে চীনের সরকার। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে আনারস, জামরুল, থাই লিচু ও আতাফল।
সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য গ্রুপার মাছ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় চীনের সরকার। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চায়না অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, তাইওয়ান থেকে আসা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন নামের এক প্রকার রাসায়নিকের অতিমাত্রায় উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় এখন থেকে তাইওয়ান থেকে আর এই মাছ আমদানি করবে না চীন।
সাধারণত, পানি থেকে মাছ তোলার পর ব্যাকটেরিয়াজনিত পচন রোধে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন নামের এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করা হয়। সীমিত মাত্রায় মানব দেহে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে অতিমাত্রায় এটি মানবদেহে প্রবেশ করলে দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা কমতে থাকে, এমনকি বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
এর আগে নিষিদ্ধ করা আনারস, জামরুল, থাই লিচু ও আতাফলেও অতিমাত্রায় পচনরোধী রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের বিবৃতিতে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিওএ’র প্রধঅন নির্বাহী চেন চি-চুং সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন যেভাবে আমাদের মাছ আমদানি নিষিদ্ধ করল, তা আন্তর্জাতিক নিয়ম বহির্ভূত; কারণ নিয়ম হলো— এ ধরনের ঘটনায় রপ্তানিকারক দেশকে আগে অভিযোগের ব্যাপারটি জানাতে হবে এবং তারপর একটি নিরপেক্ষ প্যানেল দিয়ে অভিযোগের তদন্ত করতে হবে।’
‘আমরা আমাদের রপ্তানি পণ্যে এমন কোনো রাসায়নিকের ব্যবহার কখনও করি না— যা মানবদেহের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। চীন ছাড়াও হংকং, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ডে তাইওয়ানের গ্রুপার মাছ রপ্তানি হয়। তারা এখন পর্যন্ত আমাদের মাছে মানবদেহের জন্য হুমকি হতে পারে, এমন রাসায়নিকের উপাদান পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেনি।’
‘যদি চীন এই আমদানি নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার না করে, সেক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) স্যানিটারি অ্যান্ড ফাইটোস্যানিটারি মেজারমেন্ট কমিটি (এসপিএস) কমিটির কাছে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হব।’
চতুর্দিকে সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপভূখণ্ড তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য গ্রুপার মাছ। এই মাছটির বিভিন্ন প্রজাতি মিষ্টি পানির জলাশয় ও লোনা পানিতে দেখা যায়। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজরে এই মাছের বেশ চাহিদা রয়েছে।
মিষ্টি পানির গ্রুপার প্রজাতি চাষযোগ্য। তাইওয়ানে ব্যাপকভাবে এই মাছটির চাষ হয় এবং সমুদ্রেও যথেষ্ট পরিমানে মেলে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই মাছটির শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ তাইওয়ান। ২০২১ সালে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের গ্রুপার রপ্তানি করেছিল এই দ্বীপ ভূখণ্ড।
তাইওয়ানের গ্রুপারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন। স্বায়ত্তশাসিত এই দ্বীপ-ভূখণ্ড থেকে রপ্তানি হওয়া গ্রুপার মাছের ৯১ শতাংশ যেত চীনের বাজারে।
চীন ছাড়া আরও যেসব দেশে তাইওয়ানের গ্রুপার মাছ যায়, সেসব হলো—অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ড।
সূত্র: এএনআই
এসএমডব্লিউ