অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। বন্দুকধারীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের দু’টি ঘটনার পর দেশটিতে এই দাবি নতুন করে জোরদার হয়েছে।
যারা মিছিলে অংশ নিয়েছেন তাদের স্লোগান ছিল, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়া থেকে স্বাধীনতা চাই আমি’। অনেকেই প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন, ‘আমাদের শিশুদের বাঁচান, আগ্নেয়াস্ত্র নয়।’
এই বিক্ষোভকে সমর্থন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি কংগ্রেসের প্রতি এ বিষয়ক আইন পাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য এমন আইন পাস হওয়ার সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষীণ। কারণ রিপাবলিকানরা এর বিরুদ্ধাচরণ করবে বলে জোর ধারণা রয়েছে।
টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুলে গত ২৪ মে এক বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে ১৯ শিশু শিক্ষার্থীসহ ২১ জন নিহত হন। এছাড়া নিউইয়র্কের বাফালো শহরের আরেক ঘটনায় নিহত হয় ১০ জন। এ দু’টি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার দাবিকে নতুন করে জোরদার করে।
২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড স্কুল বন্দুক হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের গঠন করা আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা বিষয়ক গোষ্ঠী ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ শনিবার জানায়, তারা দেশজুড়ে সাড়ে চারশো মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করেছে। ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস ও শিকাগোর মত শহরেও অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সমাবেশ।
সংগঠনটি বলছে, মানুষ যখন মারা যাচ্ছে তখন রাজনীতিবিদদের ‘চুপচাপ বসে থাকতে’ দেবে না তারা। মার্চ ফর আওয়ার লাইভস (এমএফওএল) বলছে, রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমেরিকানদের মৃত্যু হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে পার্কল্যান্ড স্কুল হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ডেভিড হগ বলেন, উভালদেতে শিশুদের হত্যার ঘটনার পর আমাদের ‘ক্রুদ্ধ হওয়া উচিত ছিল, আমাদের পরিবর্তনের দাবি করা উচিত ছিল - সীমাহীন বিতর্ক নয়, বরং এখনই পরিবর্তনের দাবি।’
গারনেল হুইটফিল্ড নামে এক ব্যক্তির ৬৮ বছর বয়স্ক মা গত ১৪ মে নিউইয়র্কের বাফালো শহরে নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনি ওয়াশিংটনের জনসমাগমে বলেন, আমরা এখানে এসেছি ন্যায়বিচারের দাবিতে। আমরা এখানে তাদের সাথে সমবেত হয়েছি যারা দৃঢ়তার সাথে সংবেদনশীল আগ্নেয়াস্ত্র আইনের পক্ষে।
অন্যান্য নীতি পরিবর্তনের পাশাপাশি এমএফওএল অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ, একটি জাতীয় লাইসেন্স ব্যবস্থা যেখানে বন্দুকের মালিকের নাম নিবন্ধিত থাকবে এবং অস্ত্র ক্রেতার অতীত জীবন তদন্ত করে দেখার ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়।
এমএফওএল-এর প্রথম বিক্ষোভটি হয়েছিল ২০১৮ সালে। মূলত পার্কল্যান্ডের একটি স্কুল গোলাগুলিতে ১৪জন শিক্ষার্থী ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হওয়ার পর সেই বিক্ষোভ হয়েছিল। আয়োজকরা সেসময়ে বলেছিলেন, এটা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বড় সমাবেশ। ওই সমাবেশে যোগ দিতে আমেরিকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিনি শনিবারের বিক্ষোভের পক্ষে আছেন। এছাড়া অ্যাসল্ট অস্ত্র নিষিদ্ধ এবং অতীত খতিয়ে দেখার পরিধি বাড়ানোসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট।
জো বাইডেন টুইটারে লেখেন, ‘আমি তাদের সাথে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের প্রতি আমার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি: কিছু একটা করুন’।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
টিএম