মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে বেলজিয়ামে ২১ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন
টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনাভাইরাস মহামারি এখনও শেষ হয়নি। আর এরমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আরেক সংক্রামক ভাইরাস মাঙ্কিপক্স। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
মাঙ্কিপক্স কী করোনাভাইরাস মহামারির মতোই ভয়ানক হয়ে উঠবে? এমন আশঙ্কার মধ্যেই রোববার ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণ মোকাবিলায় ২১ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন বিধি জারি করেছে বেলজিয়াম। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে, তাদের তিন সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেলজিয়ামে এখনও পর্যন্ত চারজনের শরীরে ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। আক্রান্তদের প্রত্যেকেই ইউরোপের এই দেশটির বন্দরনগরী অ্যান্টওয়ার্প-এ আয়োজিত এক সাম্প্রতিক উৎসবের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। অর্থাৎ আক্রান্ত চারজনই ওই উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন।
আর তাই সেই উৎসব থেকেই বেলজিয়ামে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আক্রান্তদের প্রত্যেককেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, চিকিৎসা চলছে।
এদিকে দেশে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম জারি করা হলেও বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বলেছে, তাদের দেশে মাঙ্কিপক্সের বৃহত্তর প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি কম। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণের ক্ষেত্রে এমনিতে আইসোলেশনের প্রয়োজন হয় না। তবে কোভিড সংক্রমণের পর এখন অনেকেরই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সতর্ক থাকা উচিত।
‘মাঙ্কিপক্স’ মূলত গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্স গোত্রেরই রোগ। তবে, এটি গুটিবসন্তের থেকে কম মারাত্মক, মৃত্যুর হার ৪ শতাংশেরও নিচে। বেশিরভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে, এর আগে কখনও আফ্রিকার বাইরে মহামারি আকারে এই রোগ ছড়াতে দেখা যায়নি।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পর রোববার এই রোগ শনাক্ত করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যেও। আফ্রিকার বাইরে ‘মাঙ্কিপক্সের’ এই অস্বাভাবিক বিস্তারই উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বছরের পর বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই রোগকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে ‘মাঙ্কিপক্স’ রুখতে প্রথম দেশ হিসাবে বেলজিয়াম কোয়ারেন্টাইন জারি করলেও, বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যে। রোববার ব্রিটেনে আরও ১১ জনের ‘মাঙ্কিপক্স’ পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
ফলে, সব মিলিয়ে ব্রিটেনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ জনে। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। বর্তমানে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে সে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে। অবশ্য মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ‘নিষ্ক্রিয়তার’ জন্য ইতোমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছে ব্রিটিশ সরকার।
রোববার ইসরায়েল ও সুইজারল্যান্ডও ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাস সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করেছে। ফলে, এই ভাইরাল রোগ বর্তমানে বিশ্বের মোট ১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে গত শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি এবং সুইডেন – এই ১২টি দেশে অন্তত ৯২টি মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
টিএম