নারী উপস্থাপকদের অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে, নির্দেশ তালিবানের
আফগানিস্তানের নারী টিভি উপস্থাপক ও পর্দায় উপস্থিত অন্যান্য নারীদের সম্প্রচারের সময় মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। গত বুধবার (১৮ মে) আফগান মিডিয়া আউটলেটগুলোকে এই নির্দেশনা সম্পর্কে জানানো হয়।
আফগানিস্তানের ধর্মীয় পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসি পশতুকে এই তথ্য জানিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে আফগানিস্তানের সকল নারীকে জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখা-সহ বোরকা পরতে বা শাস্তির ঝুঁকি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল তালেবান।
আগের ওই নির্দেশনা দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর নারী টিভি উপস্থাপকদের জন্যও একই ডিক্রি জারি করল গোষ্ঠীটি।
বিবিসি বলছে, গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝিতে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানের নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পর তা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। এছাড়া পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের একাকী ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি স্থানীয় টিভি স্টেশনে কর্মরত একজন নারী আফগান সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নারী টিভি উপস্থাপকদের বাধ্যতামূলকভাবে মুখ ঢেকে রাখার সর্বশেষ এই নির্দেশনা শুনে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
বিবিসিকে ওই নারী সাংবাদিক বলেন, ‘তারা (তালেবান) টিভিতে আমাদের উপস্থাপনা বন্ধ করতে পরোক্ষভাবে চাপ দিচ্ছে।’
এদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তালেবানের নতুন এই নির্দেশনা শনিবার (২১ মে) থেকে কার্যকর হবে। দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের প্রিভেনশন অব ভাইস এবং প্রমোশন অব ভার্চ্যু বা ‘পূণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ’ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।
তবে তালেবান সরকারের ওই মুখপাত্র তাদের এই নির্দেশনাকে ‘পরামর্শ’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তবে কেউ যদি তাদের এই ‘পরামর্শ’ মেনে চলতে বা পালন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার কী হবে সেটি স্পষ্ট নয়।
কাবুলের টিভি স্টেশনে কর্মরত নারী ওই সাংবাদিক বলছেন, ‘আমি মুখ ঢেকে কীভাবে খবর পড়তে পারি? আমি এখন কী করব জানি না - আমাকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। কারণ আমি আমার পরিবারের উপার্জনকারী।’
আফগান সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, তাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের সকল মিডিয়া আউটলেটে নারী টিভি উপস্থাপকদের মুখ ঢেকে রাখার আদেশটি জারি করা হয়েছে।
এদিকে তালেবানের এই নির্দেশনা সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টুইটারে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। অনেকে এটিকে চরমপন্থা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তালেবানের আরেকটি পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
১৯৯৬ সালে যখন প্রথম দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল তালেবানগোষ্ঠী, সেসময় নারীদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের শাসনামলে নারীদের শিক্ষা ও চাকরির অধিকার ছিল না। তারা পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না।
তবে ২০০১ সালে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর হামলায় পতন হয় তৎকালীন তালেবান সরকারের, তাদের অন্যান্য অনেক আইনের সঙ্গে এই আইনটিও সেসময় বিদায় নেয়। ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার ২০ বছর পর ২০২১ সালের আগস্টে ফের ক্ষমতায় আসীন হয় তালেবান এবং একে একে নিজেদের পুরনো সব নীতি ফিরিয়ে আনা শুরু করে।
উল্লেখ্য, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থি অবস্থান ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগে বিশ্বজুড়েই তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে তালেবান। বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলগুলো বন্ধ রাখার কারণে বৈশ্বিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ রখেছে।
টিএম