রাজনীতিতে আসছেন সৌরভ গাঙ্গুলি?
শেষ পর্যন্ত কি রাজনীতিতে আসছেন সৌরভ গাঙ্গুলি?— ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার, সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নৈশভোজের পর থেকে সৌরভকে ঘিরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।
এই গুঞ্জনকে আরও উস্কে দিয়েছে তার স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলির মন্তব্য। রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডোনা বলেছেন, ‘সৌরভ রাজনীতিতে আসবে কি না, জানি না; তবে এলে ভাল কাজই করবে।’
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেধা ও পারঙ্গমতা সম্পর্কে অবশ্য বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ডোনা। গত বছর বিধাসভা ভোটের আগে সৌরভ বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না— এই গুঞ্জন যখন তুঙ্গে, সে সময় ডোনা গাঙ্গুলি বলেছিলেন, ‘সৌরভ কী করবে, জানি না। তবে ও যেথানেই যাক, একেবারে টপে উঠবে!’
শেষ পর্যন্ত সৌরভ সে বার রাজনীতির ডাকে সাড়া দেননি। তাই তখনকার মতো সেই গুঞ্জনও চাপা পড়ে গিয়েছিল। তবে এ বার রাজ্য সফরে এসে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের চেয়াম্যানের বাড়িতে যাওয়ায় গুঞ্জন আবার ফিরে এসেছে।
শুক্রবার রাতে কলকাতার বেহালায় সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। টেবিলে শাহের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
তার পরের দিন দুপুরেই একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র, তৃণমূল কংগ্রেসের জেষ্ঠ্য নেতা ফিরহাদ হাকিমের পাশে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রশংসায় মুখ খোলেন সৌরভ। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কাছের মানুষ’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, উভয় পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, নৈশভোজের এই আয়োজন ছিল তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সৌজন্যের কারণেই। প্রসঙ্গত, অমিত শাহর ছেলে জয় শাহ এখন ভারতের জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব এবং সভাপতি সৌরভ।
তাতে অবশ্য রাজনৈতিক গুঞ্জন থেমে থাকেনি; বরং, শনিবার সৌরভ-পত্নী ডোনার মন্তব্য তাতে আরও ইন্ধন দিয়েছে। ডোনা আরও বলেছেন, ‘জল্পনা করাই মানুষের কাজ। জল্পনার মধ্যে কোনটা সত্যি হয়, দেখতে হবে।’ শাহের সঙ্গে অতিথি হিসেবে সুকান্ত-শুভেন্দুদের উপস্থিতিতে তাদের যে কোনও ভূমিকা ছিল না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন ডোনা।
ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন এই বাঙালি তারকার বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নৈশভোজের বিষয়টিকে প্রকাশ্যে অবশ্য বিশেষ আমল দিতে চাননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাহের এই কর্মসূচি জানার পরে হালকা সুরেই মমতা বলেছিলেন, ‘ভালই তো! সৌরভকে বলব, ওঁকে মিষ্টি দই আর রসগোল্লা খাওয়াতে।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য সৌরভের নৈশভোজে আপত্তির কিছু দেখছেন না মন্ত্রী ফিরহাদও। তিনি বলেন, ‘অতিথি এলে তো আপ্যায়ন করতেই হবে। আমার বাড়িতে কেউ গেলেও আমি করব। দিদিই তো বলেছিলেন মিষ্টি খাওয়াতে।’
শনিবার একটি বেসরকারি হাসপাতালের অনুষ্ঠানে ফিরহাদের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক সৌরভ। সেখানেই সৌরভ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার খুব কাছের মানুষ।’ ফিরহাদেরও প্রশংসা করেন তিনি।
তবে দলনেত্রী ‘মিষ্টিমুখের’ কথা বললেও বিষয়টিতে নজর রয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের। দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় এ দিন বলেন, ‘বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে যাঁরা বিজেপির সুরভি দেখেছিলেন, তাঁদের বলি, সুরভি তখনও ছিল না, এখনও নেই। বাংলায় বিজেপির সুরভি অলীক।’
আরও এক পা এগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌরভের সমালোচনা করে তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী লিখেছেন, ‘আজকে যখন সে এক চরম বাঙালি বিদ্বেষী, বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিরোধী, বাংলা ভাগের চক্রান্তকারী ব্যাক্তিকে আদর, আপ্যায়ন করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ভূরিভোজ করায়— সৌরভকে নয়, যারা তাকে বাঙালির আইকন বলে ধেই ধেই নাচে, তাদের দেখে করুণা হয়!’
এমতাবস্থায় এই সংক্রান্ত প্রশ্নে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘কেউ বাড়িতে এলে আপ্যায়ন করা স্বাভাবিক সৌজন্য। বহু বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে সৌরভ খেলা এবং তাঁর জীবনে যে ভাবে নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটা সকলেরই ভাল লাগার কথা। গর্বের ব্যাপার।’
‘কিন্তু অমিত শাহ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কাণ্ড-কারখানা, তাঁদের চাপের তলায় পড়ে অনেক সফল মানুষও বিপদে পড়েন, চার দিক থেকে অনেকেই বুঝতে পারেন। সৌরভও কি কম বুঝতে পারছেন? তাঁর উপরে ভরসা রাখুন না!’
সূত্র: আনন্দবাজার
এসএমডব্লিউ