আড়াই কোটি টন গম-ভুট্টা আটকে আছে ইউক্রেনে: জাতিসংঘ
যুদ্ধাবস্থা ও তার ফলে সৃষ্ট অবকাঠামোগত বিপর্যয় এবং মারিউপোলসহ একাধিক বন্দরে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ইউক্রেনের গুদামগুলোতে আটকে আছে প্রায় আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা।
জাতিসংঘভিত্তিক বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) উপপরিচালক জোসেফ স্মিদুবের শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় আয়োজিত এই অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এফএওর উপপরিচালক বলেন, ‘এটা বেশ উদ্ভট একটি পরিস্থিতে যে, বিশ্ববাজারে যেখানে প্রতিদিন খাদ্যশস্যের মূল্য বাড়ছে, সেখানে কেবল অবকাঠামোগত বিপর্যয় ও বন্দরে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকার জন্য এই মুহূর্তে ইউক্রেনে আটকে আছে প্রায় আড়াই কোটি টন গম এবং ভুট্টা।’
ইউক্রেনে পরবর্তী ফসল কাটার মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে আগামী জুলাই- আগস্ট মাসে। যদি তার আগে এসব খাদ্যশস্য গুদামমুক্ত না করা যায়, সেক্ষেত্রে দেশটির কৃষকরা নতুন ফসল নিয়ে ব্যাপক বিপাকে পড়বেন বলে জানান জোসেফ স্মিদুবের।
এ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব ইউক্রেনের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় সেভাবে পড়েনি। তবে সমস্যা হলো— দেশটির অধিকাংশ গুদাম গত মৌসুমের খাদ্যশস্যে ভর্তি হয়ে আছে। এসব যদি বাজারে না ছাড়া হয়, সে ক্ষেত্রে মাস দু’য়েকের নতুন যে ফসল উঠবে, সেসব কোথায় রাখবেন কৃষকরা? রাতারাতি নতুন গুদাম তৈরি তো সম্ভব নয়।’
খাদ্যশস্য রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। খাদ্যশস্যের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিল ডাটার তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভুট্টা রপ্তানিকারক দেশ; আর গম রপ্তানির হিসেবে বিশ্বে ইউক্রেনের অবস্থান ষষ্ঠ।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ ঘোষণা দেওয়ার দু’দিন আগে, ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
শুক্রবার ৭১ তম দিনে পৌঁছেছে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইতোমধ্যে খেরসন, মারিউপোলসহ অন্যান্য বন্দরশহরগুলো দখল করেছে রুশ সেনারা। অবরুদ্ধ বন্দরগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি জাহাজের গতিপথে মাইনও পেতে রাখা হয়েছে।
এদিকে, রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর বন্দরগুলো বন্ধ থাকায় গত প্রায় দু’মাস ধরে বিকল্প পথে খাদ্যশস্য রপ্তানি করছে ইউক্রেন। এক্ষেত্রে দেশটির পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী রেলগাড়ি ও দানুবে নদীর ছোট একটি বন্দর ব্যবহার করে খাদ্যশস্য রপ্তানির কাজ চলছে।
তবে বিকল্প এসব পথে খাদ্যশস্যের বড় চালান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ শস্য জমে আছে ইউক্রেনের গুদামগুলোতে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ