২৮৭ ব্রিটিশ আইনপ্রণেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার
যুক্তরাজ্য ও বহির্বিশ্বে লাগাতারভাবে রাশিয়ার নেতিবাচক ভাবমূর্তি হাজির করা ও রাশিয়া বিষয়ক ভীতি ছড়ানোর অভিযোগে ২৮৭ জন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় দেশটির সরকারে আসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টি— উভয় দলের এমপিরা রয়েছেন। এমনকি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়লি এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের চিফ অব স্টাফ স্টিভ বার্কলেও রয়েছেন এ তালিকায়।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গত ১১ মার্চ রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার ৩৮৬ জন আইনপ্রণেতাকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল হাউস অব কমন্স। মঙ্গলবারের নিষেধাজ্ঞার আদেশ তারই জবাব বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্যের ভেতরে ও বাইরে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক রুশোফোবিয়া (রাশিয়া বিষয়ক ভীতি) ছড়ানোতে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তাদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা অন্যতম; এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রেও তারা প্রথম সারিতে ছিলেন।’
‘নিজের দেশের জনগণের মধ্যে তারা যেমন রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, তেমনি বহির্বিশ্বেও রাশিয়াকে একটি দানব হিসেবে হাজির করে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। আমরা সহযোগিতার আন্তরিক হাত বাড়ালেও বার বার তা উপেক্ষা করেছেন এইসব রাজনীতিক।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ সেনাবাহিনীকে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে সামিরক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দু’দিন আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
বুধবার ৬২ তম দিনে পৌঁছেছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ব্রিটেন ইউক্রেনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ইউক্রেনে কয়েক দফা অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তাও পাঠিয়েছে দেশটি।
এতদিন যুক্তরাজ্যকে দৃশ্যত গুরুত্ব না দিলেও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের পর লন্ডনের বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে মস্কো।
মঙ্গলবার ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিয়েপ্পি বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউক্রেনে অভিযানরত রুশ সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও রসদের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করতে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন স্থাপনায় যদি ইউক্রেনীয় সেনারা হামলা করে, সেক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ যৌক্তিক হবে বলে মনে করে ব্রিটেনের সরকার।
তার এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনের সীমান্ত লাগোয়া রাশিয়ার তিনটি প্রদেশে রাতভর সিরিজ বিস্ফোরণ ঘটে।
এ ঘটনার জেরে ইতোমধ্যে লন্ডনকে সতর্কবার্তা দিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে বলেছে, ‘কিয়েভে যারা শলা-পরামর্শ দিচ্ছে, তাদেরকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই— রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ঘড়ির কাঁটার মতো তৎপর। যদি প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে কিয়েভের পরার্শকদেরকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুল নিশানায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে তারা কোনো দ্বিধা করবে না।’
সূত্র: সিএনএন
এসএমডব্লিউ