পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তুতি
‘সংবিধান লঙ্ঘনের’ দায়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। ঈদের পরপরই জোটের শরিকদের সম্মতি নিয়ে জাতীয় পরিষদের স্পিকারের কাছে অভিশংসনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বুধবার দেশটির ক্ষমতাসীন দলের একজন আইনপ্রণেতার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য মহসিন শাহনেওয়াজ রানঝা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে সরকারের সিদ্ধান্তের তথ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকার অন্তত দু’বার সংবিধান লঙ্ঘনের নোটিশ উপস্থাপন করে অভিশংসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে।
ব্যারিস্টার রানঝা বলেছেন, দু’বার অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রেসিডেন্ট আলভিকে জবাবদিহি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। ওই দুই সিদ্ধান্ত হলো—১০ম ন্যাশনাল ফাইন্যান্স কমিশন (এনএফসি) গঠনের নোটিশ জারি। অপরটি সংসদীয় কমিটিকে এড়িয়ে গিয়ে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) দু’জন সদস্য নিয়োগ।
এ দুই বিষয়ে পিএমএল-এনের আইনপ্রণেতা রানঝা বলেন, দেশের কয়েকটি হাই কোর্ট প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে সংবিধানের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করেছেন। আর এর বিরুদ্ধে আদালতে কোনো আপিল দায়ের না হওয়ায় রায় চূড়ান্ত ছিল।
তিনি বলেন, অতীতে লোকজন সংবিধান লঙ্ঘনের পর রেহাই পেতো। কিন্তু এবার আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
দেশটির রাজনীতিক এবং আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্বীকার করেছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বিচারক বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের আদেশ জারি ভুল ছিল। এই বিষয়টিও অভিশংসনের নোটিশে যুক্ত করা যেতে পারে। কারণ দেশের শীর্ষ আদালত সেটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছে।
সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের আওতায় প্রেসিডেন্টকে অপসারণ বা অভিশংসন করা যেতে পারে জানিয়ে রানঝা বলেন, প্রেসিডেন্টকে শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতার কারণ দেখিয়ে অফিস থেকে অপসারণ করা যেতে পারে। অথবা সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগেও অভিশংসিত হতে পারেন তিনি।
হিসেব-নিকেশের খেলা
তবে দেশটির সংসদে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট নেই। জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে ক্ষমতাসীন সরকারের ভোট আছে ১৭৪টি। সিনেটে সেই সংখ্যা ৭০। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ছেড়ে আসা ৩৩ সদস্যকে নিয়ে বর্তমান সরকারের ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৭। ৪৪২ আসনের সংসদে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৯৫ ভোটের দরকার। কিন্তু এই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানোর জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের আরও ১৮ ভোট দরকার।
তবে শেষ মুহূর্তের হিসেব-নিকেশে সরকারি জোটে যদি ভোটের সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, সেটি নিয়েও গুঞ্জন ছড়িয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই দেশটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমান লোভনীয় এই পদের দিকে নজর রাখছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। তবে এ প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন দেশটির জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ পরিস্থিতিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। টানা পাঁচ দিন শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ৭ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেন এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আয়োজনের নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারের সভাপতিত্বে ৯ এপ্রিল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। দিনভর চলে নাটকীয়তা। কয়েক দফায় অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারবেন না জানিয়ে রাতে পদত্যাগ করেন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার। পরে স্পিকারের আসনে বসেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সদস্য আয়াজ সাদিক। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভোটে হেরে যান ইমরান খান।
এসএস