‘আমাদের কাছে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আছে’
ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলের ইস্পাত কারখানা এলাকায় তীব্র সংঘাত চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে; কিন্তু ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য আহত হওয়া, রসদ ও গোলাবারুদের অভাব ও রুশ সেনারা কারখানাটি ঘিরে ফেলায় বিপদের মুখে আছেন কারখানার ভেতরে অবস্থান নেওয়া ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
বুধবার এক ভিডিওবার্তায় ইস্পাত কারখানায় অবস্থান নেওয়া ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মেজর সারহি ভলেনা বলেছেন, বর্তমানে কারখানার ভেতরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপযোগী যে পরিমাণ জনবল, রসদপত্র ও গোলাবারুদ আছে—তাতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা তারা রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন।
কারখানায় যেসব বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, খাদ্য ও পানির অভাবে তারাও ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন মেজর ভলেনা।
ভিডিওবার্তায় এই সেনা কমান্ডার বলেন, ‘রুশ বাহিনী আমাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। গত কয়েকদিনে প্রায় ৫০০ ইউক্রেনীয় সেনা আহত হয়েছে, এবং এই পরিস্থিতিতে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া খুবই কঠিন। চিকিৎসার অভাবে অধিকাংশ সেনার ক্ষতস্থানে ইতোমধ্যে পচন ধরেছে।’
‘এখানকার বেসমেন্টে অনেক বেসামরিক মানুষ অবস্থান করছেন এবং তারাও চরম ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তারা রুশ বাহিনী লাগাতারভাবে এই এলাকায় গুলি ও গোলা বর্ষণ করে যাচ্ছে।’
‘বিশ্বের কাছে হয়তো এটিই আমাদের শেষ বার্তা। চিরজীবনের জন্য এটিই আমাদের শেষ বার্তা হয়ে থাকতে পারে। সম্ভবত আমাদের হাতে কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টা আছে।’
মেজর সারহি ভলেনা ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ৩৬তম মেরিন ব্রিগেডের একজন কমান্ডার। এক সময় এই ব্রিগ্রেডটি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল এবং পরিচিত ছিল ‘আজভ ব্যাটালিয়ন’ নামে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আজভ সাগরের নামে নিজেদের নামকরণ করেছিল এই ব্যাটালিয়ন। কট্টর ডানপন্থি এই গোষ্ঠী বরাবরই সোভিয়েত বিরোধী ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয় ‘আজভ ব্যাটালিয়ন’ এবং এর নতুন নাম হয় ৩৬তম ব্রিগেড।
এদিকে, গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে মারিউপোলে তীব্র হয়ে উঠেছে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষ। সংঘাত থেকে বাঁচতে শহরটির দক্ষিনপূর্ব দিকের ইস্পাত কারখানা আজভস্তাল স্টিল প্ল্যান্টের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ।
এছাড়া প্রায় ৪ বর্গমাইলের এই কারখানাটিকে প্রধান ঘাঁটি হিসেবেও ব্যবহার করছেন ইউক্রেনের সেনারা।
ভিডিওবার্তায় মেজর ভলেনা বলেন, ‘আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশের পক্ষে লড়ে যাব; কিন্তু আমাদের সহায়তা প্রয়োজন এবং বেসমেন্টে অবস্থানরত বেসামরিক মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া দরকার। এজন্য আমরা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানচ্ছি।
আমাদের সাহায্য করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের তৃতীয় একটি দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অভিযান সংগঠিত করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা,” বলেছেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন
এসএমডব্লিউ