অনাহারের ঝুঁকিতে লঙ্কানরা
অর্থনৈতিক সংকটে পঙ্গু হয়ে যাওয়া ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় অনাহার-অর্ধাহারের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি আগামীতে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর তীব্র ঘাটতি এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে বুধবার সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে বেদনাদায়ক মন্দার মধ্যে দেশটিতে ব্যাপক দুর্দশার সৃষ্টি করেছে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতাসহ খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতি। যে কারণে দেশটির সাধারণ জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
ক্ষুব্ধ জনগণ দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসেসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেছে। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে প্রত্যেকদিন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন।
শ্রীলঙ্কার সংসদের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দানা আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ‘সামনে আরও কঠিন সময় আসছে।’ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমস্যার বিষয়ে সংসদে দু’দিনের বিতর্কের প্রথম দিনে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট। কিন্তু আমি মনে করি, এটি সংকটের সূচনা মাত্র।’
‘খাদ্য, গ্যাস এবং বিদ্যুতের ঘাটতি আরও প্রকট হবে। দেশে অত্যন্ত তীব্র খাদ্য ঘাটতি এবং অনাহার দেখা দেবে।’
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস, জল কামান এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। বিক্ষোভ দমাতে গত সপ্তাহে দেশটির সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থা মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে দেশটির সংসদে অধিবেশনের সময় আইনপ্রণেতারা জরুরি অবস্থা জারির আদেশ নিয়ে বিতর্ক আয়োজনে স্পিকারের ওপর চাপপ্রয়োগ করেছিলেন।
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে আইনশৃঙ্খলবাহিনী ইতোমধ্যে ৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। অনেকেই বলছেন, গ্রেফতারকৃতদের পুলিশি জিম্মায় নেওয়ার পর নির্যাতন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির ক্ষমতাসীন জোট থেকে ৪০ জনের বেশি এমপি বেরিয়ে যাওয়ায় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে সরকার। জোট ত্যাগ করা অনেক সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার গভীর রাতে পুরো মন্ত্রিসভা একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশটিতে ঐক্যের সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিরোধীরা তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে রাজাপাকসে নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সংসদে বিরোধীরা অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আনবেন কি-না সে ব্যাপারে এখনও পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
বৈদেশিক মুদ্রার প্রচণ্ড সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানিতে রীতিমতো লড়াই করছে শ্রীলঙ্কা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশটির পর্যটন এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে এই দ্বীপ রাষ্ট্র।
সতর্ক বার্তা আমলে নেয়নি রাজাপাকসে সরকার
শ্রীলঙ্কা ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি ঋণের খেলাপি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রেটিং সংস্থা। ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটি নতুন করে আন্তর্জাতিক ঋণও সংগ্রহ করতে পারছে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা, বছরের পর বছর ধরে পুঞ্জীভূত ঋণ এবং অযৌক্তিক শুল্ক কাটছাঁটের কারণে দেশটিতে সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব উদিথ জয়াসিংহে সতর্ক করে বলেছিলেন, কৃষি রাসায়নিক আমদানি নিষিদ্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর প্রচেষ্টায় দেশটির সরকার রাসায়নিক আমদানি নিষিদ্ধের ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা সার ও কীটনাশক না পেয়ে তাদের আবাদি জমি ফেলে রাখেন।
দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই সময় সচিব উদিথ জয়াসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়। শ্রীলঙ্কা বলছে, সংকট কাটিয়ে উঠতে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া হবে। তবে ঋণ চাওয়ার এই আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। এদিকে, দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে দেশটির নতুন অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন।
সূত্র: এএফপি।
এসএস