পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা, আগুনে ঝলসে প্রাণহানি ১০ জনের
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বীরভূম জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা খুন হওয়ার পর রাজনৈতিক উত্তাপের আগুনে পুড়েছে কয়েকটি বাড়ি। পুড়ে যাওয়া সেসব বাড়ি থেকে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ ও দমকল বাহিনী।
সোমবার রামপুরহাট পৌরসভার বগটুই গ্রামে রাজনৈতিক ভয়াবহ সহিংসতার এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, ওইদিন সন্ধ্যায় বগটুই গ্রামে রামপুরহাট এক নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ খুন হওয়ার কিছুক্ষণ পরই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নিহত ভাদু শেখের বাড়ি বগটুই গ্রামে। সোমবার সন্ধ্যার দিকে গ্রামের স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে তিনি বসেছিলেন। সেসময় একদল দুষ্কৃতিকারী ওই চায়ের দোকানে তাকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বোমার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় ভাদু শেখকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর বগটুই গ্রামে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিসংযোগের ঘটনাও সে সময়ই ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশের বক্তব্য
সাংবাদিকদের নগেন্দ্র ত্রিপাঠী জানান, বগটুই গ্রামে পর পর বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। তার মধ্যে মঙ্গলবার সকালে একটি বাড়ি থেকে সাতজনের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷
তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতেই একটি বাড়ি থেকে তিনজনের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল দমকল বাহিনী। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো থেকে আরো কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ সব মিলিয়ে ১৫ জনের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে৷ তবে পুলিশ বা প্রশাসন এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দেয়নি৷
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুনে আহত ৪ জনকে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন শিশু। বাকিদের মধ্যে ১ জন যুবক এবং ২ জন নারী। তাদের আঘাত গুরুতর হলেও বর্তমানে অবস্থা স্থীতিশীল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল।
তৃণমূলের দাবি
ঘটনার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গণে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ তৃণমূলের নেতা অনুব্রত মন্ডল আনন্দবাজারকে বলেন, ‘তিন চারটি বাড়িতে আগুন লেগেছিল। টিভি ফেটে আগুন লাগে। দমকল, পুলিশ গিয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, তার পর বলব।
তবে ভাদু শেখেরে খুনের সঙ্গে এর যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘গতকালের ঘটনার সঙ্গে এর যোগ থাকতে পারে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। আমি তো ওখানে ছিলাম না। আমি সকালে খবর পেয়েছি। আমি যতদূর খবর পেয়েছি, একটি বাড়িতেই সাত জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।’
অগ্নিসংযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এখনো পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন অনুব্রত।
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা থেকে ঘটনাস্থলে রওনা হন বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ হেলিকপ্টারে বীরভূমে পৌঁছান তিনি৷ বেলার দিকে রামপুরহাট রওনা হন অনুব্রত মন্ডলও৷ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে স্থানীয় থানার ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে৷ বদলি করা হয়েছে বীরভূমের সাব ডিভিশনাল পুলিশ কর্মকর্তাকেও।
সিপিএমের বক্তব্য
ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন তিনি। সিপিএমের প্রতিনিধিদল এলাকায় যাবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে, এ ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চেয়ে বিধানসভায় বিক্ষোভ করেছেন বিরোধী বিধায়কেরা। সব মিলিয়ে রামপুরহাটের ঘটনা কার্যত রাজ্যজুড়েই উত্তাপ ছড়িয়েছে।
সূত্র: ডিডব্লিউ, আনন্দবাজার
এসএমডব্লিউ