রুটি বিতরণের সময় গুলিতে ইউক্রেনের গোস্তোমেল শহরের মেয়র নিহত
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছের উত্তরপশ্চিমের শহর গোস্তোমেল শহরের মেয়রকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে রুশ সৈন্যরা। সোমবার নগর কর্তৃপক্ষ বলেছে, রুশ সৈন্যরা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের শহর গোস্তোমেলের মেয়র ইউরি ইলিচ প্রিলিপকোকে হত্যা করেছে।
গোস্তোমেল শহর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, গোস্তোমেল প্রধান ইউরি ইলিচ প্রিলিপকো ক্ষুধার্তদের রুটি এবং অসুস্থদের মাঝে ওষুধ বিতরণ করার সময় মারা গেছেন।
কখন তাকে হত্যা করা হয়েছে সেবিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, মেয়র ইউরি ইলিচ প্রিলিপকোসহ আরো দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ফেসবুকে পোস্টে বলা হয়েছে, মেয়রকে কেউই দখলদারদের বুলেটের নিচে যেতে বাধ্য করেনি। তিনি জনগণের জন্য, গোস্তোমেলের জীবন দিয়েছেন। তিনি বীরের মতো মারা গেছেন।
রাজধানী কিয়েভের উত্তরপশ্চিমের শহর গোস্তোমেল। শহরটিতে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টোনোভ সামরিক বিমানবন্দর রয়েছে। যুদ্ধের শুরুর দিনগুলো থেকে রাশিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনীয়দের তুমুল লড়াই চলছে এই শহরে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের বিভিন্ন যোগাযোগ স্থাপনা লক্ষ্য করে নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করছে রাশিয়া। ইউক্রেনের নাগরকিরা দেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যাতে নির্ভরযোগ্য সংবাদ এবং তথ্য না পান, সম্ভবত মস্কো সেজন্য ইউক্রেনের যোগাযোগ অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করছে বলে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে কিয়েভের একটি টেলিভিশনের কার্যালয়ে হামলা চালায় রাশিয়ান সৈন্যরা। রোববার খারকিভের একটি টিভি টাওয়ারে একই ধরনের হামলা হয়েছে।
এদিকে, রাজধানী কিয়েভসহ চারটি শহরে মানবিক করিডোরের নামে শরণার্থীদের বেলারুশ অথবা রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রুশ প্রস্তাবকে ‘পুরোপুরি অনৈতিক’ বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটির কয়েকটি শহরের বেসামরিক বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া মানবিক করিডোরগুলো ওই দেশ দু’টিতে গেছে; এমন তথ্য সামনে আসার পর এই মন্তব্য করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনের বাসিন্দাদের তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়েই যাতায়াত করার সুযোগ থাকা উচিত। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অনৈতিক একটি ব্যাপার। মানুষের দুর্দশাকে ব্যবহার করে টেলিভিশনের গল্প তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।’
জেলেনস্কির ওই মুখপাত্রের ভাষায়, ‘তারা ইউক্রেনের নাগরিক, ইউক্রেনের ভেতর দিয়েই তাদের চলাফেরার অধিকার থাকা উচিত।’ রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএ নভোস্তি যে রুটগুলো প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বেসামরিক বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার এসব পথ বেলারুশ অথবা রাশিয়ার দিকে রয়েছে।
বিবিসি বলছে, কিয়েভ থেকে বের হওয়ার যে পথ দেখানো হয়েছে, সেটি গেছে রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশে। খারকিভ থেকে বের হওয়ার একটি পথ রয়েছে আর সেটি রাশিয়ায় চলে গেছে। তবে মারিউপোল এবং সুমি থেকে বের হওয়ার যে পথগুলো দেখানো হয়েছে, সেসব পথ ইউক্রেনের অন্য শহরের পাশাপাশি রাশিয়ার দিকেও গেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, কিয়েভসহ চারটি শহরে হামলা বন্ধ করে মানবিক করিডোর খুলে দেবে রুশ সামরিক বাহিনী। মস্কোর স্থানীয় সময় সোমবার (৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
মূলত শহরগুলোতে আটকে পড়া নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষকে নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আলজাজিরা বলছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ব্যক্তিগত অনুরোধে এবং সেসব শহরের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি।
এসএস