পশু জবাই: মুসলমান ও ইহুদিদের ক্ষোভ বাড়াল ইইউ আদালত
ইসলাম ও ইহুদি ধর্ম অনুসারে পশু জবাইয়ের যে পদ্ধতি তাতে বেলজিয়ামের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, ওই নিষেধাজ্ঞার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস। ইসলাম ও ইহুদি ধর্ম অনুসারে জবাইয়ের সময় পশুর জ্ঞানে থাকার নিয়ম আছে, আর বেলজিয়ামের আইন বলছে পশুকে অচেতন করেই জবাই করতে হবে।
অনেক ধর্মীয় সংগঠন বেলজিয়ামের এই আইনের বিরোধিতা করে আসছিল।
প্রাণী অধিকারের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ আদালত বলেছে যে, প্রাণীদের হত্যার আগে অজ্ঞান করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
আদালত বলেছে যে জ্ঞান থাকা অবস্থায় পশু জবাই করা যাবে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য মতে, বেলজিয়ামে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত এ রায়ের প্রতিবাদ করেছেন এবং বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত ইউরোপের ইহুদিদের জন্য একটি ধাক্কা।
একই সাথে ইউরোপে রাব্বি সম্মেলনের প্রধানও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন যে এটি ইউরোপের ইহুদিদের উপর প্রভাব ফেলবে।
মুসলিম সংগঠনও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে
বেলজিয়ামে আইনটির অনুমোদন এবং তা কার্যকর হওয়ার পর থেকেই অনেক মুসলিম গোষ্ঠী আদালতে বহুবার এটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
রয়টার্সের মতে, ইউরোপীয় আদালতের এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষে এ জাতীয় বিধিনিষেধ আরোপের পথ উন্মুক্ত করেছে।
ইসলাম ও ইহুদি ধর্মে বিধান রয়েছে যে, জবাইয়ের সময় পশুর গলার শিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হবে এবং জবাইয়ের সময় পশুর অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের আইন অনুসারে, যদি সেই প্রাণীর গোশত মুসলমান এবং ইহুদিদের জন্য না হয়, তবে হত্যা করার আগে পশুকে অজ্ঞান করে নিতে হবে।
উত্তর বেলজিয়ামের ফ্লান্ডার্স সরকার ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিসের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
দেশটির প্রাণীকল্যাণ মন্ত্রী বেন ওয়েস্টস এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেছেন, আমরা আজ ইতিহাস লিখছি।
প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করা বেলজিয়ান সংস্থা গ্লোবাল অ্যাকশন বলছে, এটি একটি বিশেষ দিন এবং ২৫ বছরের লড়াইয়ের ফলাফল।
ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিসের এ সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করেছে এ কারণে যে, সেপ্টেম্বরে আদালতের অ্যাডভোকেট জেনারেল 'ফ্লেমিশ আইন' বিলুপ্তিকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, কঠোর প্রাণী কল্যাণ বিধি ততক্ষণই কার্যকর হতে পারে যতক্ষণ তা আদি ধর্মীয় ঐতিহ্য লঙ্ঘন না করে।
আদালত কী বলছে?
ইউরোপীয় আদালত বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্য সব দেশকে প্রাণী কল্যাণ ও ধর্মের স্বাধীনতা, এ দুইয়ের মধ্যে একটা সমন্বয় করতে হবে। ইইউ আইন কোনো দেশে পশুকে অচেনত করে জবাই করার ক্ষেত্রে বাধার কারণ হতে পারে না যতক্ষণ সেখানে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন না হয়।
তবে আদালত এটিও স্বীকার করেছে যে, এ জাতীয় বিধিনিষেধ মুসলমান ও ইহুদিদের অধিকারকে সীমিত করে। এ কারণে ওই দুই ধর্মমতে প্রচলিত উপায়ে পশু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়নি।
আদালত বলেছে যে বেলজিয়ামের আইন 'ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারে হস্তক্ষেপ' করেছে ঠিকই তবে এর উদ্দেশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামনে প্রাণী কল্যাণের বিষয়টি প্রচার করা।
রায়ে আরও বলা হয়েছে যে ফ্লেমিস সংসদ বৈজ্ঞানিক প্রমাণের উপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্তে এসেছে যে পশু জবাইয়ের আগে অজ্ঞান করাটাই তাদের কষ্ট লাঘবের সবচেয়ে ভালো উপায়।
এনএফ