সম্পদের তথ্য লুকাতে পার্লামেন্টে রানির তদবির
নিজের ‘বিব্রতকর’ ব্যক্তিগত সম্পদের তথ্য জনসাধারণের কাছ থেকে আড়াল করতে একটি খসড়া আইন সংশোধনে পার্লামেন্টে তদবির করেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলজাবেথ। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
যুক্তরাজ্যের সরকারি দলিল-দস্তাবেজ ও নথিপত্র বিষয়ক জাতীয় সংরক্ষণাগারে এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিল দ্য গার্ডিয়ান। ওই অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এলিজাবেথ উইন্ডসর বা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নামে বিভিন্ন কোম্পানিতে যে শেয়ারগুলো রয়েছে, সেগুলোর তথ্য যেন জনসমক্ষে না আসে তা নিশ্চিত করতে পার্লামেন্টের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন রানীর তৎকালীন ব্যক্তিগত উপদেষ্টা।
১৯৭৩ সালে নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে আইন হিসেবে পাসের জন্য একটি বিল উত্থাপণের প্রক্রিয়া শুরু করে তৎকালীন ব্রিটেন সরকার। সেই বিলে উল্লেখ ছিল, বৃহৎ ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে যুক্তরাজ্যের যেসব নাগরিকদের শেয়ার রয়েছে, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ সম্পর্কে অনুসন্ধান ও জনসমক্ষে তা প্রকাশ করতে পারবে সরকারি তদন্ত সংস্থা।
এই বিল পার্লামেন্টে ওঠার প্রক্রিয়া চলছে জানার পরই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন রানি এলিজাবেথ; কারণ যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বড় শিল্প কারখানাগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানিতেও শেয়ার রয়েছে রানির নামে, যেগুলোর মূল্য ওই সময়েই ছিল শত কোটি ডলারের ওপরে। এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে রাজপরিবারের জন্য তা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠবে বলে শঙ্কা ছিল তার।
এ কারণে ওই সময়েই নিজের ব্যক্তিগত উপদেষ্টাকে পার্লামেন্টের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পাঠিয়েছিলেন তিনি এবং ওই উপদেষ্টার মাধ্যমে তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, দেশের শাসনতান্ত্রিক প্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের যেন এই আইনের আওতায় না ফেলা হয়।
তার এই তদবিরে কাজ হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের রানী এলিজাবেথ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করেই আইন পাস করেছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। পাস করা ওই আইনে বলা হয়, ২০১১ সাল পর্যন্ত রানির সম্পদের তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না।
ব্রিটেনের জাতীয় সংরক্ষণাগার থেকে উদ্ধার করা এই বিষয়ক তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞ টমাস অ্যাডামস। দ্য গার্ডিয়ানকে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এমন সফল তদ্বিরের দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে খুব বেশি নেই।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএমডব্লিউ