দেশে করোনার চেয়ে ১৩ গুণ বেশি মৃত্যু ধূমপানে
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের তুলনায় ধূমপানজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ।
তিনি জানান, প্রতিবছর গড়ে ১২ লাখ লোক ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ও হৃদরোগ। এসব রোগে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) মুজিব বর্ষ ও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২১ উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, সবাই যখন তামাকমুক্ত দেশ গড়তে চাইছে, তখন একটি শ্রেণি রয়েছে যারা বলেন যে সরকার এ খাত থেকে অনেক বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে। তবে ২০১৭ সালে সরকার তামাক থেকে রাজস্ব পেয়েছে ২২ হাজার ২৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। কিন্তু একই বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পেছনে। শুধু তামাকজনিত চিকিৎসায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে।
তামাকশ্রমিকের ওপর গবেষণার তাগিদ দিয়ে শাহাদৎ হোসেন বলেন, তামাক চাষে জড়িতদের আয়ু অন্যান্য মানুষের চেয়ে অনেক কম। গবেষণা করলে দেখা যাবে, তামাক উৎপাদন ও চাষে যারা জড়িত, তারা অন্য শ্রমিকদের চেয়ে অনেক আগেই মারা যান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. জেনারেল (অব.) ডা. আবদুল মালিক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার।
অনলাইন এ আলোচনা সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিসহ বিভাগীয় কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সংযুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন - প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় সাত হাজারের বেশি ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া নারী ও শিশুসহ অধূমপায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, তামাক সেবনের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস ও ক্রনিক লাং ডিজিজসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে বছরে পৃথিবীতে ৮০ লক্ষাধিক ও বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। এছাড়া সরকার তামাক খাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বলেন, বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও অকালমৃত্যু প্রতিরোধে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তামাক যেহেতু মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে- তাই তামাকজনিত অকালমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণেও সরকার সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এসডিজি অর্জনের বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রোডম্যাপ প্রণয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে অবশ্যই তামাকমুক্ত করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগও সক্রিয় থাকবে। এজন্য মেডিকেল শিক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবার কল্যাণে বিদ্যমান কর্মসূচির সঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়কে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
টিআই/ওএফ