টাকা দিলে করোনা পজিটিভ হয়ে যেত নেগেটিভ
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে রাজধানীর বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টার করোনা পরীক্ষা করে আসছিল। তাদের মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে বিদেশগামী করোনা পজিটিভ যাত্রীদের নেগেটিভ সনদ সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এ কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান আর বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা বাসা থেকে সংগ্রহ করতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ভুয়া করোনা রিপোর্ট সরবরাহকারী চার প্রতিষ্ঠানে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা বন্ধ রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযুক্ত হাসপাতালগুলো হচ্ছে- রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত স্টিমজ হেলথ কেয়ার (বিডি), বিজয় সরণির সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, মেডিনোভার মিরপুর শাখা।
জানা গেছে, সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থের লোভে বিদেশগামী যাত্রীদের ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনুমোদন নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রমাণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্তে উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের কাছে এসব হাসপাতালে করোনার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা ধরনের অভিযোগ আসছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি অনুসন্ধান দলকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাই এবং তারা এসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। এজন্য গতকাল হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়েছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশগামী করোনা পজিটিভ যাত্রীদের নেগেটিভ সনদ দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের নামে বুথে দালাল নিয়োগের মতো অনৈতিক কর্মে যুক্ত হয়েছে এই চার প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিএইচআইএস-২ এর ডাটাবেজ যাচাইয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই চার প্রতিষ্ঠানের এসব অপকর্মের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বৈশ্বিক মহামারিতে তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তাই এই চার প্রতিষ্ঠান ও তাদের আওতাধীন সব বুথের নমুনা সংগ্রহসহ বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি–পিসিআর টেস্ট কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনিয়ম প্রসঙ্গে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের মিরপুর শাখার ব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) টি এম জুলফিকারকে (সাবু) ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে কয়েকটি গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লোকজন এসে দেখে গেছে আমাদের এখানকার কার্যক্রম। পরে চিঠি দিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য বলেছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, এটার জন্য মেডিনোভা জড়িত নয়। আমাদের এখানে কর্মরত একজনের আইডি দিয়ে এমন কাজ করা হয়েছে।
বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় নতুন নির্দেশনা
১. পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের জন্য ল্যাবগুলোর নিজস্ব ভবনের বাইরে স্থাপিত সব ধরনের নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
২. বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা কোনো অবস্থাতেই বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা যাবে না।
৩. বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহের সময় মূল পাসপোর্ট যাচাই করে, পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখপূর্বক নমুনা সংগ্রহ ফরম পূরণ করতে হবে। কোনোভাবেই পাসপোর্টের ফটোকপি গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪. বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ, পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে যাচাই করা হবে। শুধু টেলিফোন/মোবাইল নম্বর প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
৫. সাত দিনের মধ্যে কোনো পজিটিভ রিপোর্ট থাকলে ওই যাত্রীকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৬. কোনো বিদেশগামী যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে, সে কমপক্ষে সাত দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় পরীক্ষা করাবেন। পরবর্তী সময় যদি নেগেটিভ আসে, সেক্ষেত্রে দেশত্যাগ করতে পারবেন।
৭. কোনো আরটি-পিসিআর ল্যাবের ব্যাপারে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে, ল্যাবটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
৮. বিদেশগামী যাত্রীর কোভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় স্থানে প্রথমে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে তিনি গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোথাও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করেছেন কি না। পরীক্ষা করে থাকলে এবং পজিটিভ হলে তাকে সাত দিন পর্যন্ত পুনরায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।
টিআই/এমএইচএস/জেএস