স্বাস্থ্যখাতকে ৪ অধিদপ্তরে ভাগ করার প্রস্তাব এনডিএফের
চিকিৎসা শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরসহ চারটি অধিদপ্তরে ভাগ করে দেশের স্বাস্থ্যখাতের কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে নিয়মিতভাবে প্রতিবছরের জানুয়ারিতে চিকিৎসকদের পদোন্নতিসহ আরও ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) আয়োজিত জাতীয় চিকিৎসক সমাবেশে এসব দাবি উপস্থাপন করেন এনডিএফের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাজেদ আব্দুল খালেক।
সমাবেশে জানানো হয়, দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে এনডিএফ স্বাস্থ্য বিভাগকে চারটি অধিদপ্তরে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব করছে। এগুলো হলো- চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর এবং পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর। এগুলোর মধ্যে চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল ইনস্টিটিউট, হোমিও মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ এবং ম্যাটসগুলো নিয়ে কাজ করবে। অর্থাৎ চিকিৎসা শিক্ষার সব প্রতিষ্ঠান ‘চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তর’ এর অধীনে ন্যস্ত করা।
এছাড়াও জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন ন্যস্ত করা হবে সব বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতাল, ১০০ শয্যা পর্যন্ত সব হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ মাঠ পর্যায়ের সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অধীনে কার্যক্রম পরিচালিত হবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট, ট্রমা হাসপাতাল এবং ১০০ শয্যার বেশি সব হাসপাতাল (সদর হাসপাতাল ব্যতীত)। এমনকি পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে ন্যস্ত থাকবে পরিবার কল্যাণ বিভাগের সব কার্যক্রম।
এনডিএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনারসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার সংরক্ষণ করেই দেশের স্বাস্থ্য সেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল ডক্টর ফোরাম দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা এগিয়ে আসতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও সমাবেশে জানানো হয়।
জাতীয় চিকিৎসক সমাবেশে উপস্থাপিত অন্যান্য দাবিগুলো হলো-
১. স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য সংস্কার কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
২. ছাত্র জনতার-২৪ বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের যথাযথ মর্যাদা সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে।
৩. ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম স্বাস্থ্যের সব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দক্ষতা ও নৈতিকতার সহিত জনবান্ধব বৈষম্যহীন সহজলভ্য ন্যায়নিষ্ঠ ও আধুনিক স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা পরিচালনায় সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
৪. এই সম্মেলন স্বাস্থ্য বিভাগকে চারটি অধিদপ্তরে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব করছে।
৫. এই সম্মেলন ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বঞ্চিত চিকিৎসকদের ভূতাপেক্ষ বা সুপারনিউমারি পদোন্নতি এবং ভবিষ্যতে নিয়মিত প্রতিবছরের জানুয়ারিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে।
৬. বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে বেড ও পরীক্ষা-নীরিক্ষার ফি যৌক্তিক পর্যায়ে এনে জনগণের সহজলভ্য সেবার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে। ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম এর মূল্য জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য ও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
৭. চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল ও নার্সিং স্টুডেন্টসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সব জনবলের প্রতিবছর বাধ্যতামূলক নৈতিক ও ধর্মীয় মোটিভেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে।
৮. কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে স্পেশালাইজড হাসপাতাল পর্যন্ত কার্যকর বহুমুখী (ঊর্ধ্বমুখী পার্শ্বমুখী ও নিম্নমুখী) রেফারেল ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানাচ্ছে।
৯. চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ কর্মস্থল ও পূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারী নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তার জন্য ‘স্বাস্থ্য পুলিশিং ব্যবস্থা’ ও
‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ অবিলম্বে জারি করার দাবি জানাচ্ছে।
১০. রেসিডেন্সি ও এফসিপিএস ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা নবম গ্রেড বিসিএস কর্মকর্তাদের সমপরিমাণ করার দাবি জানাচ্ছে।
১১. বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্ত করা যাবে না, তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছে।
১২. বিএমডিসিকে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে পূরণকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ করে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত স্থায়ী কার্যালয় ও অর্গানোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানাচ্ছে।
১৩. বেসরকারি চিকিৎসকদের বেতন ও ভাতা যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করা, স্পেশাল বিসিএস'র মাধ্যমে সরকারি পদগুলোতে চিকিৎসকদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশনে প্রত্যেকটি সাবজেক্টে পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছে।
১৪. গ্রেট ওমান ও গ্রেড টু সহ সবক্ষেত্রে পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
টিআই/জেডএস