ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে ঢাকার ৫৬টি ওয়ার্ড
মৌসুম পরিবর্তনের পরও দেশে কমছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ৫৬টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘মনসুন এডিস সার্ভে-২০২৪’ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ডেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো– ৩৮, ৯, ৩০, ৭, ৮, ১৮, ২৫, ২৮, ৩৬, ৩৭, ১ এবং ১৯ নং ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো– ৪৭, ৫৩, ৬১, ৫০, ২, ১৬, ২৬, ৩৬ নং ওয়ার্ড। এর বাইরে বাকি ওয়ার্ডগুলোর বিষয়ে স্পষ্ট করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড, এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ৮, ১৮, ২৫, ২৮, ৩৬, এবং ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ১ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ৭০ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড, যেখানে ব্রুটো ইনডেক্স ৬৬ দশমকি ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ দশমকি ৬৭ শতাংশ এবং ১৬, ২৬, এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৩ দশমমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
জরিপের ফলাফলে আরও দেখা গেছে, দুই সিটিতে জরিপ করা ৩১৩৪টি বাড়ির মধ্যে ৫৪৬টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। তার মধ্যে বহুতল ভবন ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ, স্বতন্ত্র বাড়ি ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবন ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়ি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ও খালি জায়গা ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ ও হাউস ইনডেক্স ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া দক্ষিণ সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও হাউস ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রতিবছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মৌসুম পূর্ব, মৌসুম, মৌসুম পরবর্তী তিনটি জরিপ পরিচালনা করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ববিদদের ২১টি টিমের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের সর্বমোট ৩ হাজার ১৩৪টি বাড়িতে ১০দিন ব্যাপী এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
টিআই/এসএম