রড-লাঠি নিয়ে হামলা, ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দাবি ড্যাবের
ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক আন্দোলনের ওপর বহিরাগতদের দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনাকে পারস্পরিক ‘ভুল বুঝাবুঝি’ বলে দাবি করেছেন ড্যাবের নেতারা।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান নেন ড্যাবপন্থি চিকিৎসকরা। দুপুরের দিকে অধিদপ্তরে নতুন পরিচালক যোগদান করতে যেতে চাইলে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি অবস্থানরত চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাবের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। আমরা কর্মসূচি পালন করতে এসে দেখি আরেক দল চিকিৎসক এখানে বসা। তখন তাদের সঙ্গে আমাদের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশে বহিরাগত কেউ আসেনি। এখানে যারা আছে প্রত্যেকেই চিকিৎসক, নার্স এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। বরং আমাদের বিপরীতে যারা এখানে আন্দোলন করতে এসেছে, তারাই বহিরাগতদের নিয়ে এসেছে। তারপরও আমরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ঝামেলায় যাইনি।
ড্যাবের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার সভাপতি ডা. ফারুক হোসেন বলেন, অধিদপ্তরে আজ কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বহিরাগতদের আনা তো দূরের কথা, উল্টো আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির জায়গা ওনারা দখল করেছেন। এমনকি আমাদের টানানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তারপরও আমরা কিছু বলিনি। বরং মহাপরিচালক আমাদেরকে কর্মসূচি স্থগিত করার কথা বলেছেন, আমরা করেছি। কিন্তু তারা (এনডিএফ) এখনও অধিদপ্তরে রয়েছে।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই স্বচ্ছ ব্যক্তিদের অধিদপ্তরে প্রশাসনে বসানো হোক। অতীতে স্বৈরাচার সরকারের তোষামোদি করেছে, নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে এমন ব্যক্তিকে বসতে দেওয়া হবে না। সরকার দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবে বলে আমরা আশা রাখছি।
এদিকে, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি, অন্যথায় সাংগঠনিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার ফোকাল পারসন ডা. আব্দুল কাদির নোমান। তিনি বলেন, আমরা ড্যাবের সঙ্গে কোনো ধরনের ক্ল্যাশে যাব, এমনটা কখনো কল্পনাও করিনি। কিন্তু আজ ড্যাব যা করেছে, খুবই ন্যক্কারজনক হয়েছে। আমাদের ওপর কেন হামলা হলো? আমরা বিশ্বাস করি হামলাকারীরা কোনো চিকিৎসক নন। ড্যাবের একটা অংশ বহিরাগতদের ভাড়া করে এনে হামলা করেছে।
ডা. আব্দুল কাদির বলেন, আমাদের কাছে হামলার ভিডিও ফুটেজ আছে। রড-লাঠিসোঁটাসহ আমাদের চিকিৎসকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এর সিসিটিভি ফুটেজ অধিদপ্তরেও আছে। অধিদপ্তরের প্রশাসকদের হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।
তিনি আরও বলেন, দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য দূর করতে যে আন্দোলন করেছেন, স্বৈরাচার দূর করেছেন, সেটি আজ নিজেদের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়াচ্ছি, স্বৈরাচারের দোসররা হাসছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তারা কখনোই কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। সরকারি চাকরি করলে অনেক সময় বাধ্য হয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতে হয়।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে বর্তমান নতুন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে পরিচালক (প্রশাসন) পদে নিয়োগ পান ডা. এবিএম আবু হানিফ। আজ সকালে যোগদান করার জন্য অধিদপ্তরের আসেন তিনিসহ অন্যরা।
এসময় অধিদপ্তরে অবস্থান নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সচল রাখতে বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজের পথ সুগম করার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকরা। এরপরই নতুন পরিচালককে যোগদানে বাধার পাশাপাশি রড, লাঠিসোঁটা হাতে ড্যাবের চিকিৎসকরা বহিরাগতদের নিয়ে অধিদপ্তরে অবস্থান করেন এবং চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেন।
বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা পরিচালককে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দেন। ডা. আবু হানিফ রোববার (২০ অক্টোবর) যোগদান করতে এলে ড্যাবের চিকিৎসকরা বাধা দেন। পরে তিনি আজ আবার যোগদান করার জন্য অধিদপ্তরে আসেন। এসময় আবারও তাকে যোগদানে বাধা দেয় ড্যাব।
টিআই/এসএসএইচ