দুধ সহ্য হয় না শিশুর, তাহলে উপায় কী?
শিশুদের মূল খাদ্য দুধ। তবে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে দুধ বন্ধ। তাহলে কী উপায়ে শিশুর পুষ্টি বজায় থাকবে? এই সমস্যার প্রতিকার কীভাবে সম্ভব?
পুষ্টিকর খাদ্যতালিকায় সবার ওপরের সারিতে দুধকে রাখা হয়। বিশেষত শিশুখাদ্যে দুধের ভূমিকা অপরিসীম। এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন-সহ প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শরীরের জন্য জরুরি। কিন্তু অনেকের কাছেই এই উপকারী পানীয়টি অস্বস্তির কারণ। কেউ কেউ আবার দুধ থেকে তৈরি খাবার খেতে পারেন কিন্তু দুধ খেতে গেলেই তখন নানা সমস্যা দেখা দেয়। শুরু হয় বমিভাব, পেটে ব্যথা প্রভৃতি অসুবিধা। আসলে এই ধরনের সমস্যা ‘ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স’ থেকে দেখা দেয়।
কী হয় এতে?
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে ল্যাকটেজ নামক এনজাইম বা উৎসেচকের অভাবে দুধে থাকা ল্যাকটোজ নামক সুগার হজম হতে চায় না। যেহেতু ল্যাকটেজ এনজাইম শরীরে তৈরি না হওয়ায় দুধের সুগার অপাচ্য থেকে যায়, তাই দুধ খাওয়ার পর নানা অস্বস্তির লক্ষণ শরীরে দেখা দেয়।
এই সমস্যা রয়েছে, বুঝবেন কী করে?
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের লক্ষণগুলো আমাদের পাচনতন্ত্র অর্থাৎ ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। সাধারণত পেট ফাঁপা, তলপেটে ব্যথা, গ্যাস অম্বল, পাতলা পায়খানা এবং বমি ভাবের মতো লক্ষণ প্রথম দিকে দেখা দেয়। আমাদের সবার জানা যে জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশু শুধুমাত্র দুধ খায়। এই বয়সের শিশুর দুধ খাওয়ানোর পর কোনো অভিভাবক যদি উপরিউক্ত লক্ষণগুলো আঁচ করেন তবে অতি শিগগিরই তাদের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শুধু দুধ না দুগ্ধজাত খাবারেও সমস্যা হয়?
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের লক্ষণ বা প্রতিক্রিয়া সব রোগীর সমান হয় না। যাদের শরীরে ল্যাকটেজ এনজাইমের ঘাটতি অর্থাৎ এনজাইম তৈরি হলেও পরিমাণে কম থাকে সে সব রোগী দুধ খেয়ে হজম না করতে পারলেও দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই, ছানা ইত্যাদি অল্প খেয়ে হজম করতে পারেন। তখন ডাক্তাররা বুঝতে পারেন যে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স কম মাত্রায় আছে।
বড় বয়সে কি উপশম মেলে?
ছোট বয়সের এই অসুখ বড় বয়স পর্যন্ত থাকবে কি না তা নির্ভর করবে শিশুর কী ধরনের বা কতটা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তার ওপর। ল্যাকটোজ ইন্টাররেন্স নানা ধরনের হয়। যেমন, কনজিনেটাল ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স অর্থাৎ জন্মগত ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এক্ষেত্রে শিশু শরীরে ল্যাকটেজ এনজাইমটি উৎপন্ন হতে পারে না। ফলে ল্যাকটোজ একেবারেই হজম হয় না। যা একটি নবজাতক শিশুর পক্ষে মারাত্মক হতে পারে। ছোট থেকেই নবজাতকরা দুধ একেবারেই খেতে না পারলে শরীরে অর্গানিক অ্যাসিডগুলো জমা হতে থাকে। এক্ষেত্রে জেনেটিক টেস্ট করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন, অন্যথায় শিশুর প্রাণহানির ভয় থাকে।
ডেভলপমেন্টাল ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হল, যদি শিশু নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগেই জন্মায় তাহলে তার ছোট অন্ত্র থেকে ল্যাকটেজ নিঃসৃত হতে শুরু হয় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের বৃদ্ধি হতে থাকলে ল্যাকটেজ নিঃসরণ হতে শুরু করে এবং পরিণত বয়সে এসে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে হজম করতে পারে।
সেকেন্ডারি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হলো, শিশুর কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ খেলে তখন শিশুর ল্যাকটেজ এনজাইম অন্ত্র থেকে কম ক্ষরিত হয় এবং তা বেরিয়ে যেতে থাকে। আবার শিশুদের ডায়েরিয়া হলেও ল্যাকটেজের ঘাটতি হয় এবং ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
উপযুক্ত চিকিৎসা কী রয়েছে?
সাধারণভাবে মল পরীক্ষা সব রোগীদের করা হয়। যদি মলে রিডিইসিং সাবস্টেন্স পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে এই সমস্যা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের জন্য হচ্ছে। সঙ্গে জেনেটিক টেস্টও করা হয়। জন্মগত কারণে এই সমস্যা যাদের তাদের চিকিৎসা জন্য জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান থেকে বিরত রাখতে বলা হয়। তার পরিবর্তে ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ বাজারে পাওয়া যায়, সেটি খাওয়ানো যেতে পারে। একটু বড় বাচ্চাদের দুধের পরিবর্তে দুগ্ধজাত খাবার বা চাল আটা দিয়ে তৈরি খাবার দেওয়া হয়।
কেএ