দক্ষিণ এশিয়ায় বায়োব্যাংকের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ
দক্ষিণ এশিয়ায় কোনও বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে সেজন্য একমাত্র উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য গবেষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত। এমনকি বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের সুব্যবস্থাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের ৭৮ তম সাধারণ অধিবেশনের বৈজ্ঞানিক সামিটে বাংলাদেশ থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে বিএসএমএমইউ উপাচার্য এ দাবি জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনি 'হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ : অপরচুটিনিস ফর বিএসএমএমইউ টু লিড ট্রান্সন্যাশাল রিসার্চ ইন দ্যা রিজন' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
উপাচার্য বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলে সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই হওয়া উচিত। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিসিএসআইআর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কীট উদ্ভাবন করেছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যার সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে। তাই, এই বৈজ্ঞানিক সামিটে অংশ নেওয়া চিকিৎসক গবেষকরা এ প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ নানা বর্ণ-গোত্রের ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। আগে বাংলাদেশে নানান ধরনের রোগের প্রার্দুভাব ঘটেছে। যা দেশের চিকিৎসকরা সহজেই নির্মূল করতে সমর্থ হয়েছে। এখানে পোলিও রোগ, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর, রাত কানা রোগ ছিল। এসব রোগ নির্মূল করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই সেন্টারের মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুলসহ নানা রোগের টিকাদানের ফলে বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা গেছে। ফসল উঠানোর সময় চাষীদের চশমা ব্যবহারে উৎসাহ ও চশমা প্রদান করার ফলে চোখের কর্নিয়া আলসার রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী কাঠামো রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীণ মানুষ খুব সহজেই চিকিৎসকের কাছে আসতে পারেন। কারণ, বাংলাদেশে জাতীয়, ডিভিশনাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরেও সারাবিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক যা দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ মেড ফরমিনসহ ৩২ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
উপাচার্য আরও বলেন, দেশে অনেক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। যেখান থেকে সহজেই গবেষণার জন্য ডাটা সংগ্রহ করা যাবে। এ সকল স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য গবেষণার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তো রয়েছে। সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আমাদের এখানে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা গেলে পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষও উপকৃত হবে। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিদেশি চিকিৎসক উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হয়েছেন। এই বায়োব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই করা উচিত বলে মনে করি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা বাংলাদেশের গবেষকরা চিকিৎসা গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বায়োব্যাংকের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ভৌগোলিক কাঠামোতে বায়োব্যাংকটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার পক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরেন তারা। কারণ, বাংলাদেশে একটি জনবহুল দেশ। এ দেশে নানান জাতির জনগোষ্ঠী বাস করছে। বাংলাদেশে নানান ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। সরকার অনেক রোগ নির্মূল করতে সমর্থ হয়েছে।
তারা বলেন, ভৌগোলিক কাঠামোগত কারণে বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা সহজতর ও ফলপ্রসূ হবে। এখানে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা গেলে প্রচুর ডাটা খুব সহজে হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর একটি মজবুত ভিত্তি রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ এ বৈজ্ঞানিক সামিটে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধ্যাপক ডা. সজলকৃষ্ণ ব্যানার্জী 'বায়োব্যাংক : ইন্টিগ্রাটিং ক্লিনিক্যাল রিসার্চ', বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানু ' কারেন্ট রিসার্চ ইনফ্রাস্ট্রাকচার এট বিএসএমএমইউ, হাউ এ বায়োব্যাংক ক্যান ইম্প্রুভ কারেন্ট প্র্যাকটিস' এবং ফার্মাকোলোজির অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান 'ইথিকস এন্ড লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অব বাংলাদেশ/সাউদ এশিয়া ল' ফর বায়োব্যাংকিং' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এসময় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের বৈজ্ঞানিক সামিটের চেয়ারম্যান ডেকল্যান কিরানী, নেপালের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইলেশ প্রধান, ইন্দোনেশিয়ার ইপিডোমোলোজির গবেষক রাহমাহ আউলিয়া যাহরা, দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষক ডা. চো যাই ইউল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শারবিন্দু কান্তি সিনহা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক সমন্বয় ও সঞ্চালনা করেন আইরিশ-বাংলাদেশি ক্যান্সার গবেষক ড. আরমান রহমান।
টিআই/এমজে