লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় ৫৫ শতাংশই দায়ী বন্ধু-সহপাঠী
দেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দিন দিন ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সমাজে শতকরা ৩৯ ভাগ কিশোরী মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এছাড়াও ৩২ ভাগ শারীরিক নির্যাতন, ১৪ ভাগ যথাক্রমে যৌন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর এই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার জন্য নির্যাতনের শিকার শতকরা ৫৫ দশমিক ২০ ভাগই বন্ধু বা সহপাঠীকে দায়ী করেন।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল সিক্স সিজনে এডুকো বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং তার প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে ঢাকা শহর, ময়মনসিংহ ও ঠাকুরগাঁও জেলায় এই গবেষণা পরিচালনা করে এডুকো বাংলাদেশ। গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৫৪ দশমিক ৯ ভাগ উত্তরদাতারা মনে করেন বাল্য বিবাহ হলো সবচেয়ে ভয়াবহ প্রকারের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা। শতকরা ৫৫ দশমিক ২০ ভাগ উত্তরদাতা বন্ধু বা সহপাঠীকে, ৪১ দশমিক ৮০ ভাগ উত্তরদাতা প্রতিবেশীকে এবং ২৯ দশমিক ৭০ ভাগ উত্তরদাতা নিকটতম আত্মীয়কে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার জন্য দায়ী করেন।
এসময় এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা আমাদের কিশোরীদের উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়। এডুকো বাংলাদেশ তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এ সকল কিশোরীদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়নে জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
এসময় তিনি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নিরসনে সরকারের পাশাপাশি সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শিশুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি অনলাইন নির্যাতনও বেড়ে যাচ্ছে অনেকগুণ। তার কারণ হিসেবে অধিক পরিমাণ ডিভাইসের ব্যবহার দায়ী।
এসময় তিনি কিশোরীদের প্রতি জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য নিরসনে প্রথমেই পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়াও জেন্ডার সমতা বিষয়টি সংবিধানে থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়নের জন্য সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বাড়ানো, সচেতনতা বাড়ানো, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে গুরুত্ব প্রদানসহ বাল্যবিবাহ নিরসনে ১০৯৮/১০৯ এ কল করার জন্য গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে এডুকোর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আনিকা বলেন, আমার বিয়ে আমিই প্রতিরোধ করেছি ১০৯৮ এ কল করার মাধ্যমে। আমি এখন ব্যবসা করে আয় করি এবং পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারছি। এখন আমার পরিবারে আমার মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং ভবিষ্যতে আমি আরও ভালো করতে পারব বলে আমার পরিবার বিশ্বাস করেন। আমি চাই আমার মতো সকল মেয়ে বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তি পেয়ে একটি সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ পাক।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সেক্রেটারি নাছিমা আক্তার জলি, জেন্ডার এক্সপার্ট শীপা হাফিজা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল ওয়ার্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে নির্যাতিত কিশোরীরা পারিবারিক বাধ্যবাধকতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা অভিযোগ করেন না, যার ফলে অনেক কিশোরী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করে না।
তারা বলেন, শিশু এবং মেয়ে শিশু উভয়কেই ছোটবেলা থেকেই সুরক্ষা বিষয়ে সচেতন করতে হবে, এমনকি আমাদের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং আমার দ্বারা যেন নির্যাতিত না হয় সেই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে তবে সমাজ এবং রাষ্ট্র সকল জায়গায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি।
এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, গবেষক, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কিশোরী এবং বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিনিধি। উক্ত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এডুকো বাংলাদেশের সকল শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশে কর্যক্রমসমূহ নিয়ে তাঁদের মূল্যবান মতামত ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
টিআই/এমএ