মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক ‘প্রতিরোধী’ হয়ে উঠছে
দেশে মশা নিধনে যেসব কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে, তা অনেকটাই ‘প্রতিরোধী’ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকের মান বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে, এ বিষয়ে গবেষণার দরকার হলে সেটিও করতে হবে।
রোবরাব (২০ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলা ও প্রতিরোধ, আমাদের দায়িত্ব ও করণীয় শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মশা নিধনে কোনো কীটনাশক বেশি কাজ করে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শ নিতে হবে। আমরা শুনেছি, সিঙ্গাপুরে আরেকটা মশা রয়েছে। যেটি ডেঙ্গু মশা খেয়ে ফেলে। গাপ্পাও মাছও মশা নিধনে ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের ডেথ রিভিউ হচ্ছে। আমার এখানে ডেঙ্গুর জিনোম সিকুয়েন্সিং নিয়ে কাজ চলছে । আমরা খুব শিগগিরই তা জানাতে পারবো। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোনো কোনো রোগীর রেনাল ফেইলর, হেপাটো ফেইলর হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।
উপাচার্য বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব শ্রেণি পেশার মানুষকে সংযুক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ছাত্রদের যার যার বাড়িকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব দিতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারকে তার এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য বিভিন্ন এনজিও, রাজনৈতিক সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ ও স্কুলের শিক্ষক, ছাত্রদের নিয়ে কাজ করলে এ সমস্যা থেকে অনেক পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। স্কুল কলেজ, বিভিন্ন এনজিও আছে তারা কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আসবে।
শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমাদের দেশে উন্নয়ন হয়েছে বলেই চারদিকে ভবন তৈরি হচ্ছে। এ ভবন তৈরির সময় অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে। এসব ভবনের পানি জমি থাকলে মশা সৃষ্টি হবে। পানি জমি থাকলে ঠিকাদারদের জরিমানার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। থানাগুলোতে অনেক পুরানো পরিত্যক্ত গাড়ি আছে। সেখানে পানি জমে। সেখান থেকেও মশা হয়। হাসপাতালগুলোতে দেখতে হবে কোন অঞ্চলের রোগী বেশি আসছে। সেই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিকে বলতে হবে আপনার এলাকায় রোগী বেশি। আপনার এলাকায় ডেঙ্গু রোগ বাহক মশা নিধন করতে হবে। এই দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে।
ডেঙ্গুর টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়ে ভাইরোলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট নিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। যখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়, সেটি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এনে দেবেন। প্রতিবছর তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডেঙ্গুও বৃদ্ধি পাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব ডা. আসরাফি আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো আবুল কালাম আজাদ এবং প্রিভেনটি অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স (মেডিক্যাল এডুকেশন) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রাসেল আহমেদ।
টিআই/এসএম