স্ট্রোকের রোগীদের ডেঙ্গু সংক্রমণ বিপজ্জনক
ব্লাডপ্রেসার ও ডায়াবেটিস রোগীরা স্ট্রোকের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কোনো স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, সেটি খুবই বিপজ্জনক। এজন্য চলমান ডেঙ্গু প্রকোপে এসব রোগীদের আলাদা নজরে রাখার পরামর্শ তাদের।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার হাই কেয়ার নিউরো স্পেশালাইজড হাসপাতালের ‘ফ্রি স্ট্রোক ক্লিনিক’ অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হলো স্ট্রোক। চিকিৎসার চেয়ে এটি প্রতিরোধ সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। ব্যক্তি চাইলে ৯০ শতাংশই প্রতিরোধ করতে পারে। এখন শহরাঞ্চলে খেলাধুলার মাঠ কমেছে, খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আক্রান্তদের ২৩ শতাংশ জাঙ্কফুডে অভ্যস্ত। সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্তি।
তিনি বলেন, বিষয়টি এরকম নয় যে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্লাটিলেট কমে যাওয়ামাত্রই রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী হঠাৎ মারা যাবেন। মানুষের রক্তে তিন ধরনের রক্তকণিকার সবচেয়ে ছোটটি প্লাটিলেট। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এটি। তাই এটি কমে গেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং বেড়ে গেলে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে।
এসময় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর বর্ষা আসলেই আমরা ডেঙ্গু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি। কারণ হলো বর্ষায় জমা পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়। তবে শুধু বর্ষার পানিতেই এডিসের জন্ম হয়, বিষয়টা এরকম নয়। যে ভেক্টরগুলোর মাধ্যমে এডিসের জন্ম হয়, সেগুলোর অন্যতম হলো বাসার ছাদবাগান, গ্যারেজের পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টবে জমে থাকা পানি। এই জায়গাগুলোতে যদি আমরা বংশবিস্তার রোধ করতে পারি, তাহলেই ডেঙ্গু থেকে আমরা বেঁচে যেতে পারি।
তিনি বলেন, এবছর সিজনের আগেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগটিরও পরিবর্তন আসছে। পরিবর্তনটি চিকিৎসকদের জন্যও ঝামেলা তৈরি করছে, কারণ ভাইরাসটি তার গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন করেছে। ফলে প্রতিদিনই ৮-১০ জনের মতো মারা যাচ্ছে। একটি মশার কামড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, বিষয়টি ভাবতে গেলে খুবই ভয়াবহ ব্যাপার।
ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুর এখনও কোনো কার্যকরী টিকা আবিষ্কার হয়নি। অথচ কোভিড আসার নয় মাসের মধ্যেই টিকা চলে এসেছিল। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ, যেকারণে টিকা আবিষ্কারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশকেই বাসায়ই চিকিৎসা দেওয়া হয়, কিন্তু হাসপাতালে আসার একটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। কারণ যেকোনো মুহূর্তেই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোভিডের মতো খুব বেশি খরচের লাগে না। মূল চিকিৎসা হলো তরলজাতীয় খাবার। এর বাইরে বমি হলে বমির ওষুধ, তা না হয় স্যালাইন। জ্বরের জন্য শুধু প্যারাসিটামল।
টিআই/এমএ