আঁখির মৃত্যুর জন্য সংযুক্তা সাহাকে দায়ী করল সেন্ট্রাল হসপিটাল
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডা. সংযুক্তা সাহার ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে সেন্ট্রাল হসপিটালে এসে প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার মৃত্যুর বিষয়ে সব দায় ডা. সংযুক্তা সাহার ওপর চাপিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচার মাধ্যম বানিয়ে প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহা মেডিকেল ইথিক্স পরিপন্থি কাজ করেছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তিনি সেদিন রোগী রেখে চলে গিয়েছিলেন, যার ফলে এত বড় একটি ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে সেন্ট্রাল হসপিটালের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এটিএম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একমাত্র সংযুক্তা সাহার কারণেই এই ঘটনাটি ঘটল। সংযুক্তা সাহাই তো এত বেশি রোগী দেখেন। সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কী নেই, বিষয়টি যদি শুরুতেই পরিষ্কার করে দেওয়া হতো তাহলে কিন্তু এ বিষয়টি হতো না। রোগী হয়ত আমাদের হাসপাতালের অন্যান্য সিনিয়র কনসালটেন্টের অধীনে ভর্তি হতেন। অথবা অন্য কোনো হাসপাতালে চলে যেতেন।
তিনি আরও বলেন, সংযুক্তা সাহা ওইদিন হাসপাতালে থাকবেন না সেটি তিনি আমাদেরকেও জানাননি। আমরা যদি জানতাম তিনি কর্মস্থলে নেই, তাহলে তার রোগীদের জন্য আমরা বিকল্প চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখতাম। কিন্তু তিনি হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। সুতরাং এ ঘটনাটি আমরা মনে করি তার জন্যই হয়েছে। এমনকি যারা রোগীদের ইনফরমেশন দিয়েছেন তারা হাসপাতালের স্টাফ নন। তারা সংযুক্তি সাহার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সুতরাং এর দায় সম্পূর্ণ সংযুক্তি সাহার।
সেন্ট্রাল হসপিটালের এই সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর বলেন, নিজেদের প্র্যাকটিস বাড়ানোর লক্ষ্যে যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচারণার হাতিয়ার বানিয়ে রোগী বা তাদের অভিভাবকদের আকর্ষণ করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও মেডিকেল ইথিক্স পরিপন্থি। কিন্তু সংযুক্তা সাহা সেই কাজটি নিয়মিত করেছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর বাকি সব চিকিৎসকদের এ বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যদি কোনো চিকিৎসক এই ধরনের কোনো কার্যকলাপ করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
ডাক্তার দেখাতে এসে রোগীদেরকে হরহামেশাই অন্যান্য জুনিয়র ডাক্তার দেখিয়ে ফিরতে হয়, এমন অসংখ্য অভিযোগ আপনাদের বিরুদ্ধে আছে। এ প্রসঙ্গে নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। যদি আমাদের হাসপাতালে এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, নিশ্চয়ই এর পেছনের কারণগুলোও বের হয়ে আসবে।
আঁখির মৃত্যুর পর আপনারা তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, তাহলে আগে কেন করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে তো আমরা এই ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। আমাদের কাছে যদি অভিযোগ না আসে তাহলে আমরা কীভাবে বলব এরকমটাই হচ্ছে?
হসপিটালের অপারেশন থিয়েটার খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের আইসিইউ আজ (সোমবার) সকাল থেকেই খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ওটিতেও যথেষ্ট ফ্যাসিলিটি আছে। আমাদের পাঁচটা ওটি একদম মডার্ন ইকুইপমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করেছে, আমরা আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে আবার সেটি চালু করতে পারব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চালু করে দিয়ে যাবে।
টিআই/কেএ