প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণে বছরে সহস্রাধিক নারীর মৃত্যু
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রজনন অঙ্গে সংক্রমণের (পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ) কারণে সহস্রাধিক নারীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
একইসঙ্গে জরায়ুমুখের ক্যান্সারে বাংলাদেশে প্রতিবছর আরও প্রায় পৌনে ৪ হাজার নারীর মৃত্যু হচ্ছে। আর অনিরাপদ মিসক্যারেজ বা অ্যাবরশনের কারণে বছরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন আরও দেড়শো থেকে দুইশো জনের মতো নারী।
আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স ২০২৩: সেক্সচুয়্যাল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ড. আহমেদ এহসানুর রহমান। তিনি বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্যের একটা বিশাল অংশ হলো মাতৃস্বাস্থ্য। মাতৃস্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যার জন্য পৃথিবীব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭১ জন মারা যায়। এই জটিলতায় প্রতিবছর বাংলাদেশে মারা যাচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার জন।
এহসানুর রহমান বলেন, প্রজননস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নারীদের প্রজনন অঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ। এজন্য সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৪৩ হাজারের বেশি নারী মারা যাচ্ছে, আর বাংলাদেশে মারা যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার জন নারী। বর্তমান সময়ের এই উৎকর্ষতার যুগে এসে, অ্যান্টিবায়োটিকের সহজপ্রাপ্যতা এবং আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই অবস্থায় এসে এত সংখ্যক মায়ের জীবন চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখজনক।
গবেষণায় বলা হয়, বর্তমান সময়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য আরেকটি বিশাল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সারভাইক্যাল ক্যান্সার (জরায়ুমুখের ক্যান্সার)। বিশ্বব্যাপী জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ জন নারীর মৃত্যু হয়, আর বাংলাদেশে মারা যাচ্ছে প্রায় পৌনে ৪ হাজার জন। এছাড়াও প্রজনন স্বাস্থ্যের অন্যান্য যেসব কমপ্লিকেশন এবং ডিজঅর্ডারগুলো আছে, সেগুলোতে প্রতি বছর আরও প্রায় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো জন নারীর মৃত্যু হয়।
ড. এহসান আরও জানান, প্রজনন স্বাস্থ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার নাম হলো জ্যানিটাল প্রলাপ্স বা প্রজনন অঙ্গ নিচের দিকে নেমে আসা। এই সমস্যায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার জন্য প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ হাজার এবং বাংলাদেশে প্রায় দেড়শো জনের মতো নারীর মৃত্যু হয়।
গবেষণায় তিনি আরও বলেন, মিসক্যারেজ এবং অ্যাবরশন যদি অনিরাপদ অবস্থায় হয়, তাহলেও নারীদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি বিশ্বব্যাপী এই সমস্যার কারণে প্রায় ২০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়, আর বাংলাদেশে মৃত্যু হয় ১৫০ জন থেকে ২০০ জনের।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আইসিডিডিআর,বির অ্যাডভান্সিং সেক্সচুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস (অ্যাডসার্চ) যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে মানসম্মত গবেষণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে চলেছে। এক্ষেত্রে তরুণ ও নবীন গবেষকদের তারা বিশেষভাবে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দিনব্যাপী গবেষণা ও উদ্ভাবন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে তরুণ গবেষকবৃন্দ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে তাদের গবেষণা ধারণাপত্র' ও ‘উদ্ভাবনী প্রস্তাবনা’ তুলে ধরেন।
জানা গেছে, এর আগে অ্যাডসার্চ গবেষণা প্রস্তাবনা ও উদ্ভাবনী ধারণা আহ্বান করেছিল। সেখান থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে ১০০টি গবেষণা প্রস্তাবনা ও ৫৭টি উদ্ভাবনী ধারণাকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বিশেষজ্ঞদের নম্বরের ভিত্তিতে সেরা ২২টি গবেষণা প্রস্তাবনা ও ২১টি উদ্ভাবনী ধারণা উপস্থাপনের জন্য বাছাই করা হয়। সেখান থেকে দুটি বিভাগে সেরা ৩টিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র ডিরেক্টর ও ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের সিনিয়র সাইন্টিস্ট শামস এল আরেফিন, অ্যাডসার্চের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর কামরুন নাহারসহ আরও অনেকে।
টিআই/এনএফ