শিক্ষার্থী হারানোর শঙ্কায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো
সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেও জিপিএ বিবেচনায় ৩৫ হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। এমন নিয়মের কারণে বাকি শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হারাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থী হারানোর পাশাপাশি দেশ রাজস্ব হারাবে বলেও মনে করে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।
সংগঠনটির সভাপতি এম এ মুবিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খান বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
আবেদনে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির যোগ্যতার ক্ষেত্রে আগের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানানো হয়েছে, একই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এর পরিবর্তে আগের মতো ৩.৫০ জিপিএ বহাল রাখার আবেদনও জানিয়েছে সংগঠনটি। নয়তো যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী আসত তারা অন্য দেশে পড়তে চলে যাবে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় সরকারি নিয়মে উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীর সাংবিধানিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার বহাল রেখে ভর্তির সুযোগ প্রদান এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে হঠাৎ করে এককভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৪ এর পরিবর্তে পূর্বের ন্যায় ৩.৫০ জিপিএ বহাল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন : বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে বিপিএমসিএ তাদের আবেদনে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। আবেদনে বলা হয়েছে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ৪০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সরকার নির্ধারিত নিয়ম প্রতিপালন করে নির্ধারিত পাস মার্ক ৪০ নম্বর পেয়ে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাদের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শূন্য আসনে ভর্তি হতে আইনগত ও মৌলিক অধিকার রয়েছে।
সরকার নির্ধারিত ভর্তির যোগ্য ঘোষিত নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ নিয়ম পরিবর্তন করে ৩৫ হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে একজন উত্তীর্ণ ও সরকার কর্তৃক যোগ্য ঘোষিত প্রার্থীর সাংবিধানিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার বহাল রাখা সরকারের দায়িত্ব। নতুবা এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে এবং আইনি জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার কর্ণধার ও সংশ্লিষ্ট অনেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষাই দেশে প্রথমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়নি। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হবে না এবং অনেকের আর্থিক সচ্ছলতা নেই।
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক গত ১০/১২ বছরের চলমান নিয়ম হঠাৎ পরিবর্তন করলে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন ফাঁকা থাকবে। তাই বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
আরও পড়ুন : মেডিকেলে ভর্তি শুরু ২৭ মার্চ
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেখা যাবে যারা ভর্তির যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেডিকেলে ভর্তি হতে সুযোগ না পায় তাদের মধ্যে অনেকে বিদেশে চলে যাবে। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ ডলার সংকটের সময়ে দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হবে। আবার বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, অনেক দেশের মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন হয়। রাশিয়া, চীন ও আরও অনেক দেশের রোগী ও রোগের প্যাটার্ন আমাদের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির, তাই দেশে এসে ওই সব চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রায় ১০ বছরের চলমান নিয়ম হঠাৎ পরিবর্তন করে জীববিজ্ঞানে এককভাবে জিপিএ-৫ এর মধ্যে জিপিএ-৪ নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এই মুহূর্তে প্রায় ১২ হাজারের মতো বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস পড়ছে। যার ফলে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। ভারত ও নেপালে এমবিবিএস ভর্তির যোগ্যতায় জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৩.০০ পয়েন্ট রয়েছে। এখানে জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৪.০০ করাতে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী আসত তারা অন্য দেশে পড়তে চলে যাবে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের চলমান সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং সেই সঙ্গে দেশ প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস থেকে একটি প্রতিনিধি দল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি জটিলতা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এবং তারাও জীববিজ্ঞানে এককভাবে ৩.৫০ জিপি পূর্বের মতো বহাল রাখার কথা জানিয়েছেন।
এ অবস্থায় ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় সরকারি নিয়মে যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন সাংবিধানিকভাবে তাদের মৌলিক অধিকার বহাল রাখার জন্য এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞানে আগের মতো ৩.৫০ জিপিএ নির্ধারণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানায় বিপিএমসিএ।
টিআই/এসএসএইচ/