ভোক্তা অধিকারের জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন জাহাঙ্গীর কবিরের
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে অর্গানিকো কেয়ার নামক একটি কোম্পানির ‘ঘি’ -এর মান ও প্যাকেজিং সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে ‘আল্টিমেট অর্গানিক লাইফ’ নামক আরেকটি কোম্পানিকে জরিমানার অভিযোগ উঠেছে। জরিমানা করা কোম্পানিটি পরিচালনা করেন আলোচিত চিকিৎসক জাহাঙ্গীর কবির। তবে, অভিযুক্ত ওই ঘি তার কোম্পানির নয় বলে দাবি এ চিকিৎসকের।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব দাবি করেন। তবে, ভোক্তা অধিকার বলছে, জাহাঙ্গীর কবিরের গোডাউনে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন ঘি বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে, ওসব ঘিতে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছিল না। একারণেই তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের দাবি, ‘ঘি নিয়ে যে কমপ্লেইন তারা (ভোক্তা অধিকার) দিয়েছে সেটি আমার কোম্পানির নয়, অর্গানিকো কেয়ারের। এর ফলে মিডিয়াতে আমাকে হেয় হতে হয়েছে। আমি আবারও বলছি, মিডিয়াতে যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে যে আমার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে, আসলে ব্যাপারটি তা নয়। যে পণ্যটি নিয়ে জরিমানা করা হয়েছে, সেটি অর্গানিকো কেয়ারের। জাস্ট আমাদের গোডাউনে রেখে এটি বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকারের অভিযোগ যদি ওই ঘি নিয়েই হয়, তাহলে সেটি অর্গানিকো কেয়ারের। এছাড়া আমি যতটুকু জানি, ভোক্তার অভিযোগ শুধুমাত্র প্যাকেজিং নিয়ে। তারা কিন্তু কোয়ালিটি নিয়ে কোনো অভিযোগ, কোয়ারি বা মন্তব্য করেনি। যে সমস্যা তারা পেয়েছে, সেটি হলো- মোড়কে প্যাকেজিংয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে গাজীপুর, কিন্তু তারা প্যাকেজিং করেছে এখানেই। এটি অবশ্যই আইনগতভাবে সিদ্ধ নয়। এক্ষেত্রে ওই ঘি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকেই জবাবের আওতায় আনা প্রয়োজন। শুধু আমার গোডাউনে রেখে বিক্রি করায় অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে আমার ওপর। জরিমানাও করা হয়েছে আমার প্রতিষ্ঠান আল্টিমেট অর্গানিক লাইফকে।
পণ্যের গুণগত মান প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদের কোম্পানির যে পণ্যগুলো তারা দেখেছে, আমরা ইউএসডিএ সার্টিফাইড অর্গানিক কফি বিনের সার্টিফিকেট তাদের দেখিয়েছি। তারা বলেছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের কোনো প্রোডাক্ট নিয়েই তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে ন্যাচারাল কিছু প্রোডাক্ট আছে, যেগুলোতে বলাই হয়েছে দেশীয় খাঁটি এবং প্রাকৃতিক। সেগুলোর কোথাও অর্গানিক লেখা নেই। অর্থাৎ যে প্রোডাক্টগুলো আমরা বলেছি অর্গানিক, সেগুলোর সার্টিফিকেট আমরা দেখিয়েছি। আর যেগুলো ন্যাচারাল সেগুলোর ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের সার্টিফিকেট আমরা দেখিয়েছি।
অভিযোগ করে বলেন, এই অভিযানে শুধু শুধুই আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। কিছু মিডিয়ায় বলা হয়েছে অবৈধ ও অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির কারণে নাকি আমাকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যেখানে ভোক্তা অধিকার এসেছিল, সেখানে কোনধরনের ওষুধই ছিল না। গোডাউনটি মূলত অর্গানিক ও দেশীয় নানা খাঁটি পণ্যের। মিডিয়া তথ্য যাচাই না করেই এমন সংবাদ পরিবেশন করেছে।
পরবর্তী করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ভোক্তা অধিকার কিছু পরামর্শ দিয়েছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেব। আমরা দ্রুতই সেই ঘি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করবো।
এসব প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডা. জাহাঙ্গীরকে কাগজপত্রসহ আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তরে সকাল ১০টায় ডাকা হয়েছে। তার যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সেটি আমরা শুনবো।
অভিযান আফতাব নগরের ‘হেলথ রেভুলেশন’ নামক চেম্বারে পরিচালনা হয়েছে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তার চেম্বারে যাইনি। আমাদের কাছে আসা বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার আল্টিমেট অর্গানিক লাইফ নামক কোম্পানির গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানস্থলে কোনো ধরনের ওষুধও ছিল না। এমনকি তখন ডা. জাহাঙ্গীর কবিরও ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, আমরা ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের গোডাউনে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন ঘি বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। এমনকি এসব ঘিতে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছিল না। যেকারণে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর কবির অন্য জায়গা থেকে ঘি উৎপাদন করেছেন, কিন্তু লেভেল লাগানো হচ্ছিল ঢাকায় বসে। এসব তথ্য কনটেইনারে লেখা ছিল না।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর আফতাব নগরে অবস্থিত জাহাঙ্গীর কবিরের অর্গানিক ও প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্যের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় নানা অভিযোগে জাহাঙ্গীর কবির পরিচালিত দুটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- আল্টিমেট অর্গানিক লাইফ ও ইন-মোশন ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল।
টিআই/এসএম