মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে শরীরে কী হতে পারে?
বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিষের সমান। মেয়াদ পার হলে এর কোনো কার্যকরী ক্ষমতা থাকে না। উল্টো বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তবে এই ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সবার আগে ওষুধের মেয়াদ শেষ হওয়ার অর্থ কী তা জানা জরুরি। ওষুধের প্যাকেটের গায়ে দুটি তারিখ লেখা থাকে। প্রথমটি হলো উৎপাদনের তারিখ, দ্বিতীয়টি হলো মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ।
মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ বলতে এই বোঝায় না যে ওষুধের কার্যকরী ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে- এই তারিখের পর ওষুধের প্রভাবের গ্যারান্টি প্রস্ততকারক কোম্পানি গ্রহণ করবে না।
বেশিরভাগ ওষুধে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক উপাদানের বিশেষত্ব হলো- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পরিবর্তিত হয়। ওষুধের ক্ষেত্রেও তাই। বাতাস, আর্দ্রতা, তাপ ইত্যাদির কারণে অনেক সময় ওষুধের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যার কারণে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। সেজন্য সব ওষুধ কোম্পানি তাদের পণ্যের একটি নির্দিষ্ট তারিখ লিখে দেয়। যাতে করে যেকোনো আইনি ঝামেলা এড়ানো যায়।
মার্কিন চিকিৎসা সংস্থা এএমএ ২০০১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ২২টি ভিন্ন ওষুধের ৩০০০ ব্যাচ নেওয়া হয়। সেগুলো পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ওষুধের কাজ করার ক্ষমতা তাদের ওপর মুদ্রিত মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের চেয়ে অনেক বেশি। ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এএমএ প্রায় ৮৮ শতাংশ ওষুধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায় ৬৬ মাস বাড়িয়ে দেয়।
যে ওষুধগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এএমএ দ্বারা বাড়ানো হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে- অ্যামক্সিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, মরফিন সালফেট ইত্যাদি। তবে ১৮ শতাংশ ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফেলে দেওয়া হয়।
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা
এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য নেই। তবে জানা গেছে, কোনো ওষুধ যদি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে হয়, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এর ক্ষমতা আরও অনেক দিন থাকবে। কিন্তু সিরাপ, চোখের ড্রপ এবং ইনজেকশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যবহার করা উচিত নয়।
এদিকে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবিত কিছু ওষুধ রয়েছে, যা মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো হচ্ছে- ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ। সেগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নষ্ট হতে শুরু করে।
এছাড়া, হৃদরোগীদের ওষুধও খোলার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত এর কার্যকারিতা হারায়। রক্ত, ভ্যাকসিনের মতো ওষুধগুলো নির্ধারিত সময়ের পর ব্যবহার করা উচিত নয়।
এমএইচএস