১০ জনের ৯ জনই জানেন না তিনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত
বাংলাদেশের শতকরা ৫ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং শতকরা দশমিক ৬ ভাগ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বাহক। এদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশনে নানাবিধ জটিল লিভার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সবমিলিয়ে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে, আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে দেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে তার শরীরে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস রয়েছে।
রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন ও হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয় কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যায় না।
তিনি বলেন, হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ এবং বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের একটি হলো লিভার সিরোসিস। লিভার ক্যান্সার বিশ্বে এবং বাংলাদেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। এই দুই ভাইরাসজনিত লিভার রোগের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষ এবং প্রতি ৩০ সেকেন্ড একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী বলেন, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে সচেতনতা খুবই বড় বিষয়। আমাদের দেশের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করেন। হেপাটাইটিস কী, কীভাবে ছড়ায় বা এর চিকিৎসা কী.. এসব বিষয়ে গ্রামের মানুষের কোনো ধারণা নেই। তাই তাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা গবেষণায় দেখেছি রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হেপাটাইটিস। প্রায় ১৮ শতাংশের মতো এই হার। তাদের নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এসময় তিনি বলেন, হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় সরকার শেখ রাসেল, বারডেম ও শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে কয়েক কোটি টাকা অর্থ দিয়েছে। ভাইরাসটি মা থেকে শিশুকে সংক্রমিত করে। এজন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যদি চিকিৎসা ও প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এসব কাজের জন্য অর্থের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। দেশে যত ব্লাড ব্যাংক আছে, সেখানে বিপুল সংখ্যক রক্ত সঞ্চালন হয়, সেখানে কী পরিমাণে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় সেটি নির্ণয় করতে পারলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লিভার বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল ডা. মো. রবিউল হোসেন বলেন, আমরা জানি মোট ৫ রকমের হেপাটাইটিস ভাইরাস রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো বি এবং সি। বাকিগুলো এতোটা মারাত্মক নয়। চিকিৎসায় সেগুলো ভালো হয়ে যায়।
তিনি বলেন, দেশে মোট ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং সিতে আক্রান্ত। এই ভাইরাস মানুষের স্বাস্থ্য বিশেষ করে লিভারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত। এর আগে একে আমরা জন্ডিস হিসেবেই জানতাম।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে সরকারের সবচেয়ে সফল উদ্যোগ হলো ভ্যাক্সিনেশন। সরকার হেপাটাইটিসের ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এই ভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, হেপাটাইটিস ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতাই প্রধান শর্ত। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়েই ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লিভার ফাউন্ডেশন যে কাজগুলো করছে, সেগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে করে তাতের উদ্যোগ আরও ত্বরান্বিত হবে। সাংবাদিকদেরও এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হবে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, ভাইরাল হেপাটাইটিসের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘হেপাটাইটিস, আর অপেক্ষা নয়’।
টিআই/এমএইচএস