ছানি পুষে রেখে বিপদ বাড়াবেন না
বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। আমাদের চোখের ভেতর যে লেন্সটা রয়েছে, বয়সের সাথে সাথে সেটা অস্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিটাকেই ছানি বলে।
মূলত বয়স ৪০ পার হওয়ার পর এ সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক কী কারণে ছানি হয় সেটা সুর্নিদিষ্ট করে এখনও বলা সম্ভব না। তারপরও যেসব বিষয়কে ছানির জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করা হয় তার মধ্যে একটি হলো অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার।
এছাড়া আঘাতজনিত কারণে লেন্সের অবস্থান পাল্টে গিয়েও ছানির সমস্যা তৈরি হতে পারে; যাকে বলা হয় ট্রমাটিক ক্যাটারাক্ট। অনেক বাচ্চার জন্মগত ছানি থাকে। এছাড়াও কিছু কিছু হরমোনাল রোগের ফলে কয়েকটি ক্ষেত্রে চোখে ছানি পড়তে পারে।
চোখে একবার ছানি পড়লে অপারেশন না করলে তা ভালো হয় না। কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য চশমার সাহায্যে দৃষ্টিশক্তিটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা।
তবে এরইমধ্যে ছানির অপারেশনে বড় পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় ছানির অপারেশনের জন্য অনেকখানি কাটতে হতো। তখন লেন্সটা বের করে সেলাই করে দেওয়া হতো। অপারেশনের পর রোগীকে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত শুয়ে থাকতে হতো আর সারাজীবন ব্যবহার করতে হতো মোটা কাঁচের চশমা।
তারপর চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষে আরেকটু উন্নত হলো চিকিৎসা। এ ধাপে লেন্স বের করে কৃত্রিম একটি লেন্স বসিয়ে দেওয়া শুরু হলো। ফলে মোটা কাঁচের চশমা আর লাগতো না। শুরুর দিকে অবশ্য এ অপারেশনও অনেকখানি কেটে করা হতো, ফলে প্রয়োজন হতো সেলাইয়ের। তারপর আসে স্টিচলেস সার্জারি।
আর ছানির চিকিৎসায় এখন যেটা করা হয় তার নাম ফেকো সার্জারি। এ পদ্ধতিতে কাটাকাটির প্রয়োজন পড়ে না। কর্ণিয়ার মধ্যে একটা, আর চোখের দুপাশে দুটো ফুটো করে, সেখান থেকে মেশিন ঢুকিয়ে, লেন্সের ওপরের অংশটাকে বাদ দেওয়া হয়। তারপর ওই বাদ দেওয়া অংশটাকে মেশিনের সাহায্যেই টুকরো টুকরো করে কেটে বের করে আনা হয়। এরপর মেশিনের সাহায্যেই আবার একটা লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে সুবিধা হল এই যে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার দরকার নেই। অপারেশান করেই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। খুব তাড়াতাড়ি কাজেও যোগ দিতে পারেন।
ছানি ধরা পড়ার পর দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধো শুরু হলে তখনই অস্ত্রোপচার করা উচিত। বেশি দেরি করলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। দেরি করলে ছানি শক্ত হয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে অসুবিধে হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফেকো সার্জারির সাহায্যে ২ মিলিমিটার ছোট্ট ছিদ্র করে অকেজো লেন্স বের করে নতুন লেন্স বসিয়ে দিলে সমস্যা চলে যায়। ৩–৪ দিনের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে সার্জারির পর চোখে কোনো রকম সংক্রমণ যাতে না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা দরকার। ছানি পুষে রেখে বিপদ বাড়াবেন না।
এনএফ