ওপরে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না আমি
আবদুল কাদের মির্জা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র। টানা চারবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, দিয়েছেন জন-আকাঙ্ক্ষার পরিচয়ও। সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় দলের শীর্ষপর্যায়ের কিছু নেতাকে ইঙ্গিত করে ‘কঠিন সত্য’ কথা বলেছেন যা ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে ভাইরাল হওয়া আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় ঢাকা পোস্ট-এর। ‘ভোট কারচুপি’, ‘অপরাজনীতি’সহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘কেউ পছন্দ করুক আর না করুক আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়-অবিচার-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলব। ওপর আল্লাহ ছাড়া আমি কাউকে ভয় পাই না।’ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্ট-এর নিজস্ব প্রতিবেদক নজরুল ইসলাম। নিচে তা হুবহু তুলে ধরা হলো—
আমি ওপর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। অন্যদের ক্ষমতা আছে, আমাকে মেরে ফেলবে...। ওদের কাছে অস্ত্র আছে, আমার কাছে অস্ত্র নেই। আমি অস্ত্রের রাজনীতি করি না। আমাকে মেরে ফেলতে পারে, জেলে দিতে পারে। জেল খাটার অভ্যাস আছে আমার
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচন নিয়ে কঠিন সময় পার করেছেন। বিপুল ভোটে চতুর্থবারের মতো মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন। সেই পথটা কেমন ছিল?
আবদুল কাদের মির্জা : নির্বাচনে জয়লাভের মতো পরিবেশ আমি আগেই সৃষ্টি করেছি। দীর্ঘ ৪৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় এখানে (বসুরহাট) কাটিয়েছি। কেউ বলতে পারবে না আমার কাছে ১০টা টাকা পাবে। আমি চাঁদাবাজি করি নাই, মাস্তানি করি নাই, কোনো অনিয়মের সঙ্গে মিশি নাই। সেজন্য মানুষ আমার প্রতি আস্থা রেখেছে, আমি নির্বাচনে জিতেছি। কিন্তু মানুষ তো আজ ভোটবিমুখ। ভোটের লাইনে মানুষকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভোটের আগে সর্বশেষ যে সমাবেশ করেছি সেখানে বলেছি, ভোটের দিন যদি আমি অনিয়মের (ভোট নিয়ে অনিয়ম) সঙ্গে থাকি আল্লায় যেন আমার মৃত্যু দেয়। কথাটা মানুষের মনে-হৃদয়ে খুব আঘাত করেছে। তারা ভোটকেন্দ্রে গেছে এবং আমাকে ভোট দিয়েছে। এটা আমার কর্মকাণ্ডের ফসল, আমার কর্মীদের ফসল। আমার কর্মীরা যতেষ্ট পরিশ্রম করছে; বিশেষ করে মহিলাকর্মীরা। তাদের কর্মকাণ্ডের ফসল হচ্ছে আমার এ বিজয়।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনে আস্থার কথা বলছেন। বিগত সময়ের নির্বাচনগুলোতে ভোট নিয়ে কি মানুষের আস্থা ছিল?
আবদুল কাদের মির্জা : আসলে সব ভোট নিয়ে তো আস্থা ছিল না। গেল জাতীয় ভোটটাও... সরকারের একটা অংশ, আমাদের দলীয় অতিউৎসাহী নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে গাছশুদ্ধ দিয়ে দিছে। এটা সত্য। আমি মিথ্যা কথা বলব না। আমি স্পষ্টবাদী মানুষ। কিন্তু একটা জিনিস সত্য সেটা হচ্ছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার আমলে যত ভোট সুষ্ঠু হইছে, সিটি করপোরেশন, উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; আমি মনে করি জিয়াউর রহমান থেকে পরবর্তী সরকারগুলো, খালেদা জিয়া পর্যন্ত এত সুষ্ঠু নির্বাচন কখনও হয় নাই। জিয়াউর রহমান হ্যাঁ-না ভোটের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে ভোটচুরির রাজনীতি শুরু করেন— এটা তো দিবালোকের মতো সত্য। খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করেছে। সেটা ফেয়ার ভোট হইছে। কিন্তু এছাড়া আপনি একটা ভোট দেখান যে ভোটটাতে বিএনপি ফেরার ভোট করেছে, একটা ভোট দেখান?
কে পৌঁছায় কার কথা? আমার ভাই সাধারণ সম্পাদক। ওনারা ওনাদের সুবিধা মতো কথা বলে। সবাই সবার সুবিধা মতো কথা বলে। কিন্তু আমাদের সকলের সত্য কথা বলা উচিত
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
আওয়ামী লীগের অনেক দৃষ্টান্ত আছে। যেমন- কুমিল্লাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই দুইটা নির্বাচনের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন যে দিনের ১২টায় (বেলা ১২টা) বলা হইছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে এটা বলা হইছে, জাতীয় নেতারা বলেছেন। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, ওই দুইটা সিটি করপোরেশনে বিএনপি জয়লাভ করছে। একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কারণেই তো তারা জিতল। তাহলে দৃষ্টান্ত আছে, আওয়ামী লীগের আমলে ফেয়ার নির্বাচন হইছে।
আওয়ামী লীগেরও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেটা শেখ হাসিনা চেষ্টা (ত্রুটি-বিচ্যুতি নিরসনে) করতেছেন। আমরা এখানে যেরকম ফেয়ার নির্বাচন করেছি, আমাদের সেই মানসিকতা ছিল বিধায় আমরা নির্বাচনটা ফেয়ার করতে পেরেছি।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনের সময় ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। ষড়যন্ত্রকারী মূলত কারা?
আবদুল কাদের মির্জা : ষড়যন্ত্রকারী একরামুল করিম চৌধুরী। সে হচ্ছে বড় ষড়যন্ত্রকারী। বিভিন্ন এলাকায় তার ছেলেসহ... অস্ত্রশস্ত্র ভাগাভাগি করেছে, আদান-প্রদান করেছে। আমি সিরিয়াস হওয়ায়, প্রশাসন কিছুটা দায়িত্বশীল হওয়ায় মোটামুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হইছে।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনের সময় চাপের কথা বলছিলেন। সেই চাপটা কাদের ছিল?
আবদুল কাদের মির্জা : অপরাজনীতির বিষয়ে কথা বললে কিছু চাপ থাকবেই। আপনার বিরুদ্ধে কথা গেলে তো আপনি মানসিকভাবে একটা চাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন কেনা-বেচার খেলা হচ্ছে, অনেক খেলা। ভালো লোক রাজনীতিতে নাই— এটা ঠিক নয়। এখনও আবদুল হামিদ সাহেবের মতো লোকেরা আওয়ামী লীগে আছেন। যাদের নীতিনৈতিকতা আছে। বিরোধী দলে থেকেও এমপি নির্বাচিত হইছেন। এই ধরনের লোকগুলা এখনও আওয়ামী লীগে আছেন, নীতিনৈতিকতার নেতারা আছেন।
কী লাভ ভোগ করে? আমাদের তো ভোগের দরকার নাই। দলটা যদি সুন্দর মতো চলে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যদি সবাই লালন করে, জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা দিছে সেটা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে আমাদের এত কষ্ট, এত শ্রম-ঘামের প্রতিফলন হবে
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনে বড় ভাই, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে কী পরিমাণ সমর্থন পেয়েছেন?
আবদুল কাদের মির্জা : আসলে সমর্থন... আমার অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলাটা উনি পছন্দ করেন নাই। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়-অবিচার-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলব। আমি আমার কমিটমেন্ট থেকে এসব কথা বলছি।
ঢাকা পোস্ট : এর আগে আপনি এ ধরনের কথা না বলে এখন বলছেন কেন?
আবদুল কাদের মির্জা : আসলে এটা আমার মনের কথা। আমার দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ, সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
ঢাকা পোস্ট : জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে আপনার দ্বন্দ্বের কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
আবদুল কাদের মির্জা : কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব না। দ্বন্দ্ব হচ্ছে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে। অপরাজনীতি যেমন- টেন্ডারবাজি, সেখানে ১২ থেকে ১৪টা ডিপার্টমেন্ট, প্রত্যেকটাতে তার লোক নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা সেখানে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয় না। দু-তিনজনে ড্রপ করে তাদের ম্যানেজই। একজনকে কাজ দিয়ে তার থেকে ১০ থেকে ১২ পার্সেন্ট টাকা নেয়। প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে এটা চলতেছে। এই টাকার বড় অংশীদার একরামুল করিম চৌধুরী। খবর নেন, যদি এটা সত্য না হয় আমার বিচার হোক। তারপর প্রত্যেকটা চাকরি থেকে তিন-চার লাখ করে টাকা নেয়। গরিব একটা পুলিশ কয় টাকা পায়? তার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিছে। গরিব প্রাইমারি স্কুলের পিয়ন, তার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিছে। তারপর এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটখাট চাকরি দিয়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা নিছে। জেলা প্রশাসক অফিসে চাকরি দিয়ে চার-পাঁচ লাখ টাকা নিচ্ছে। এগুলোর খোঁজ নেন।
বাংলাদেশে অপরাজনীতির জন্মদাতা বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। ভোট কারচুপির জন্মদাতা বিএনপি। তারা শুরু করেছে, এরপর এরশাদ শুরু করেছে... সকল অপকর্মের হোতা তারা। ৭৫’এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশটাকে অপকর্মের দিকে নেয় গেছে তারা
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ঢাকা পোস্ট : নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে আপনি আপত্তি তুলেছেন। আপনি যাদের বিষয়ে আপত্তি তুলছেন তারা কারা?
আবদুল কাদের মির্জা : আমাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমি থাকব না। এটার ভেতরে যারা আছে এরা বসন্তের কোকিল। আমি দু-একজনের রেফারেন্স দেই, যেমন- জাবেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় এরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জেলে দিছে। আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জেলে দিছে, নির্যাতন করেছে। এরা আজ সিনিয়র সহ-সভাপতি! তারপর হাওয়া ভবনের মানিক, সে আজ সিনিয়র সহকারী সহ-সভাপতি। এমন ২০-২৫ জন যারা বসন্তের কোকিল, তারাই আজ নোয়াখালীর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। নেতৃত্ব দেয়।
ঢাকা পোস্ট : আপনার ভাই সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় এরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে? উনি কী তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না?
আবদুল কাদের মির্জা : উনি (ওবায়দুল কাদের) কীভাবে করতেছেন আমি জানি না। ওনার কাছে কমিটি গেছে, উনি এটা নিয়া এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেন নাই। উনি কী চিন্তা করতেছেন, উনি জানেন, ওনার খোদা জানেন। আমি বলতে পারব না। ওনার সঙ্গে আমি রাজনৈতিক আলাপ কখনও করি না। ওনার সঙ্গে আমার পারিবারিক আলাপ মাঝেমধ্যে, টুকটাক হয়। ওনার যে মনমানসিকতা, আসলে আমরা তো একই পরিবারের সদস্য...।
ঢাকা পোস্ট : ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আপনার কোনো দ্বন্দ্ব আছে? লোকে বলাবলি করে, ওনার স্ত্রী অর্থাৎ আপনার ভাবির সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে...
আবদুল কাদের মির্জা : ওনার (ওবায়দুল কাদের) সঙ্গে আমার কিসের দ্বন্দ্ব? আমার ভাবির সঙ্গেও কিছু নাই। আমার ভাবি একজন চেয়ারম্যানের পক্ষে কথা বলেছিল, উপজেলা চেয়ারম্যানের মনোনয়নের ব্যাপারে কথা বলছে, আমরা তার বিরোধিতা করেছি। আমরা যাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চেয়েছি সেই চেয়ারম্যান হয়েছে। সে নমিনেশন পাইছে। এটাই হলো ওনার সঙ্গে আমার ভুল বোঝাবুঝি।
ঢাকা পোস্ট : ধমকায়, গুলি করবে, ঝাঁঝরা করবে— এরা কারা?
আবদুল কাদের মির্জা : একরাম চৌধুরীর লোক। ধমক দিয়েছে বিভিন্নভাবে। অপরিচিত নম্বর থেকে।
ঢাকা পোস্ট : জাতীয় পর্যায়ে যে ষড়যন্ত্রের কথা বলে আসছেন, সেটা আসলে কী?
আবদুল কাদের মির্জা : জাতীয় পর্যায়ে ষড়যন্ত্র না। কিছু নেতা অকারণে কিছু কথাবার্তা বলছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে এটা আশা করি না। আমি গ্রামের একটা ছোটখাট নেতা, পৌরসভার মেয়র। আমাকে নিয়ে জাতীয় নেতাদের মন্তব্য করা ঠিক নয়।
আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলব, শেখ হাসিনার কথা বলব; কেউ কী আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে? বলেন? আমি এই দলের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে আছি, বাকি সময়টুকু এই দলের সঙ্গেই থাকব। বহিষ্কার করলেও আমি সমর্থন করব। কেউ সঙ্গে না থাকলে আমি একাই দাঁড়িয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলব
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ঢাকা পোস্ট : আপনি যে ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, এটা কি দলীয় গঠনতন্ত্রে সমর্থন করে?
আবদুল কাদের মির্জা : বাকস্বাধীনতা বা কথা বলার স্বাধীনতা তো আমার অধিকার। এটা দলের ঘোষণাপত্র আমাকে দিছে। সেখানে ৭ এর ক-তে বলা হয়েছে, ব্যক্তিচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার, সভা-সমাবেশ, নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
তাহলে আমার বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিচিন্তা বা কথা বলার অধিকার তো গঠনতন্ত্রে দেওয়া হয়েছে। এটা তো আমাকে দেওয়া হয়েছে। বলতে অসুবিধা কোথায়? যারা আজ আমার সমালোচনা করে, গঠনতন্ত্র সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নাই। তারা তো সংগঠনের সঙ্গে নাই, রাজনীতির সঙ্গে নাই, মানুষের সঙ্গে নাই। তারা আছে আকাম-কুকামে, অনিয়ম করে কীভাবে টাকা-পয়সার পাহাড় গড়ে তুলবে তা নিয়ে ব্যস্ত। এরা তো দল করে না। এরা মনে করে যে নির্বাচন আসলে টাকা-পয়সা দিয়া কেনা যায়। ভোট কারচুপি করে, আন্ডু-পান্ডু-গান্ডু এদেরকে নিয়া ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জয়লাভ করবে। তারা তো সংগঠন সম্পর্কে বোঝেও না, সংগঠন করেও না।
ঢাকা পোস্ট : বলছেন, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। সেটা কি চালিয়ে যাবেন? বিভিন্ন বাধা-হুমকিসহ আপনাকে বহিষ্কারও করা হতে পারে দল থেকে। এটা নিয়ে কী বলবেন?
আবদুল কাদের মির্জা : জ্বি, অবশ্যই। যতই বাধা আসুক, আমাকে বহিষ্কার করলে করবে। আমাদের নেতা আবদুল মালেক উলিক, ওনাকে বহিষ্কার করার পর বলছিলেন, ‘আমি সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা নই, আমাকে পদচ্যুত করলে আমি বাসায় বসে থাকব। আমি রাজনীতি করি, করব। বঙ্গবন্ধুর কথা বলব, আওয়ামী লীগের কথা বলব। কেউ কী আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে?’ আমারও একই অবস্থা। আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলব, শেখ হাসিনার কথা বলব; কেউ কী আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে? বলেন?
আমি এই দলের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে আছি, বাকি সময়টুকু এই দলের সঙ্গেই থাকব। বহিষ্কার করলেও আমি সমর্থন করব, এটার (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে থাকব। কেউ সঙ্গে না থাকলে আমি একাই দাঁড়িয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলব।
যারা আজ আমার সমালোচনা করে, গঠনতন্ত্র সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নাই। তারা তো সংগঠনের সঙ্গে নাই, রাজনীতির সঙ্গে নাই, মানুষের সঙ্গে নাই। তারা আছে আকাম-কুকামে, অনিয়ম করে কীভাবে টাকা-পয়সার পাহাড় গড়ে তুলবে তা নিয়ে ব্যস্ত
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ঢাকা পোস্ট : নোয়াখালীতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকটের কথা বলছেন। এটা থেকে উত্তরণের পথ কী?
আবদুল কাদের মির্জা : শুনেন, উত্তরণের পথটা কোথায়.... অপরাজনীতিবিদরা যদি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সেক্ষেত্রে ভালো লিডারশিপ তৈরি করা যায় না। কাকে দিয়ে আপনি তৈরি করবেন? পারবেন না, এটা সম্ভব না। আজ মেধাবীরা রাজনীতিতে যদি না আসে রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। কিন্তু মেধাবীদের তো আমরা রাজনীতিতে আনতে পারছি না। আজ ভালো ছাত্ররা রাজনীতি করে না। এটা কাদের ব্যর্থতা? আমরা, রাজনীতিবিদরা যারা আছি তাদের ব্যর্থতা।
বাংলাদেশে অপরাজনীতির জন্মদাতা বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। ভোট কারচুপির জন্মদাতা বিএনপি। তারা শুরু করেছে, এরপর এরশাদ শুরু করেছে... সকল অপকর্মের হোতা তারা। ৭৫’এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশটাকে অপকর্মের দিকে নেয় গেছে তারা।
ঢাকা পোস্ট : কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তো দীর্ঘদিন ক্ষমতায়। এই অপরাজনীতি থেকে বের হওয়ার সুযোগ ছিল। এটা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আবদুল কাদের মির্জা : শেখ হাসিনা চেষ্টা করতেছেন। চেষ্টা চলতেছে। শেখ হাসিনা কি-না করছেন, দেখেন। মাত্র দু-তিনদিন আগে ৭০ হাজার গরীব পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করেছেন। এটা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছেন। নির্বাচনের আগে ৪নং ওয়ার্ডে ভোট চাইতে গেছিলাম। এক মহিলা বললেন, কেন এসেছেন? আমি তো বিব্রত। তিনি বললেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করছেন। আমি আপনাকে ভোট দেব না কাকে দেব?
শেখ হাসিনার উন্নয়নকে আজ একটা গোষ্ঠী যারা অপরাজনীতি করে, তারা যেহেতু দলের ভেতরে, এরা বসন্তের কোকিল, এরাই অপরাজনীতি করতেছে, ত্যাগীরা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাকে রেফারেন্স দিতে পারি, আমার কষ্ট লেগেছে, তিনদিন আগে যখন শুনলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা উপকমিটিতে আমার এক আপন ভাতিজা সদস্য। সে তো কোনোদিন আওয়ামী লীগের অফিসেও আসে নাই!
জাতীয় পর্যায়ে ষড়যন্ত্র না। কিছু নেতা অকারণে কিছু কথাবার্তা বলছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে এটা আশা করি না। আমি গ্রামের একটা ছোটখাট নেতা, পৌরসভার মেয়র। আমাকে নিয়ে জাতীয় নেতাদের মন্তব্য করা ঠিক নয়
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা
ঢাকা পোস্ট : এগুলো কীভাবে হচ্ছে?
আবদুল কাদের মির্জা : কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে— এই কথাগুলো বলতে গেলেই তো আমি পাগল-উন্মাদ। এই কথাগুলো বলতে গেলেই আমাকে বলে চিকিৎসা করতে হবে। একটু আগে একরাম চৌধুরী বলল, আমি অসুস্থ। আমার চিকিৎসা করাতে হবে। এই হলো অবস্থা ভাই। এই দেশ এভাবে চলে, কী বলতাম?
ঢাকা পোস্ট : আপনাদের মতো জ্যেষ্ঠ নেতা, ত্যাগী নেতা থাকার পরও দলে অপরাজনীতি হচ্ছে! এটা নিয়ে কী বলবেন?
আবদুল কাদের মির্জা : কে বলে আমি ত্যাগী নেতা..., কী লাভ ভোগ করে? আমাদের তো ভোগের দরকার নাই। দলটা যদি সুন্দর মতো চলে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যদি সবাই লালন করে, জননেত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে ঘোষণা দিছে সেটা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে আমাদের এত কষ্ট, এত শ্রম-ঘামের প্রতিফলন হবে।
ঢাকা পোস্ট : আপনার বার্তা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছায় কি?
আবদুল কাদের মির্জা : কে পৌঁছায় কার কথা? আমার ভাই সাধারণ সম্পাদক। ওনারা ওনাদের সুবিধা মতো কথা বলে। সবাই সবার সুবিধা মতো কথা বলে। কিন্তু আমাদের সকলের সত্য কথা বলা উচিত।
ঢাকা পোস্ট : আপনার বার্তা তো বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের কাছে যাচ্ছে, উনি এখন পর্যন্ত আপনাকে কোনো বার্তা দিয়েছেন কিনা?
আবদুল কাদের মির্জা : আমাকে তো নিষেধ করতেছে। কথা না বলার জন্য। রক্তচক্ষুও দেখাইতেছে। আগে দেখান নাই, এখন দেখাইতেছে।
ঢাকা পোস্ট : কিন্তু আপনি তো সত্য কথা বলে যাবেন...
আবদুল কাদের মির্জা : আমি বলে যাব। আমি ওপর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। অন্যদের ক্ষমতা আছে, আমাকে মেরে ফেলবে...। ওদের কাছে অস্ত্র আছে, আমার কাছে অস্ত্র নেই। আমি অস্ত্রের রাজনীতি করি না। আল্লার গজব পড়ুক, আমি অস্ত্রের রাজনীতি করি না। আমাকে মেরে ফেলতে পারে, জেলে দিতে পারে। জেল খাটার অভ্যাস আছে। আর মেরে ফেললে আমার কবরের জায়গাটা রেখে দিছি। আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে কবরটা চাইছি। পাশাপাশি কবর।
ঢাকা পোস্ট : একরামুল করিম চৌধুরী আপনার পরিবারের সদস্যদের রাজাকার বললেন কেন?
আবদুল কাদের মির্জা : ওনারা তো অসুস্থ মানুষ। ওনার ভিডিওটা ভাইরাল হইছে। ওনার কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি সবমিলিয়ে প্রমাণ হয়নি যে তিনি অসুস্থ, মাদকাসক্ত। একজন অসুস্থ লোক নিজের অপকর্ম ঢাকা দেওয়ার জন্য আর একজনকে অসুস্থ বলেন, এটাই হচ্ছে সত্য। এর (একরামুল করিম চৌধুরী) সম্পর্কে খবর নেন।
ঢাকা পোস্ট : আপনার পরিবারের সদস্যদের ‘রাজাকার’ সম্বোধন নিয়ে একরামুল করিম ক্ষমা চেয়েছেন কিনা?
আবদুল কাদের মির্জা : ক্ষমা চাইলে ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে চাইছে। আমি তো ছোটখাট মানুষ, আমার কাছে কেন ক্ষমা চাইবে?
ঢাকা পোস্ট : নিক্সন চৌধুরী সম্পর্কে কী বলবেন?
আবদুল কাদের মির্জা : শুনেন, আমরা যে যখন ক্ষমতায় আসি কিছু কিছু লোক মনে করে যে এটা আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। যা ইচ্ছা তা-ই বলা যাবে, যা ইচ্ছা তা-ই করা যাবে। আমি এর বাইরে আর কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না।
এনআই/এমএআর/