‘ব্যর্থ’ মাল্টিমিডিয়া প্রকল্প, বন্ধের সুপারিশ!
• সাড়ে চার বছরে ৮.৪৯ শতাংশ অগ্রগতিতে ক্ষুব্ধ আইএমইডি সচিব
• ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে আলোর মুখ দেখেনি : সাবেক পিডি
• প্রকল্পে অনিয়ম হলে দুদককে ব্যবস্থা নিতে চিঠি আইএমইডি’র
• প্রকল্প সংশোধন হলেও ডিপিপি কাটছাঁট করতে হবে : বর্তমান পিডি
উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকবোর্ডের যুগ থেকে বেরিয়ে সারাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ৩১ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ৪৮ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন। সঙ্গে পৌনে ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে প্রযুক্তিনির্ভর ক্লাস পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ‘দুর্নীতির’ কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। উল্টো ওই কর্মকর্তারা অভিযোগের তর্জনী তুলছেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রতি।
সার্বিক বিবেচনায় ‘ব্যর্থ’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ নাকচ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিভাগটি।
চলমান এ প্রকল্পের মেয়াদ গত বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার জন্য চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে আইএমইডি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ৩১ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ৪৮ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কথা ছিল পৌনে ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে প্রযুক্তিনির্ভর ক্লাস পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে সব ভেস্তে গেছে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল চার বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ায় আরও এক বছর তা বাড়ানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল...
এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং এখানে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আমি প্রকল্পটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে মিটিংয়ে বসেছিলাম। সরাসরি বলে দিয়েছে, প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর দরকার নেই। এ অবস্থায় এটি শেষ করার সুপারিশ করেছি।
তিনি বলেন, আইএমইডি থেকে দুদকে চিঠি দিতে বলেছি। সঠিক সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি করার জন্যও বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দোষীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আইএমইডিকে জানাতে হবে।
সচিব আরও বলেন, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নেওয়া হয়। দেশের উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। আইএমইডি’র ওপর যে দায়িত্ব আছে সেটা আমরা সঠিকভাবে পালন করব। প্রকল্প বাস্তবায়নে নয়-ছয়ের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার সারাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ৩১ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ৪৮ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করতে চেয়েছিল। পৌনে ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে প্রযুক্তিনির্ভর ক্লাস পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে সব ভেস্তে গেছে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল চার বছর। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্য প্রকল্পের সঙ্গে এ প্রকল্পের মেয়াদ আরেক বছর বাড়ানো হয়েছে। তারও ছয় মাস পার হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং এখানে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আমি প্রকল্পটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে মিটিংয়ে বসেছিলাম। সরাসরি বলে দিয়েছে, প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর দরকার নেই। এ অবস্থায় এটি শেষ করার সুপারিশ করেছি
আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী
এ বিষয়ে সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুরুতেই এ প্রকল্পের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের যন্ত্রপাতি সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি (ডিপিএম) এবং উন্মুক্ত দরপদ্ধতির (ওটিএম) ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। প্রথমপর্যায়ে প্রকল্পে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে টেশিস (টেলিফোন শিল্প সংস্থা) থেকে ল্যাপটপ সংগ্রহ করা হয় এবং প্রজেক্টরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হয় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে। প্রকল্পের দ্বিতীয়পর্যায়েও একইভাবে সরাসরি পদ্ধতিতে ল্যাপটপ কেনার সিদ্ধান্ত হলেও পত্রপত্রিকায় নেতিবাচক প্রচারণার কারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হস্তক্ষেপে সরাসরি পদ্ধতি থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। উন্মুক্ত পদ্ধতি ও ই-জিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বানের পর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রজেক্টরের স্পেসিফিকেশন নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের প্রজেক্টরের স্পেসিফিকেশন তৈরি হয়। প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ ও ইনস্টলেশন ব্যয়সহ সরকারের নির্ধারিত ভ্যাট-ট্যাক্স যোগ করে প্রতিটি ৮০ হাজার টাকা দরে মোটামুটি উন্নতমানের প্রজেক্টর কেনা সম্ভব। তবে সংশ্লিষ্ট ছয়টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের স্পেসিফিকেশনের প্রস্তাব করে। এক্সেসরিজসহ ইনস্টলেশনের শর্ত বাদ দেওয়ারও অনুরোধ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের এ প্রস্তাব গ্রহণের জন্য আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়।
সাবেক প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের নিম্নমানের স্পেসিফিকেশন আমি মেনে নেইনি। ফলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণে বিরত থাকে। দরপত্র উন্মুক্ত করার ১৬ দিন পর আমার বিরুদ্ধে দরপত্রে প্রতিযোগিতা সীমিতকরণ এবং ৬০ হাজার টাকার প্রজেক্টর ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয় করে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু অভিযোগের পর প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তদন্ত করলে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
মাউশি’র সংশ্লিষ্টরা জানান, পরবর্তীতে প্রকল্পের নতুন পরিচালক হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক আব্দুস সবুর খান। ২০১৮ সালের আগস্টে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে স্পেসিফিকেশন তৈরির জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় ডিপিপি’র নির্দেশনা ও ২০১৮ সালের পিপিআর’র বিধিবিধান উপেক্ষা করে টেশিস থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে মাল্টিমিডিয়াসামগ্রী কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংসদীয় কমিটির কাছে এ উদ্যোগকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের আবেদন করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের নিম্নমানের স্পেসিফিকেশন আমি মেনে নেইনি। ফলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণে বিরত থাকে। পরবর্তীতে তারা ৬০ হাজার টাকার প্রজেক্টর ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয় করে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে। কিন্তু অভিযোগের পর প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়
সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন
এরই মধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ডিপিএম পদ্ধতিতে টেশিস থেকে উল্লিখিত ক্রয়কার্যক্রম সম্পাদনের অনুমোদন দেয়। তবে বিপত্তি দেখা দেয় প্রজেক্টরের স্পেসিফিকেশন নিয়ে। কারণ, আইসিটি বিভাগ থেকে যে স্পেসিফিকেশন দেওয়া হয়েছে, সেই স্পেসিফিকেশনের প্রজেক্টর একমাত্র জাপানের কেসিও কোম্পানি তৈরি ও বাজারজাত করে। বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের প্রজেক্টরের খুচরা মূল্য ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। নির্ধারিত এ মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্স যোগ করলে প্রজেক্টরের দাম পড়ে কমপক্ষে ৯৫ হাজার টাকা। এতে প্রশ্ন দেখা দেয়, ৯৫ হাজার টাকা দরের প্রজেক্টর কীভাবে ডিপিপি নির্ধারিত ৮০ হাজার টাকায় কেনা সম্ভব।
মাউশি সূত্র আরও জানায়, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ এবং অসাধু চক্রের যোগসাজশে প্রথম প্রকল্প পরিচালকের অপসারণের মাধ্যমে প্রকল্পটিকে ধ্বংস করা হয়। ফলে বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়লে তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রকল্পের শুরু থেকে ডিপিডি’র দায়িত্ব পালন করা এবং বর্তমানে পিডি’র দায়িত্বে থাকা ড. জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল মন্ত্রণালয়, কিন্তু ডিপিপি সংশোধন না করে মেয়াদ বাড়ানো হলে লাভ হবে না। কারণ ইতোমধ্যে অনেক ইকুইপমেন্ট চেঞ্জ হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন করে পরবর্তী কার্যক্রমে এগোব।
প্রকল্পে ট্রেনিংয়ের নামে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও ট্রেনিং আলাদা আলাদা কম্পোনেন্ট। দুটোরই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় একটা আটকে গেছে এবং আরেকটার কাজ কিছু হয়েছে। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পে কোনো ঘাটতি ছিল না। বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারলে বর্তমানে প্রকল্পটি দৃশ্যমান থাকত।
মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল মন্ত্রণালয়, কিন্তু ডিপিপি সংশোধন না করে মেয়াদ বাড়ানো হলে লাভ হবে না। কারণ ইতোমধ্যে অনেক ইকুইপমেন্ট চেঞ্জ হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন করে পরবর্তী কার্যক্রমে এগোব
বর্তমান পিডি ড. জাকির হোসেন
প্রকল্পটি যদি সংশোধন করা হয় তাহলে এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাস্তবসম্মত কাজ করতে হবে। এখন যদি মেয়াদ বাড়ে তাহলে অনেক কাজ বাদ দিয়ে রিয়েল কাজগুলো করতে হবে। এ প্রকল্পে অনেক অ্যাক্টিভিটিস (কার্যক্রম) দেওয়া আছে। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হলে অনেককিছু বাদ দিয়ে বাস্তবসম্মত কাজগুলো রেখে ডিপিপি পুনরায় সংশোধন করতে হবে। তা না হলে বর্তমান ডিপিপিতে প্রকল্পের কাজ করা যাবে না।
প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিতীয় প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আব্দুস সবুর খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পিডি থাকাকালীন আমি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু উদ্যোগগুলো নানা চ্যালেঞ্জের কারণে আটকে যায়।’ প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সবুর খান বলেন, ‘আমাদের ডকুমেন্টের সঙ্গে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, কোনোকিছুই মেলে না। এ প্রকল্পে যা যা হয়েছে সবকিছু মন্ত্রণালয়কে সময়মতো জানিয়েছি আমি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে আমি একা দায় নিতে পারব না। কারণ কোনো কাজই আমার একার সিদ্ধান্তে হয়নি। এজন্য আমি নিজেকে ব্যর্থ বলব না, কারণ আমি সবসময়ই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অগ্রগতি নেই, যা বলছে কর্তৃপক্ষ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশিক্ষণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদনসহ অর্থছাড়ের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বছরের প্রথমদিকে প্রশিক্ষণ শুরু করা যায়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হওয়ায় প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে আহ্বান করা দুটি শিক্ষা অঞ্চলের জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। দরদাতার উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট মামলার রায় বাদীর পক্ষে হওয়ায় এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করাও সম্ভব হয়নি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষা অফিসের জন্য ১৫৮৬ সেট আইসিটিসামগ্রী ই-জিপি সিস্টেমে ক্রয়ের লক্ষ্যে রি-টেন্ডারিং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থগিত হয়ে যায়।
প্রকল্পে কাজ ছিল মূলত দুটি। শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া স্থাপন। আর মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাস পরিচালনার জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে।
এসআর/এমএআর/