ঢামেক হাসপাতালে কোটি টাকার ‘বিট বাণিজ্য’, নেপথ্যে পিসি আউয়াল!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে চলছে বাণিজ্য। সুবিধামতো স্থানে দায়িত্ব দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। প্রাপ্য ছুটি পেতেও আনসার সদস্যদের গুনতে হচ্ছে অর্থ। এছাড়া দালাল ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরছে আনসারদের একটি চক্র। বছরজুড়ে এ বাড়তি আয়ের অঙ্ক পেরোয় কোটি টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. আব্দুল আউয়াল খান। প্রতি মাসে তার আয় অন্তত নয় লাখ টাকা। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের অভিযোগ, পিসি আউয়ালের নির্দেশে হাসপাতালের বিভিন্ন বিট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করেন সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) মো. মোস্তাকিম। প্রতি সপ্তাহে জমানো টাকা তিনি পিসি আউয়ালের হাতে তুলে দেন।
বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে প্রায় নয় লাখ টাকা উপার্জন করেন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. আব্দুল আউয়াল খান। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন
অভিযোগ আছে, হাসপাতালের ২১১, ২১২, ২০৪ ও ১০৬ নং ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার (১০৪, ১০৫), প্যাথলজি, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফি, ব্লাড ব্যাংক ও বহির্বিভাগসহ বিভিন্ন স্থান (বিট) থেকে সাপ্তাহিক টাকা তোলা হয়।
এছাড়া মাসে দুবার ৮০ জন করে আনসার সদস্য ছুটিতে যান। ছুটিতে যেতে তাদের প্রত্যেককে দিতে হয় ১৫০০ টাকা— জানান ভুক্তভোগী আনসার সদস্যরা।
পিসি আউয়ালের এসব অনিয়মের বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য। তাদের ভয়েস রেকর্ড ঢাকা পোস্টের কাছে সংরক্ষিত আছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘সাপোর্টিং ডকুমেন্ট পাওয়া গেলে অবশ্যই পিসি আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পছন্দের বিটে ডিউটি করতে দিতে হয় অর্থ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আনসার সদস্য জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন শিফটে ডিউটি করতে হয়। এ-শিফট অর্থাৎ সকাল, বি-শিফট অর্থাৎ বিকেল এবং সি-শিফট অর্থাৎ রাত। এই তিন শিফটে নিজের পছন্দ অনুযায়ী অনেকে ডিউটি নেন। সেক্ষেত্রে একেক শিফটের জন্য একেক পরিমাণের অর্থ পিসি আউয়ালকে দিতে হয়। কারণ দায়িত্ব বন্টনে তিনিই প্রধান ব্যক্তি।
২১১ নম্বর ওয়ার্ড শিশু এনআইসিইউ ও নবজাতকদের (নিওনেটোলজি বিভাগ) জন্য বরাদ্দ। ২১২ নম্বর গাইনি ও প্রসূতি বিদ্যা ওয়ার্ড। এ দুই ওয়ার্ডে ডিউটি নিতে হলে আনসার সদস্যদের প্রতি সপ্তাহে এ-শিফটে ৩০ হাজার টাকা, বি-শিফটে ৩২ হাজার টাকা এবং সি-শিফটে ৩৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। অর্থাৎ সপ্তাহে এ দুই ওয়ার্ড থেকে পিসি আউয়ালের আয় আসে ৯৭ হাজার টাকা। মাসে তিন লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
এক্স-রে ইউনিটে দায়িত্ব নিতে সপ্তাহে এ-শিফটে পাঁচ হাজার, বি-শিফটে ছয় হাজার এবং সি-শিফটের জন্য দুই হাজার টাকা করে দিতে হয়। মাসে এখান থেকে আসে ৫২ হাজার টাকা। সিটি স্ক্যান ইউনিটে দায়িত্ব নিতে এ-শিফটে তিন হাজার, বি-শিফটে চার হাজার এবং সি-শিফটের জন্য এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। এখান থেকে প্রতি মাসে আসে ৩২ হাজার টাকা।
২১১ নম্বর ওয়ার্ড শিশু এনআইসিইউ ও নবজাতকদের (নিওনেটোলজি বিভাগ) জন্য বরাদ্দ। ২১২ নম্বর গাইনি ও প্রসূতি বিদ্যা ওয়ার্ড। এ দুই ওয়ার্ডে ডিউটি নিতে হলে আনসার সদস্যদের প্রতি সপ্তাহে এ-শিফটে ৩০ হাজার টাকা, বি-শিফটে ৩২ হাজার টাকা এবং সি-শিফটে ৩৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। অর্থাৎ সপ্তাহে এ দুই ওয়ার্ড থেকে পিসি আউয়ালের আয় আসে ৯৭ হাজার টাকা। মাসে তিন লাখ ৮৮ হাজার টাকা
আলট্রাসনোগ্রাফি ইউনিটে ডিউটি পেতে এ-শিফটের জন্য প্রতি সপ্তাহে দিতে হয় তিন হাজার টাকা, বি-শিফটের জন্য এক হাজার টাকা। মাসে এখান থেকে আসে ১৬ হাজার টাকা। ব্লাড ব্যাংক ইউনিটে দায়িত্ব পেতে সপ্তাহে এ-শিফটের জন্য তিন হাজার, বি-শিফটের জন্য দুই হাজার এবং সি-শিফটের জন্য এক হাজার টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে এখান থেকে আসে ২৪ হাজার টাকা।
প্যাথলজি বিভাগে দায়িত্ব পেতে এ-শিফটের জন্য প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার, বি-শিফটের জন্য তিন হাজার এবং সি-শিফটের জন্য এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। প্রতি মাসে এখান থেকে আসে ৩৬ হাজার টাকা।
১০৪-১০৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। এখানে দায়িত্ব পেতে এ-শিফটের জন্য এক হাজার, বি-শিফটের জন্য এক হাজার এবং সি-শিফটের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে এখান থেকে আসে ১০ হাজার টাকা।
১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডিউটি নিতে এ-শিফটের জন্য প্রতি সপ্তাহে এক হাজার এবং বি-শিফটের জন্য ১২০০ টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে এখান থেকে আসে আট হাজার ৮০০ টাকা।
২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে তিন শিফটের জন্য প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ টাকা অর্থাৎ মাসে দিতে হয় ছয় হাজার টাকা।
পিসি আউয়ালের অধীনে ঢামেক হাসপাতালে প্রায় ৪০০ আনসার সদস্য রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে দুবার ২০ শতাংশ সদস্য ছুটিতে যান। অর্থাৎ ১৫ দিন পরপর ৮০ জন, মাসে ১৬০ জন আনসার সদস্য ছুটিতে থাকেন। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে আরও ১০-১৫ জন ছুটি নেন। তারা মোট ১২ দিন ছুটি পান। এর চেয়ে বেশিদিন ছুটিতে গেলে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি থেকে ঘুষ
হাসপাতালের বহির্বিভাগে ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এ টাকা না দিলে বহির্বিভাগে ঢুকতে দেওয়া হয় না তাদের।
ছুটি পেতে গুনতে হয় ১৫০০ টাকা
ভুক্তভোগীরা জানান, পিসি আউয়ালের অধীনে ঢামেক হাসপাতালে প্রায় ৪০০ আনসার সদস্য রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে দুবার ২০ শতাংশ সদস্য ছুটিতে যান। অর্থাৎ ১৫ দিন পরপর ৮০ জন, মাসে ১৬০ জন আনসার সদস্য ছুটিতে থাকেন। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে আরও ১০-১৫ জন ছুটি নেন। তারা মোট ১২ দিন ছুটি পান। এর চেয়ে বেশিদিন ছুটিতে গেলে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়।
নিজের প্রাপ্য ছুটি পেতেই প্রত্যেক আনসার সদস্যকে গুনতে হয় ১৫০০ টাকা। এখান থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা পান পিসি আউয়াল।
পিসি আউয়ালের বিরুদ্ধে আরও যত অভিযোগ
ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা এখানে সক্রিয়। তাদের নির্বিঘ্নে কাজের সুযোগ দিতে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন পিসি আউয়াল। শুধু তা-ই নয়, দালালদের প্ররোচনায় ২১১ ও ২১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এ দুই ওয়ার্ডে আয় বেশি, এ কারণে টাকার বিনিময়ে অসাধু আনসার সদস্যরা এখানে দায়িত্ব নেন।
পিসি আউয়ালের এসব অনিয়মের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার বিষয়ে ঢামেক পরিচালকের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ গেছে বলে শুনেছি। তার সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এপিসি (মুন্সি) মোস্তাকিম। তিনি সবার ডিউটি বণ্টন করেন। এছাড়া এপিসি বিল্লাল হোসেন ও এপিসি হযরত আলী তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব নেওয়া এক আনসার সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভাই, আপনি তো সবই জানেন। আমরা ছোট চাকরি করি। বিট দিয়ে ডিউটি নিতে হয়, এটা তো ওপেন সিক্রেট। নতুন কিছু নয়। আগে যত পিসি এসেছেন, তারা ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা দিয়ে এখানে বদলি হয়ে এসেছেন। ঢাকা মেডিকেলে একজন পিসির মাসে আয় আট থেকে নয় লাখ টাকা।’
নাম প্রকাশ না করে ঢামেক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগের পিসি মিজানুর রহমানকে নানা অনিয়মের কারণে ছুটিতে পাঠানো হয়। ঈদের সময় টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত আনসার সদস্যকে ছুটিতে পাঠান তিনি। এছাড়া বিট দিয়ে ডিউটি দেওয়ার টাকা মিজানুর রহমানের ট্রাংকে পায় আনসার হেডকোয়ার্টারের মনিটরিং সেল। এ কারণে তাকে তিন বছরের জন্য বরখাস্তও করা হয়।
তিনি জানান, মিজানুরের পর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক পিসি আব্দুল আউয়ালকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার (পিসি আউয়াল) বেশকিছু অনিয়মের বিষয়ে পরিচালক অবগত আছেন। সম্প্রতি প্রশাসনিক ব্লকে আনসার সদস্যদের ফলিংয়ে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেন পরিচালক। তিনি তাদের সতর্কও করেন।
পিসি আব্দুল আউয়ালের আগে যারাই এখানে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন— এমন দাবি করে ঢামেক হাসপাতালের এক আনসার কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পিসি মিজানের আগে ছিলেন পিসি মোসলেহ উদ্দিন। তিনিও টানা তিন বছর দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঢাকায় তার বাড়ি-ফ্ল্যাট আছে। সবাই মনে করেন আনসার একটি ছোট জায়গা, ছোট চাকরি; এ কারণে এখানে কেউ নজর দেন না’— বলেন ওই আনসার কর্মকর্তা।
দায়িত্ব পাওয়ার পর পিসি আউয়ালও যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান— উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পদ পেতে তাকে কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকে তিনি এসব টাকা সংরক্ষণ করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘বিট’ থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় না হলেও ‘কিছু টাকা’ আয় হয় বলে ঢাকা পোস্টের কাছে স্বীকার করেন সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) মুন্সি মো. মোস্তাকিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপনি যেসব বিট থেকে লাখ লাখ টাকা তোলার কথা বলছেন, সেখান থেকে আসলে এত টাকা আসে না।’ কত টাকা আসে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যে টাকার কথা বলছেন (নয় লাখ) তার চেয়ে অনেক কম আসে। তবে পিসি আউয়াল স্যারের আগে যারা ছিলেন তারা অনেক টাকা বিট পেয়েছেন। এই স্যার (পিসি আউয়াল) এত টাকা বিট পান না।’
অভিযোগের বিষয়ে যা বললেন পিসি আউয়াল
বিট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিসি আব্দুল আউয়াল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেসব অনিয়মের কথা বলছেন তার কোনোটি সঠিক নয়। যা বেতন পাই তা-ই আমার ইনকাম। এক টাকাও বেশি আয় নাই।’
তার বিরুদ্ধে একটি চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে— দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আমার আগে যারা পিসির দায়িত্ব পালন করতেন তারা অনিয়ম করে টাকা কামাতেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। মেসে যা রান্না হয় তা-ই খাই। ডিউটি ছাড়া বাইরে কোথাও বের হই না। অবৈধ টাকা আয় তো দূরের কথা!’
কী বলছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক
পিসি আউয়ালের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপনি যে অভিযোগের কথা বলছেন, সে বিষয়ে কিছু সাপোর্টিং ডকুমেন্ট থাকলে তার বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এসব অভিযোগের ক্ষেত্রে আমরা যেটা করতে পারি, তথ্য-উপাত্ত পেলে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা। যদি দেখি আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, সেক্ষেত্রে আমরা ওই জায়গায় স্ট্রং থাকতে পারি। তথ্য-উপাত্ত ছাড়া তো কিছু করা যাবে না। তারা তো অভিযোগগুলো অস্বীকার করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে (বিট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম) যথেষ্ট সতর্ক। আপনি নিজেই দেখছেন এসব বিষয়ে কাজ হচ্ছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে তারা কারেকশন (সংশোধন) হয়। পদ্ধতিগত যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া যায় সেটা নেওয়ার চেষ্টা করছি। যেমন ধরেন, আমি এক সপ্তাহের বেশি সেখানে (বিট) কাউকে রাখছি না। কারা কারা সেখানে ডিউটি করছে, সেগুলো খেয়াল করছি। পিসিদেরও নিয়মিত শিফট করার চেষ্টা করছি। প্রথমে ভেবেছিলাম দুই মাস পরপর চেঞ্জ করব, সেটা আসলে খুব র্যাপিড (দ্রুত) হয়ে যায়। তাই আমরা একটু সময় বাড়িয়ে দিয়েছি।’
পরিচালক বলেন, ‘এটা নিয়ে যেন কেউ মনোপলি (একচেটিয়া ব্যবসা) করতে না পারে এবং এ ধরনের জটিলতা থেকে আমরা যেন বের হয়ে আসতে পারি, সেই চেষ্টা চলছে। এটা শুধু ঢাকা মেডিকেলের চিত্র নয়, সারা দেশের চিত্র। আমি যদি এখান থেকে ৫০ আনসারকে সরিয়ে দিয়ে আবার নতুন কাউকে আনি, তাহলেও তাদের চরিত্র বদলাবে না। টোটাল সিস্টেমেই (পুরো ব্যবস্থাপনায়) গলদ। এর সমাধানও খুব কঠিন। তবে, আনসারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়মের মধ্যে আনতে পারেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আনসার কমান্ডার যা বললেন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত পিসি আউয়ালসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জোনের আনসার কমান্ডার আলী রেজা রাব্বির সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপনি যেসব অভিযোগের কথা বলছেন সেটা খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনার কাছে যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকে, আমাকে দিতে পারেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’
তিনি আরও বলেন, একই অভিযোগে আগের পিসি মিজানুর রহমান ও একজন এপিসিকে তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
কেন বরখাস্ত হন পিসি মিজানুর
এ বছর ঈদুল ফিতরের আগের দিন (১৩ মে) পিসি মিজানুর রহমানের কক্ষে অভিযান চালায় আনসার হেডকোয়ার্টারের একটি সেল। ওই অভিযান প্রসঙ্গে থানা আনসার ভিডিপি অফিসার (টিভিডিও, শাহবাগ) সরদার খসরু পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পিসি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। রোজার ঈদের আগের দিন ছুটি-সংক্রান্ত বিষয়ে হঠাৎ অভিযানে আসে আনসার হেডকোয়ার্টারের একটি সেল। এ সময় তার ট্রাংক থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ পাওয়া যায়। ওই টাকার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময় ২৬ আনসার সদস্যের ছুটিতে যাওয়ার কথা কিন্তু পাঠানো হয় ১২০ জনকে। এ অনিয়মের জন্য তাকে তিন বছরের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
পিসি আউয়ালের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাস পরপর ইনচার্জ হিসেবে একজন পিসি দায়িত্ব পান। তবে পারফর্মেন্স ভালো হলে তাকে বেশি দিন রাখা হয়। পিসি মিজানুর রহমানের পর পিসি আউয়াল দায়িত্ব পান। এখানে তার আট মাস পার হয়েছে। যেটি হওয়ার কথা নয়।’
এসএএ/এমএআর/