আদর্শের কারণে ব্র্যাকেটবন্দী বাম দলগুলো
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৩৯টি। এর মধ্যে ২৪টি দল ভেঙে ৩৯ টুকরা হয়ে ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই এমন দল আছে অন্তত শতাধিক। এসব দলের মধ্যে বেশ কয়েকটি আবার গঠনের পর একাধিকবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। কেন ভাঙছে, কেন ব্র্যাকেটবন্দী হচ্ছে— এ নিয়ে ঢাকা পোস্টের বিশেষ আয়োজন ‘ব্র্যাকেটবন্দী দলের কাহিনি’। নিজস্ব প্রতিবেদক আদিত্য রিমনের অনুসন্ধানে চার পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে তৃতীয়টি।
দেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আদর্শগত রাজনীতি করতে গিয়ে বাম দলগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বারবার দলগুলো ভাঙনের কবলে পড়ছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর মেজর আবদুল জলিলের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ)। প্রতিষ্ঠার আট বছরের মাথায় ১৯৮০ সালে প্রথম ভাঙনের কবলে পড়ে জাসদ। এরপর নানা জটিলতা ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভাঙা জাসদ আরও কয়েক টুকরা হয়ে যায়। বর্তমানে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে জাসদ নামের চারটি দল রয়েছে
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর মেজর আবদুল জলিলের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ)। প্রতিষ্ঠার আট বছরের মাথায় ১৯৮০ সালে প্রথম ভাঙনের কবলে পড়ে জাসদ। এরপর নানা জটিলতা ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভাঙা জাসদ আরও কয়েক টুকরা হয়ে যায়। বর্তমানে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে জাসদ নামের চারটি দল রয়েছে।
দলগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সভাপতি হাসানুল হক ইনু; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), সভাপতি আ স ম রব এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), আহ্বায়ক আব্দুল মালেক।
নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২০১৬ সালে ‘ইনু’ নেতৃত্বাধীন জাসদে ভাঙন ধরে। ওই বছর দলটির কাউন্সিলে সংসদ সদস্য শিরিন আখতারকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বে একটি অংশ বেরিয়ে এসে একই নামে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেন। বর্তমানে ইনু ও আম্বিয়া, দুই অংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।
ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের দুই সদস্য একাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ অংশটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। সারাদেশে ৬০টি মতো জেলায় ইনুর জাসদের সক্রিয় কার্যক্রম রয়েছে বলে দাবি তাদের।
দলটির দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুষ্টিয়া, ফেনী, রংপুর, গাইবান্ধা ও মাগুরাসহ দেশের ২০টি জেলায় আমাদের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। এছাড়া সারাদেশের ৬০টি জেলায় জাসদের কমিটি আছে। অন্যদিকে, আম্বিয়া অংশের জাসদের চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল ২০১৯ সালে মারা যাওয়ায় বর্তমান সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও পাওয়া যায়নি। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হলেও এখনও সম্মেলন করতে পারেনি তারা।
এ বিষয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২০ সালে আমাদের সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে পারিনি। আশা করি ২০২২ সালে সম্মেলন করতে পারব। সারাদেশের ৩০টির অধিক জেলায় আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
একই কারণে ২০১৯ সালে রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডিও ভেঙে যায়। ওই বছর দলটির কাউন্সিলে রবের স্ত্রী তানিয়া রবকে শীর্ষপর্যায়ে আনা হচ্ছে— এমন গুঞ্জন শুরু হলে তা মেনে নিতে পারেননি তখনকার দলটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন। এ কারণে ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আ স ম রবদের বাদ দিয়ে আলাদা কনভেনশনের ঘোষণা দেন মালেক রতন।
জানা গেছে, গত জুন থেকে আমেরিকায় অবস্থান করছেন আ স ম রব ও তার স্ত্রী তানিয়া রব। তারা বিদেশে থাকলেও বিভিন্ন সময় তাদের নামে বিভিন্ন ইস্যুতে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। জাসদের এ অংশটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। সভাপতি রবের নির্বাচনী এলাকা লক্ষ্মীপুর, ঢাকা, বরিশাল ও ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে দেশের ৪০টির অধিক জেলায় কার্যক্রম থাকার কথা দাবি করা হয়েছে।
জেএসডি রব অংশের কমিটির দফতর সম্পাদক মো. আবুল মোবারক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারাদেশের ৪০টির মতো জেলায় আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে। দলের সভাপতি বিদেশে থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে দফতর থেকে তার নামে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। দলের সহ-সভাপতি তানিয়া রবসহ বেশ কয়েকজন নারীনেত্রী রয়েছেন। এছাড়া তানিয়া রবের নেতৃত্বে একটি মহিলা জোটও করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্ট্রোক করায় এখন আমি খুব বেশি মুভ করতে পারছি না। আমাদের একটা অস্থায়ী কার্যালয় আছে। করোনার কারণে সেখানে খুব বেশি যাওয়া হয় না। এ সময় তো সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ আছে। আমাদের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। সারাদেশের ১৫-২০টির মতো জেলায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আছে।
ওয়ার্কার্স পার্টি
১৯৮০ সালে হায়দার আকবর খান রনো, অমল সেন ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে গঠিত হয় ওয়ার্কার্স পার্টি। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে দলটিতে ভাঙন ধরে। অমল সেন ও নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে ১২ জন আলাদা হয়ে যান। অন্যদিকে, মেনন ও রনোসহ চারজনের ছোট একটি অংশ মূল অংশে থেকে যান। ওই বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের মজদুর পার্টির সাইফুল হক-রা ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন ও রনোর অংশে যোগ দেন।
১৯৯২ সালে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সাম্যবাদী দল ও ওয়ার্কার্স পার্টির সমন্বয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রশ্নে সৃষ্ট মতবিরোধের জেরে ২০০৪ সালের জুন মাসে সাইফুল হকের নেতৃত্বে একটি অংশ বের হয়ে আলাদা দল গঠন করে, যা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দুটি রাজনৈতিক দল। যদিও ২০১৯ সালের শেষের দিকে আদর্শগত বিরোধের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নুরুল হাসান, ইকবাল কবির জাহিদ, বিমল বিশ্বাস, মনোজ সাহাসহ বেশ কয়েকজন নেতা বেরিয়ে যান।
১৯৮০ সালে হায়দার আকবর খান রনো, অমল সেন ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে গঠিত হয় ওয়ার্কার্স পার্টি। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে দলটিতে ভাঙন ধরে। অমল সেন ও নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ১৬ সদস্যের মধ্যে ১২ জন আলাদা হয়ে যান
রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির চারজন সদস্য বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। মেননের স্ত্রীও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। সারাদেশের ৫০টির মতো জেলায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে বলে দাবি তাদের। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে। অন্য জেলাগুলোতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম থাকলেও তা যৎসামান্য। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি দলটির দশম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের ৩৮টি জেলায় আমরা কাজ করছি। আরও পাঁচটি জেলায় আমাদের যোগাযোগ আছে। বলা যেতে পারে, ৪০টির মতো জেলায় আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আছে। এর বাইরে আমাদের ১১-১২টি গণসংগঠন রয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিলের পর দলের আর কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি বলেও উল্লেখ করেন সাইফুল হক। বলেন, তিন থেকে চার বছরের মধ্যে কংগ্রেস করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও করোনা কারণে হয়নি।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
ভারতের বামপন্থী দল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (এসইউসিআই) নেতা শিবদাস ঘোষের চিন্তা-চেতনার আলোকে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। দুই বছর পর আদর্শগত বিরোধের জেরে বাসদ দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। এক অংশের নেতৃত্বে আসেন মাহবুব, অপর অংশের খালেকুজ্জামান।
ভাঙা বাসদের অংশগুলো আবারও ভাঙনের মুখে পড়ে। বর্তমানে ‘বাসদ’ নামের পাঁচটি দলের অস্তিত্ব রয়েছে। দলগুলো হলো- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান; বাসদ, আহ্বায়ক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী; বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান এবং বাসদ, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী।
দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিকভাবে কিছুটা শক্তিশালী খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন অংশটি। তারা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। যদিও ২০১০ সালের পর দলটির আর কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে খালেকুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর অত্যন্ত একবার রাজনৈতিক শিক্ষাসিরিজ ও সাংগঠনিক সভা হয়। সেখানে যদি মনে হতো দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবর্তন দরকার, তাহলে করা হতো। না হলে আগের কমিটি বহাল থাকত। এভাবে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলে। ২০১০ সালে দলের কনভেনশন (সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী বছর দলের জাতীয় কংগ্রেস করার ইচ্ছা আছে।
দলের তিনটি ফোরাম মিলিয়ে ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এ বামনেতা। বলেন, সারাদেশের ৪০টির মতো জেলায় আমাদের কার্যক্রম রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন নারী সদস্য রয়েছেন— দাবি করলেও তার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি।
২০১৩ সালে খালেকুজ্জামানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে ‘আদর্শচ্যুতির’ অভিযোগ এনে বাসদ থেকে বেরিয়ে আসেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি অংশ। গঠন করেন বাসদ (মার্কসবাদী) নামের নতুন দল। গত আট বছরে এ অংশটি দল পরিচালনার জন্য গঠনতন্ত্রই চূড়ান্ত করতে পারেনি। ২০২০ সালে এ অংশ থেকে বহিষ্কার করা হয় শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে। বহিষ্কৃত অংশটি পরে বাসদ নামে আরও একটি দল গঠন করে।
মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর মৃত্যুর পর বাসদের (মার্কসবাদী) ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ফখরুদ্দিন কবির আতিককে। দলের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে তাদের কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে, আগামী বছর (২০২২ সাল) সম্মেলন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বর্তমানে ‘বাসদ’ নামের পাঁচটি দলের অস্তিত্ব রয়েছে। দলগুলো হলো- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান; বাসদ, আহ্বায়ক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী; বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান এবং বাসদ, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুদ্দিন কবির বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’ দলের ৩০ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য কতজন আছেন— তারও সঠিক হিসাব জানাতে পারেননি তিনি। তবে, সারাদেশের ৩০টির মতো জেলায় তাদের যোগাযোগ রয়েছে— জানান ফখরুদ্দিন কবির।
এদিকে, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০২০ সালে বাসদ (মার্কসবাদী) থেকে শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়। পরে শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একই নামে আরেকটি বাসদের জন্ম হয়। যদিও সাংগঠনিকভাবে খুবই দুর্বল এ অংশটি।
নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করে শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আসলে আমরা একটা সমাজতান্ত্রিক পার্টি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এখনও সেটা চেষ্টার পর্যায়ে আছে। আলাপ-আলোচনা চলছে; দেখি, কীভাবে কী করা যায়। কিছু বিষয় ইতোমধ্যে ঠিক করেছি, কেন এ দলগুলো বারবার ভাঙে…! আরও সময় লাগবে। আমার সঙ্গে কিছু সদস্য আছেন, সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমানে ‘ন্যাপ’ নামে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল দুটি। তারা হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সভাপতি আমিনা আহমেদ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি। নিবন্ধনের বাইরে থাকা দলটি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ঐক্য ন্যাপ), সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য
পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গঠন করেন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। ১৯৬৭ সালে চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী মতবাদে বিভক্ত হয় ন্যাপ। মস্কোপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। যা পরে মোজাফফর ন্যাপ নামে পরিচিতি পায়।
বর্তমানে ‘ন্যাপ’ নামে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল দুটি। তারা হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সভাপতি আমিনা আহমেদ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি। নিবন্ধনের বাইরে থাকা দলটি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ঐক্য ন্যাপ), সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৮ সালে দলের সর্বশেষ বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর সম্মেলন হয়নি। ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে মাত্র ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে। করোনার মধ্যে মারা গেছেন চারজন। নারীনেত্রী আছেন চারজন।
এদিকে, ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আমিনা আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। পার্টির কার্যক্রমে তিনি সক্রিয় নন। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর আগে দলের সম্মেলন হলেও গঠনতন্ত্র পাস করা সম্ভব হয়নি। কোনো মিটিংও করা যায়নি। ফলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কত সদস্যবিশিষ্ট হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। বর্তমানে আমাদের এখানে ৫০-৬০ জনের মতো সদস্য রয়েছেন। নারী সদস্যও আছেন চারজনের মতো।
কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্মেলন করা যাচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
শেষ পর্ব : ধর্মভিত্তিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন?
এএইচআর/এমএআর