তরল স্বর্ণ জব্দ তালিকায় গোল্ডবার!
চলতি বছরের ২০ জুলাই প্রায় ১৪ কেজি তরল স্বর্ণসহ তিন যাত্রীকে আটক করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ (এপিবিএন)। যার আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে আট কোটি টাকা। পরে সংবাদ সম্মেলনে এপিবিএন দাবি করে, পেস্টের মতো একধরনের তরল পদার্থের সঙ্গে স্বর্ণের গুঁড়া মিশিয়ে তা পাচার করা হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবে ওই তিন যাত্রীকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। চোরাচালানের পণ্য জব্দ ও আসামি আটক পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।
কিন্তু বিতর্কের সূত্রপাত হয় তখনই যখন মামলার এজাহার ও জব্দ-তালিকা করা হয়। এজাহার ও জব্দ-তালিকায় ‘১৪ কেজি তরল স্বর্ণের’ পরিবর্তে ‘লম্বা, চতুর্ভুজ ও চাকতি আকারের ১৬টি গোল্ডবারের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওজনও দেখানো হয়েছে একই, অর্থাৎ ১৪ কেজি ৮৪৮ গ্রাম। প্রশ্ন উঠেছে, ‘তরল স্বর্ণবার’ কীভাবে ‘গোল্ডবারে’ রূপান্তরিত হয়। আবার ওজনও কীভাবে ঠিক থাকে!
এছাড়া জব্দ করা পণ্য ‘অনাবশ্যক বিলম্ব না করে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কাস্টম কর্মকর্তার হেফাজতে অৰ্পণ করতে’ আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও সেটিও যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় তখনই যখন মামলার এজাহার ও জব্দ-তালিকা করা হয়। এজাহার ও জব্দ-তালিকায় ‘১৪ কেজি তরল স্বর্ণের’ পরিবর্তে ‘লম্বা, চতুর্ভুজ ও চাকতি আকারের ১৬টি গোল্ডবারের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওজনও দেখানো হয়েছে একই, অর্থাৎ ১৪ কেজি ৮৪৮ গ্রাম। প্রশ্ন উঠেছে, ‘তরল স্বর্ণবার’ কীভাবে ‘গোল্ডবারে’ রূপান্তরিত হয়। আবার ওজনও কীভাবে ঠিক থাকে
যেখান থেকে বিতর্কের শুরু সেই এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ বলছে, যে তরল পদার্থের সঙ্গে স্বর্ণের গুঁড়া মেশানো হয়েছিল সেই তরল বাদ দিয়ে বিশুদ্ধ স্বর্ণ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তরল স্বর্ণকে বার (গোল্ডবার) আকারে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হকের কাছে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিতর্কের কিছু নেই। মামলার যে জব্দ তালিকা, সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। জব্দ তালিকায় দেখবেন ১০০ গ্রাম কোনো বারের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, লম্বা গোল্ডবার। কোনোটির দৈর্ঘ্য এক ফুটের কাছাকাছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এয়ারপোর্ট এরিয়ায় (বিমানবন্দর এলাকা) কাজ করি। যেটা বন্ডেড এরিয়া (শুল্কাধীন এলাকা)। চোরাচালানের জব্দ করা পণ্য আমরা কাস্টম কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে বাধ্য। আমি যে অবস্থায় গোল্ড (স্বর্ণ) পেয়েছি, তার তো সার্টিফিকেশন (প্রমাণপত্র) নাই। এটা ছিল পেস্টের মতো। যেখানে তরল পদার্থের সঙ্গে স্বর্ণের গুঁড়া মেশানো হয়েছে। আমরা যদি এটা কাস্টমে জমা দিতে চাইতাম, জমা দেওয়া যেত না। বাংলাদেশে যেসব হল-মার্ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা স্বর্ণ বিশুদ্ধকরণের কাজ করে, তাদের কাছ থেকে বিশুদ্ধ স্বর্ণ ও সার্টিফিকেটসহ কাস্টম অথবা থানায় জমা দিতে হবে। সে কারণেই আমরা এটা করেছি। আমরা তরল পদার্থ আলাদা করে বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে কাস্টমে জমা দিয়েছি এবং থানায় মামলা হয়েছে। এখানে যা যা হয়েছে, আইনের মধ্যে থেকেই করা হয়েছে।’
জিয়াউল হক বলেন, ‘এর আগেও জব্দ করা স্বর্ণের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সে কারণেই আমরা চেয়েছি ভবিষ্যতে জমা দেওয়া স্বর্ণের মান নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। কারও স্বার্থে আমরা কাজ করি না। আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু করা সম্ভব, আমরা সেটাই করব এবং করে যাচ্ছি।’
তবে কাস্টমের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্দর এলাকায় চোরাচালানের পণ্য জব্দের দায়িত্ব বর্তায় কাস্টম কর্তৃপক্ষের ওপর। তবে সেখানে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও এসব পণ্য জব্দের ক্ষমতা আছে। কাস্টম আইন অনুযায়ী, দেশের যেকোনো এলাকায় চোরাচালানের পণ্য জব্দ করলে বিলম্ব না করে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউসে জমা দিতে হয়। যা কাস্টম আইনের ১৬৮, ১৬৯ ও ১৭০ ধারায় উল্লেখ আছে। পুলিশের বিষয়টি ১৭০ ধারায় বর্ণিত আছে।
‘যতটুকু জানি এপিবিএন জব্দ করা স্বর্ণ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রাজধানীর তাঁতীবাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে স্বর্ণ আলাদা করে কাস্টমে জমা দেয়। অর্থাৎ, এখানে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এখানেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে’— বলেন ওই কাস্টম কর্মকর্তা।
তরল স্বর্ণ জব্দের পর সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হয়েছিল
চলতি বছরের ২০ জুলাই প্রায় ১৪ কেজি তরল স্বর্ণসহ তিন যাত্রীকে আটক করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ। ওই দিনই সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানায় সংস্থাটি।
এপিবিএনের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ২০ জুলাই ভোর ৫টায় তিন যাত্রী ঢাকায় অবতরণ করেন। বিমানবন্দরের কাস্টম এলাকা অতিক্রমের পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের গোয়েন্দা দল তাদের আটক করে। ওই তিন যাত্রী কাস্টম ফাঁকি দিতে বিশেষ পদ্ধতিতে স্বর্ণ গুঁড়া করে একধরনের তরলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে শরীরের বিভিন্ন অংশে বেঁধে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, টিকে ৭১২ ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর কাস্টমের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যাত্রী রাজিউল হাসান, মোহাম্মদ আমিন ও মোকারাম খাঁন বিমানবন্দরের ক্যানোপি এলাকায় এলে তাদের আটক করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রথমে তারা স্বর্ণ চোরাচালানের কথা অস্বীকার করেন। পরে তল্লাশি চালিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ কায়দায় বাঁধা অ্যাঙলেটের ভেতরে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে মোলায়েম পেস্টের মতো একধরনের তরলের উপস্থিতি লক্ষ করে আর্মড পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বিশেষ কৌশলে তারা স্বর্ণ চোরাচালানের চেষ্টা করছিলেন বলে স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে তখন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেছিলেন, কাস্টম ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে স্বর্ণ গুঁড়া করে একধরনের তরলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে এ স্বর্ণ বিক্রির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থলাভের আশায় এ পথে পা বাড়ান তারা। ইস্তাম্বুলের এক ভারতীয় নাগরিকের কাছ থেকে তারা এ স্বর্ণ সংগ্রহ করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। উদ্ধার করা স্বর্ণের আনুমানিক বাজারমূল্য আট কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিন আসামির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জব্দ-তালিকায় যা আছে
জব্দ-তালিকায় এক নম্বর আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনকে। তার বিষয়ে বলা হয়েছে, আমিন নিজ হাতে বের করে দেন সাত পিস লম্বা গোল্ডবার। যার ওজন যথাক্রমে ৮৫৯, ৯৩৩, ৮৪৪, ৯৮২.৫, ৮৯৬, ৩৩৯ ও ১৪৯.৫ গ্রাম। মোট গোল্ডবারের ওজন পাঁচ কোজি তিন গ্রাম। যার অনুমানিক বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে তিন কোটি এক লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এছাড়া আমিনের কাছ থেকে পুরাতন ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা।
জব্দ-তালিকায় এক নম্বর আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনকে। তার বিষয়ে বলা হয়েছে, আমিন নিজ হাতে বের করে দেন সাত পিস লম্বা গোল্ডবার। যার ওজন যথাক্রমে ৮৫৯, ৯৩৩, ৮৪৪, ৯৮২.৫, ৮৯৬, ৩৩৯ ও ১৪৯.৫ গ্রাম। মোট গোল্ডবারের ওজন পাঁচ কোজি তিন গ্রাম। যার অনুমানিক বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে তিন কোটি এক লাখ ৮৮ হাজার টাকা
দুই নম্বর আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. রাজিউল হাসান রিটুকে। তার কাছ থেকে জব্দ করা পাঁচ পিস লম্বা স্বর্ণবারের ওজন দেখানো হয়েছে যথাক্রমে ১৩৩২, ৯২০.৫, ১১৮৪, ৯০৯ ও ৫৫৩.৫ গ্রাম। মোট চার কেজি ৮৯৯ গ্রাম। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া তার কাছ থেকে জব্দ করা অন্যান্য জিনিসের মধ্যে রয়েছে তিনটি মোবাইল ফোন ও নিজ নামে তিনটি পাসপোর্ট।
তিন নম্বর আসামি হিসেবে মো. মোকারাম খাঁনের কাছ থেকে দুটি লম্বা গোল্ডবার, একটি চতুর্ভুজ গোল্ডবার ও চাকতি আকৃতির গোল্ডবার জব্দ করা হয়েছে। যার মোট ওজন চার কেজি ৯১৯ গ্রাম। বাজারমূল্য ধরা হয়েছে দুই কোটি ৯৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তার কাছ থেকেও দুটি মোবাইল ফোন ও পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে জব্দ-তালিকায় দেখানো হয়েছে।
জব্দ করা মোট ১৪ কেজি ৮৪৮ গ্রাম স্বর্ণের মোট মূল্য দেখানো হয়েছে আট কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা। তাদের ব্যবহৃত জব্দ করা জিনিসপত্রের মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার টাকা। জব্দ-তালিকায় সাক্ষী হিসেবে তিন কনস্টেবল মো. আজিজুল ইসলাম, সজিব কুমার সরকার ও মো. রুবেল আহমেদের নাম উল্লেখ করা রয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২০ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমনী টার্মিনালের ১নং ক্যানোপির কারপার্কিং এলাকা হতে আসামি মোহাম্মদ আমিন, মো. রাজিউল হাসান রিটু ও মো. মোকারাম খাঁন হতে মোট ১৪ কোজি ৮২১ গ্রাম গোল্ডবার জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য আট কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা
মামলার এজাহারে যা আছে
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘গত ২০ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমনী টার্মিনালের ১নং ক্যানোপির কারপার্কিং এলাকা হতে আসামি মোহাম্মদ আমিন, মো. রাজিউল হাসান রিটু ও মো. মোকারাম খাঁন হতে মোট ১৪ কোজি ৮২১ গ্রাম গোল্ডবার জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য আট কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা। আটককৃত মালামালের পরবর্তী আইনানুগ নিষ্পত্তির জন্য বিমানবন্দরস্থ কাস্টম গুদামে সংরক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হলো। গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় ২১ জুলাই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী এয়ারপোর্ট এপিবিএনের এসআই মো. জাহিদ মাহমুদ বাপ্পি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে এপিবিএন কাস্টমের সঙ্গে সমন্বয় করেই এয়ারপোর্টে কাজ করছে। তারা কোনো কিছু জব্দ করলে আমাদের কাছেই হস্তান্তর করে। সবসময় আমরাই যে চোরাচালানের পণ্য জব্দ করতে পারব— এমন কোনো কথা নাই। তাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে, তাহলে তারাও জব্দ করতে পারে। আমি মনে করি, আমাদের মাঝে বেশ ভালো সমন্বয় রয়েছে।
জব্দ করা পণ্য দ্রুত সময়ে নিকটস্থ কাস্টম হাউসে জমা দেওয়ার কথা। এক্ষেত্রে সেটি মানা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাস্টম অ্যাক্ট ১৬৮ অনুসারে, যেকোনো সংস্থাই চোরাচালানের পণ্য, যে-ই আটক করুক না কেন তা নিকটতম শুল্ক গুদামে জমা দিতে হয়। সকল সংস্থা সেটাই ফলো করে। গত ২০ জুলাই কী হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না। আমাদের অংশের বাইরে কী হয়েছে, সেটা বলতে পারব না। কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি চোরাচালানের পণ্য জমা দিতে আসে, সেটা আইন অনুযায়ী আমরা জমা নেই।’
এর আগে, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হকও বলেছেন, ‘এখানে যা কিছু হয়েছে, আইনের মধ্যে থেকেই করা হয়েছে।’ আইনে কী বলা আছে-
কাস্টম আইন
কাস্টম আইনের ১৬৯ ধারায় জব্দ করা পণ্যের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি উল্লেখ আছে। সেখানে উপধারা- ১ এ বলা হয়েছে, ‘এ আইনের অধীনে বাজেয়াপ্তযোগ্য হওয়ার কারণে আটককৃত সকল পণ্য অনাবশ্যক বিলম্ব না করিয়া উহা গ্রহণ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কাস্টম কর্মকর্তার হেফাজতে অৰ্পণ করতে হবে।’
উপধারা- ২ এ বলা হয়েছে, ‘যদি উক্তরূপ কোনো কর্মকর্তা নিকটে না থাকে তাহলে উক্ত সকল পণ্য আটককৃত স্থানের নিকটতম কাস্টম হাউসে জমা প্রদানের জন্য বহন করতে হবে।’
কাস্টম আইনের ১৬৯ ধারায় জব্দ করা পণ্যের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি উল্লেখ আছে। সেখানে উপধারা- ১ এ বলা হয়েছে, ‘এ আইনের অধীনে বাজেয়াপ্তযোগ্য হওয়ার কারণে আটককৃত সকল পণ্য অনাবশ্যক বিলম্ব না করিয়া উহা গ্রহণ করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কাস্টম কর্মকর্তার হেফাজতে অৰ্পণ করতে হবে
উপধারা- ৩ এ বলা হয়েছে, ‘যদি সুবিধাজনক দূরত্বে কোনো কাস্টম হাউস না থাকে, তাহলে উক্তরূপ আটককৃত পণ্য জমা প্রদানের জন্য কমিশনার অব কাস্টম কর্তৃক নিয়োগকৃত নিকটতম স্থানে উক্ত পণ্য জমা করতে হবে।’
উপধারা- ৪ এ বলা হয়েছে, ‘যদি কমিশনার অব কাস্টম অথবা তাহার দ্বারা এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কাস্টম কর্মকর্তার বিবেচনায় উক্ত কোনো পণ্য পচনশীল হয় তাহলে তিনি উহা ধারা ২০১ এর বিধানাবলী অনুসারে অবিলম্বে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করবেন এবং মামলার ন্যায় নিৰ্ণয়ন অনিষ্পন্ন থাকা পর্যন্ত বিক্রয়লব্ধ অর্থ জমা রাখার ব্যবস্থা করবেন।’
কাস্টম আইনের ১৭০ ধারায় পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, ‘বাজেয়াপ্তযোগ্য কোনো জিনিসপত্র যখন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক চোরাই মাল সন্দেহে জব্দ করা হয় তখন তিনি যে থানায় অথবা আদালতে উক্ত জিনিসপত্র চুরি হওয়া অথবা উহাদের গ্রহণ করা সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করবেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রে জিনিসপত্র জব্দকারী পুলিশ কর্মকর্তা উহাদের জব্দকরণের এবং আটক রাখার একটি লিখিত নোটিশ নিকটতম কাস্টম হাউসে প্রেরণ করিবেন। জিনিসপত্র নিকটতম কাস্টম হাউসে বহন এবং জমা দানের ব্যবস্থা করবেন।’
এখানে ‘আইনের মধ্যে থেকে সব করা হয়েছে’— এমন দাবি করলেও বাস্তবে সেটি করা হয়নি।
আরএম/এইচকে/এমএআর