স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, জাহাজে সাত খুনসহ আলোচনায় যত ঘটনা
আর মাত্র কিছু সময়, এরপরই শুরু হবে নতুন বছর ২০২৫-এর যাত্রা। নতুন বছরে নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা সবার। অন্যদিকে, কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে থাকা ২০২৪ সাল জন্ম দিয়েছে নানা ঘটনার। এসব ঘটনা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে। ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ জেলার আলোচিত ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আয়োজন।
কুমিল্লা
বছরের শুরুতে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচনের উত্তেজনা ছিল। এরপর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আঁচ। গত ১১ জুলাই কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জের ঘটনা আন্দোলনের গতি বাড়িয়ে দেয়। ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারসহ হেভিওয়েট নেতাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সরকার পতনের পর বাহারের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন কয়েকজন বিএনপি নেতা, যা সমালোচনার তৈরি করে দারুণভাবে।
গত ২২ আগস্ট ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডম্বুর লেকের বাঁধ খুলে দেওয়ার পর কুমিল্লার ১৪টি উপজেলা বানের জলে ভেসে যায়। তবে বরুড়া, চান্দিনা এবং মেঘনা উপজেলায় বন্যার আঁচ লাগেনি। বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নষ্ট হয়েছে ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির ফসল। ভয়াবহ এই বন্যায় জেলায় মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়। বিধ্বস্ত হয়েছিল হাজার হাজার ঘরবাড়ি।
২৬ নভেম্বর জেলার বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে সাতজনের মৃত্যু হয়। অরক্ষিত রেলক্রসিং দিয়ে যাত্রী পারাপারের সময় দ্রুতগতির সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এতে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়, হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণ যায় আরও তিনজনের। নিহতের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারীও ছিলেন।
বছরের শেষদিকে দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার একটি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার ঘটনা। ২২ ডিসেম্বর দুপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করেন স্থানীয় কয়েকজন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার জামায়াতের সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একদল দুর্বৃত্ত এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া আব্দুল হাই কানু বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে মারধর ও মানহানির মামলা দায়ের করেন।
খাগড়াছড়ি
স্থানীয় থেকে জাতীয়, সাম্প্রদায়িক, রাজনৈতিক সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেটেছে খাগড়াছড়ির ২০২৪ সাল। বিদায় বছরটির শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন, খাগড়াছড়ির সাবেক সংসদ সদস্যের পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী হওয়া এবং তার ভিডিও স্ক্যান্ডাল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
২০২৩ সালে আঞ্চলিক ভ্রাত্রিঘাতি সংঘাতে পানছড়িতে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের শীর্ষ চার নেতাকে হত্যার রেশ পড়ে ২০২৪ সালে। দীর্ঘসময় ধরে পানছড়ি উপজেলা বাজার বয়কট, সন্ধ্যার পর প্রবেশ করতে না পারার বিষয়টি জেলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২৪ জানুয়ারি মহালছড়িতে প্রসীত গ্রুপের দুই সমর্থককে হত্যা রেষারেষি আরও বাড়িয়ে তুলে। বছরের শেষদিকে ৩০ অক্টোবর পানছড়ির লতিবানে তিনজন এবং ১০ নভেম্বর ইউপিডিএফ’র আরেক শীর্ষ নেতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
গত কয়েক বছরের মতো এবারও রামগড় স্থলবন্দর চালুর আলোচনা নতুন মাত্রা পায়।
জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সারা দেশের মতো খাগড়াছড়িতেও তার প্রভাব পড়ে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবেশ পরিবর্তন হতেই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে খাগড়াছড়ি। তিনটি ভয়াবহ বন্যায় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্ধ হয় জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
১৮ সেপ্টেম্বর শহরের পানখাইয়া পাড়া এলাকায় মামুন (৩০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার জেরে জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দীঘিনালায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বিক্ষোভে গুলি ছুড়লে লারমা স্কোয়ারে ৫০টির অধিক দোকানে আগুন দেওয়া হয়।
১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে সোহেল রানা নামের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার জেরেও পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হামলা-গুলিতে চার শিক্ষার্থী নিহতসহ ২৫৮ জন আহত হন। ৪ আগস্ট সকাল থেকে দিনব্যাপী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে তারা মারা যান। একই দিন বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে আরও সাতজন মারা যান। পরদিন সরকার পতনের পর রামগঞ্জ থানা ও খান টাওয়ারে আগুনসহ পৃথক ঘটনায় যুবলীগ নেতাসহ তিনজন মারা যান।
নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন সাদ আল আফনান, সাব্বির হোসেন, কাউছার হোসেন ও ওসমান গণি। লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকায় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওইদিন গুলিবর্ষণকারী যুবলীগ নেতা টিপু তার আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো প্রশাসনের কাছে জমা দেননি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ফেসবুকে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের ভিডিও ছড়িয়ে আলোচনার ঝড় তোলেন শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি টিপু। তবে কয়েক দিন ধরে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত তার দুটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিগুলো ঢাকার উত্তরা এলাকার বলে প্রচার করা হয়। এছাড়া ২ আগস্ট লক্ষ্মীপুর চক বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে টিপু মুসল্লিদেরকে ধাওয়া করেন। তখন ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৯০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
৪ আগস্টের পর থেকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আত্মগোপনে রয়েছেন। ফেসবুকে তাদেরকে সরব হতে দেখা যায়নি।
এদিকে ২০ আগস্ট থেকে লক্ষ্মীপুরে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এরপরই নোয়াখালীর উজানের পানি ঢুকলে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র বন্যার পানিতে ডুবে যায়। এ বন্যায় প্রায় দেড় মাস মানুষ দুর্ভোগে ছিল। এতে ৪০ হাজার ৮০১টি বসতঘর ক্ষতি হয়ে ৩৮৬ কোটি টাকা, বন্যায় কৃষিখাতে ২২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, প্রাণিসম্পদ খাতে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, মৎস্যখাতে ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি ও ১০৬১ কিলোমিটার এলজিইডির সড়ক এবং ১৪৯টি পুল ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অন্যদিকে গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হামলার ঘটনায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মমিন পাটোয়ারী (৫৪) গত ৩০ আগস্ট মারা যান। তিনি রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
গত ২৭ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক রবিনের মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে চার সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। ২২ ডিসেম্বর আদালত সাংবাদিকদের জামিন দেন।
১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক। পরে ১৫ মে তারা বাড়িতে ফেরেন।
ফেনী
জুলাই-আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনীর জনপদ। তারমধ্যে ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। ভয়াবহ এ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ জন। নিহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় মিলেছে। বাকি ৯ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বন্যায় জেলায় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছিল শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে। ছয় উপজেলা নিয়ে নানা খাতে সমৃদ্ধ ৯২৮ দশমিক ৩৪ বর্গ কিলোমিটারের এ জেলায় আগামীর খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
এমন সহিংসতা দেখেনি কেউ
৪ আগস্ট, সারা দেশের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল ফেনী। সেদিন সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। দুপুর ২টার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ট্রাংক রোড থেকে মহিপাল ফ্লাইওভার এলাকায় গিয়ে অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এ গোলাগুলির ঘটনায় কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। কেউ বলছেন ১১ জন, কারও মতে ১৭ জন। তবে নিহতের ব্যাপারে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৮ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি।
নাশিতের শোকে ‘কাঁদে’ ফেনী
ফেনী পৌরসভার অ্যাকাডেমি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকত চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ আল মাঈন নাশিত (১০)। প্রাণচাঞ্চল্য শিশু নাশিত ছিল পরিবার ছাড়িয়ে ওই এলাকার সকলের আদরের। গত ৮ ডিসেম্বর কোচিং শেষ করে স্থানীয় মসজিদে নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। পরবর্তী নাশিতের খোঁজ পেতে তৎপর হয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের সবাই। চার দিন ধরে তাকে ফিরে পেতে অধীর অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। কিন্তু সে ফিরলো ঠিকই, তবে জীবিত নয়; লাশ হয়ে। ১২ ডিসেম্বর দুপুরে শহরতলীর দেওয়ানগঞ্জ রেললাইন সংলগ্ন ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর থেকে ফুটফুটে এ শিশুটি হত্যায় শুধু স্বজনরা নয়, কেঁদেছে ফেনীবাসীও। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পরদিন ১৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন কিশোর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপহরণের ঘটনা জানাজানি হলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তারা স্কুল শিক্ষার্থী নাশিতকে হত্যা করে বলে জানায়।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে প্রায় ৪৭ বছর ধরে পুকুরে অবরুদ্ধ একটি কুমির উদ্ধার করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরহাজারী গ্রামের কুমিরবাড়ির পুকুর থেকে বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল কুমিরটি উদ্ধার করে।
সুবর্ণচরে ভোটের দিন মা-মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে একই উপজেলার একটি ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকে মা ও মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সিকে (৫০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধর্ষণ করতেই চুরির ঘটনা সাজিয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সি।
৪০০ কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়নের বাড়ি নোয়াখালী
জুলাইয়ের শুরুতে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজের বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কে সেই পিয়ন, এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা–কল্পনা। তবে অবশেষে ৪০০ কোটি টাকার মালিক সেই পিয়নের পরিচয় জানা যায়। তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায়। তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালীর চাটখিল ও সোনাইমুড়ীতে জাহাঙ্গীরের ছিল নিজস্ব বলয়। পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা পেতে লড়াই করেছেন। নৌকা না পেয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও শেষে প্রত্যাহার করে নেন প্রার্থিতা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ মুহূর্তে তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
বন্যায় ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে বাংলাদেশের ১১টি জেলা প্লাবিত হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোয়াখালী জেলার মানুষ। এতে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে ৪৮ শতাংশ বাড়ি-ঘর। এ ছাড়া জেলার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সুবিধা শতভাগ অচল হয়ে পড়ে।
নোয়াখালীতে দুই এমপির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে নোয়াখালীর দুই সংসদ সদস্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া একাধিক সরকারি কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ৪ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। জানা যায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পৌরসভা কার্যালয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস ও কৃষি অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পৌরসভা কার্যালয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে রাখা দুটি গাড়ি। এ ছাড়া নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম ও নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
স্বনামে বিভাগ চায় নোয়াখালীবাসী
কুমিল্লার সঙ্গে নয়, স্বনামেই নোয়াখালীকে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর নোয়াখালীবাসী। দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ চেয়েছে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ ও সম্মিলিত নোয়াখালীবাসী।
আরও পড়ুন
চাঁদপুর
গত ২৩ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাটের পশ্চিম পাড় এলাকায় মেঘনা নদীতে থেমে থাকা একটি জাহাজে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। আহত তিনজনের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজন মারা যান। ফলে ওই জাহাজে থাকা মোট সাতজনের মৃত্যু হয়। বেঁচে থাকা আহত জুয়েলের গলাকাটা থাকায় তিনি কথা বলতে পারেননি। তবে জুয়েল তাদের সঙ্গে ইরফান নামে আরেকজন ছিল বলে লিখে জানায়। হাইমচর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন জাহাজটির মালিক মাহবুব মোর্শেদ। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, জাহাজটিতে ৯ জন স্টাফ ছিলেন। এ ঘটনায় আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফানকে র্যাব বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নিহতরা হলেন— নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এগারনলি এলাকার আবেদ মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন (৪০), একই উপজেলার পাংখারচর উত্তর এলাকার মাহবুবুর রহমান মুন্সীর ছেলে আমিনুর মুন্সী (৪১), ফরিদপুরের কোতোয়ালি উপজেলার জুয়াইর এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), একই এলাকার মৃত আতাউর রহমানের ছেলে শেখ সবুজ (২৭), মাগুড়ার মহম্মদপুর উপজেলার চর বসন্তপুর এলাকার আনিছ মিয়ার ছেলে মো. মাজেদুর (১৮), একই উপজেলার পলাশবাড়িয়ার দাউদ হোসেনের ছেলে মো. সজীবুল ইসলাম (২৯) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন মুন্সীর ছেলে রানা কাজী (৩২)। তারা সবাই জাহাজের স্টাফ।
‘বালুখেকো’ খ্যাত চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে গণপিটুনিতে নিহত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল চাঁদপুর। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারে পতন পর উল্লাসে রাজপথে নামেন সর্বস্তরের জনতা। এ সময় সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত ‘বালুখেকো’ খ্যাত চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান গণপিটুনিতে নিহত হন। এ ছাড়া কচুয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদও গণপিটুনিতে নিহত হন। ফরিদগঞ্জে বিক্ষুব্ধরা থানায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত নামে এক ছাত্রনেতা নিহত হন।
ভয়াবহ বন্যা
২৩ আগস্ট থেকে চাঁদপুরের ছয় উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও উজানের পানি নেমে বন্যা সৃষ্টি হয়। উল্টো বানের পানিতে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, কচুয়া, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ এবং শাহরাস্তি উপজেলার লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হন। ভারী বৃষ্টিতে জেলার পৌরসভা এবং ইউনিয়নের মধ্যে ৬৪টি স্থানে জলাবদ্ধতা ও প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মৎস্য, কৃষি ও প্রকৌশলী খাতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। জেলায় ৭ হাজার ২৩টি পরিবার পানিবন্দি এবং ১ লাখ ২১ হাজার ২৮৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৬২টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ৮০১টি পুকুর-দিঘি ও ৫৫টি ঘের মাছ ও পোনা ভেসে যায়। ৩২ হাজার হেক্টর জমির আংশিক এবং ১৮ হাজার ৭৫৩ হেক্টর জমির ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। এতে সাড়ে ৪৫ হাজার কৃষকের প্রায় ৭৯ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসামের ডাকাতিয়া নদী থেকে বন্যার পানি ঢুকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলার জনপদ ডুবে যায়।
পূবালী ব্যাংক পিএলসি চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দীর বিরুদ্ধে দুই গ্রাহকের কাছ থেকে দুই কোটি ৫১ লাখ টাকা নিয়ে উধাওয়ের অভিযোগ উঠে। তিনি ৪ এপ্রিল ব্যাংক থেকে নিখোঁজ হন। অধিক মুনাফার কথা বলে কচুয়ার আশ্রাফপুর এলাকার দলিল লেখক মারুফের কাছ থেকে নেওয়া নগদ ৭৫ লাখ টাকা এবং ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার আকবর হোসেন লিটনের কাছ থেকে কয়েক ভাগে নেন নগদ ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
ঘুষের টাকা গুনে নেওয়া ‘সুন্নত’
ঘুষের টাকা গুনে নেওয়া ‘সুন্নত’ বলায় হাজীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজুর রহমানকে বরখাস্ত হয়। একটি দোকানে বসে সাদা পোশাকে এসআই মাহফুজুর রহমানের ঘুষের টাকা গুনে গুনে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে তাকে ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত’ বলতে শোনা যায়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কক্সবাজার
২০২৪ সালে কক্সবাজার জেলায় অপহরণের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। ডিসেম্বরের আগে গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গাসহ ১৫১ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার জানিয়েছে। এ ছাড়া বাকিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করে। আর সবশেষ ৩০ ডিসেম্বর টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকা থেকে ১৯ জন এবং ৩১ ডিসেম্বর সকালে টেকনাফ হোয়াইক্ষ্যং-শামলাপুর সড়ক অবরোধ করে আরও ৭ কৃষককে অস্ত্রের মুখে জিম্মির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৮ বনকর্মীকে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার করে র্যাব। বাকিদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছাত্রলীগ নেতার ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা। ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছরের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের বিজয়ী মিছিলে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয় তার সংগঠনের কর্মী আশরাফুল ইসলাম ইজাজ ওরফে আয়াশ আহমেদকে প্রকাশ্যে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার তিন দিন পর নেত্রকোণার আটপাড়ার কুতুবপুর গ্রাম থেকে জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।
আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক, তার স্ত্রী স্বপ্না (৩৫), দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফিয়া (১৫) ও সৈয়দা নূর (১২) এবং ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৭) মারা যান। ঘটনার ২৫ দিন আগে ইতালি থেকে দেশে আসেন মোবারক। তার স্ত্রী-সন্তানরা ঢাকার মগবাজার এলাকায় বাসায় করতেন। তারা আগুন লাগা ভবনটিতে অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। সেখানেই আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুরো সরাইল উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
মালয়েশিয়ার সড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারজনের মৃত্যু
গত ১১ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আপন দুই ভাইসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের চারজন নিহত হন। নিহতরা হলেন জেলার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের এক্তারপুর গ্রামের করিম সর্দারের দুই ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (২৫) ও হাফেজ মো. হুমায়ূন ওরফে সোহেল (২৭) এবং একই এলাকার মো. শাহাবুদ্দির মিয়ার ছেলে মো. সোহেল (২৫), মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আশকর আলী (৪০)।
ঈদের আগের দিন তিন শিশুর মৃত্যু
চলতি বছর ঈদুল আজহার আগের দিন ১৬ জুন পৃথক ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো- আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে জায়েদ মিয়ার ছেলে তাইয়েব মিয়া (৭), সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের বাকাইল গ্রামের শামীম মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (৯) এবং একই গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে নাঈম মিয়া (১১)।
শিশু তাইয়েব মিয়া স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র। পরিবারের সবার অগোচরে বাড়ির পাশে পুকুরে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। আর সদর উপজেলার মজলিশপুর বাকাইল গ্রামের শিশু নয়ন ও নাঈম সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। ঈদের আগের দিন দুপুরে অনিরাপদভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া তারে বাচ্চু মিয়ার বাড়ির একটি টিনের ঘর বিদ্যুতায়িত ছিল। নয়ন ও নাইম ঘরটি স্পর্শ করতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়।
নারীর কপালে এসআইয়ের পিস্তল ঠেকানোর ঘটনায় তোলপাড়
১২ মে আসামি ধরতে গিয়ে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে নারীর কপালে ঠেকানোর ঘটনায় তোলপাড় ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের থলিয়ারা গ্রামে স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে প্রবাসীকে ধরতে গিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিমসহ আরও কয়েকজন এমন ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
স্বামীর কাছ থেকে টাকা আদায়ে শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন মা
২৪ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কুন্ডা গ্রামের ইব্রাহিমপুরে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিতে গাছের সঙ্গে নিজের শিশু সন্তানকে নির্মমভাবে বেঁধে রাখেন মা। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা জন্ম দেয়। তবে বিষয়টির ক্ষেত্রে আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পারিবারিক সালিশের মাধ্যমে সমাধান করা হয়।
শারমীনের সঙ্গে নৃশংসতা
২৪ ডিসেম্বর আখাউড়া উপজেলার গাজীর বাজার এলাকায় আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভুঁইয়ার ছেলে ফারহান একই এলাকার শারমিন বেগম (৪৭) নামের এক মধ্যবয়সী নারীর মাথা কেটে হত্যার পর তার দেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। আর মাথাটি ফারহানের বাড়ির পাশের একটি জমিতে পুঁতে ফেলা হয়।
শারমিনের সঙ্গে এমন নৃশংসতার কারণ জানিয়ে ফারহান জবানবন্দিতে বলেন, শারমিন তাকে তাবিজ করেছেন এবং তার সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র করছেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ফারহান এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। প্রথমে বাবার অসুস্থতার কথা বলে তিনি শারমিনকে ডেকে নেন। এরপর ছুরি দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেন। পরে পাশের জমিতে শারমিনের মাথা পুঁতে রাখেন এবং শরীরের বাকি অংশ একটি কম্বলে পেঁচিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন।
বান্দরবান
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে উচ্ছেদ করতে দেশটির সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিসহ আরও কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এতে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তেও যুদ্ধে ছড়িয়ে পড়ে। ভারী মর্টার শেল, গুলির শব্দে আতঙ্কে সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে বসবাসকারী জনসাধারণ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া মিয়ানমারের আরাকান বিদ্রোহীদের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকারের সেনাবাহিনীসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কয়েক শতাধিক সদস্য ও বেসামরিক নাগরিক নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও টেকনাফের উখিয়া সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে সমুদ্রপথে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হয়।
সীমান্তে মিয়ানমার জান্তা ও বিদ্রোহীদের গোলাগুলিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে, মিয়ানমার থেকে ছোড়া অবিস্ফোরিত মর্টার শেল আর পুঁতে রাখা স্থল মাইনের বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
পর্যটন খাতে ভোগান্তি
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে গত বছরের শুরু থেকে ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তাজনিত কারণে দফায় দফায় জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি উপজেলায় পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বান্দরবানে সব পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষণের জন্য জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে প্রাথমিকভাবে জেলা সদর, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলাসহ চারটি উপজেলায় পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন। পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচিসহ তিনটি উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ হতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। জেলায় আগত পর্যটকদের স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণের জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা
২০২৪ সালে বান্দরবানে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে ২০ জানুয়ারি রুমা উপজেলার কেওক্রাডং সড়কে পর্যটকবাহী একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নিহত হন ফিরোজা খাতুন (৫০) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী জয়নাব খাতুন। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরও ১১ জন।
বেনজীরের সম্পত্তি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে
২০২৪ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের তথ্যচিত্র উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে একটি। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুঁজে বের করার পর বান্দরবানেও বিপুল সম্পত্তির খোঁজ মেলে। বান্দরবানের সুয়ালকে ৫০ একর ও লামায় প্রায় ১০০ একর সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন সুয়ালকের ২৫ একর সম্পত্তির নথি খুঁজে পায়। যার প্রেক্ষিতে সকল সম্পত্তি আয়ত্তে নেয় বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
ঢাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উত্তাপ পাহাড়ে
২০২৪ সালের জুলাইয়ের কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার এক দাবি সরকার পতনের আন্দোলনে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকার রাজপথের উত্তাপ ছড়িয়েছে পাহাড়েও, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বান্দরবানে আনন্দ মিছিল করে হাজারো জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল গুঁড়িয়ে দেয়, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে, জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের বাসায় হামলা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। হামলা চালানো হয় তৎকালীন সময়ে বান্দরবান থেকে সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির বাসায়। সরকার পতনের পর আতঙ্কিত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে গেলেও সাবেক এমপি বীর বাহাদুর উশৈসিং এখনো বান্দরবান সদরে তার নিজ বাড়িতেই আছেন।
রাঙামাটি
২৪ এপ্রিল রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের উদয়পুর ৯০ ডিগ্রি এলাকায় সীমান্ত সড়কের কাজে নিয়োজিত একটি ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৯ শ্রমিক নিহত হন। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ১০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই ৬ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। পরে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আরও তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এই দুর্ঘটনায় নিহতদের বিআরটিএর পক্ষ থেকে প্রতিজনকে ৫ লাখ ও আহতদের ২ লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়।
১৫ জুন রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়। উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের করলাছড়ি চেয়ারম্যান টিলার মো. ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনা বেগম নিজ বাড়িতে এবং একই উপজেলার মাইনি বাজার থেকে বাজার শেষে ফেরার পথে কাপ্তাই হ্রদে বোট চলমান অবস্থায় বজ্রপাতে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
৭ আগস্ট পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সংগঠক মাইকেল চাকমা দীর্ঘ ৫ বছর ৩ মাস পর অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পান। ৭ আগস্ট ভোরে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তিনি গুমের শিকার হন।
৬ অক্টোবর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে প্রথমবারের মতো তিন পার্বত্য জেলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘসহ ১৫টি ভিক্ষু সংগঠন। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে রাঙামাটি রাজ বনবিহার।
১৭ অক্টোবর দীর্ঘ ৫৬ দিন কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে থাকার পর ভেসে উঠে সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন হাসিব আল আমিন (নোয়াখালী), তারেক চৌধুরী (ফেনী), হাসান মাহমুদ শাকিল (লক্ষ্মীপুর), মিশু মল্লিক (রাঙামাটি), মাজহারুল করিম অভি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সাইদুল ইসলাম ফরহাদ (কক্সবাজার), আনোয়ারুল হক (চাঁদপুর), মো. শাহজাহান (খাগড়াছড়ি) ও শহীদুল ইসলাম (বান্দরবান)।
এমজেইউ