ঢাবিতে ভর্তি : তবুও বহাল পোষ্য-খেলোয়াড় কোটা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তিতে অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও ফি জমা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে, আবেদন প্রক্রিয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোটার ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থি উল্লেখ করে তা বাতিলে সুপারিশ করা হলেও বহাল আছে ‘অযৌক্তিক’ ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা। এই দুই কোটাও ‘সংবিধানবিরোধী এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়বিরোধী’— উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে সার্বিক বিষয়ে ২৭ অক্টোবর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কোটা সংস্কার নিয়ে কথা বলেন অধিকাংশ সদস্য। কোটা সংস্কারে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তবে, কমিটির কাজ শুরুর আগেই গত ৪ নভেম্বর থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন ও টাকা জমা কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থি উল্লেখ করে তা বাতিলে সুপারিশ করা হলেও বহাল আছে ‘অযৌক্তিক’ ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা। এই দুই কোটাও ‘সংবিধানবিরোধী এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়বিরোধী’— উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা
এদিকে, গত ৪ নভেম্বর ঢাকা পোস্টে ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা রেখেই ঢাবির ভর্তি কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৫ নভেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বাতিলের সুপারিশ করে কোটা রিভিউ কমিটি।
তবে, সেই সভায় ‘অযৌক্তিক’ পোষ্য ও খেলোয়াড় কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বাতিলের সুপারিশের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পোষ্য কোটাও বাতিলের দাবি ওঠে।
আরও পড়ুন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে যত কোটা
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ছয় ধরনের কোটা রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি প্রোগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা (সন্তান) কোটায় ৫ শতাংশ, ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটায় এক শতাংশ, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা এক শতাংশ, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় কোটা এক শতাংশ, প্রতিবন্ধী (দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ, শারীরিক, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজ-অর্ডার্স/হিজড়া) কোটায় এক শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে।
এ ছাড়া, গত বছর খেলোয়াড় কোটায় ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়। যা এবারও বহাল থাকবে।
ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আবেদনের পঞ্চম ধাপে আবেদনকারী পরবর্তী পাতায় প্রদর্শিত ছবি-৫ এ অনুরূপ ফর্মে তার পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভাগীয় শহর বেছে নিবে এবং শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোটার তথ্য জানাবে। আবেদনকারী শিক্ষার্থী যদি কোটার জন্য নির্ধারিত আসনে আবেদন করতে চায় তবে প্রযোজ্য কোটার ঘরে ক্লিক করে নিচের কাজ করবে— বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইডি নম্বর দেবে এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের পে স্লিপ আপলোড করবে।’
ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটায় কোনো শিক্ষার্থীর বাবা অথবা মা বা উভয়েই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থাকেন তাহলে সেই শিক্ষার্থী এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। তবে, একজন উচ্চপদস্থ শিক্ষক বা কর্মকর্তার সন্তান কেন এই সুযোগ পাবেন, তা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। যেখানে সাধারণ গরিব কৃষকের সন্তান কোটা বৈষম্যের ফলে এক নম্বরের জন্য ভর্তির সুযোগ পান না, সেখানে নামেমাত্র নম্বর পেয়েও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা ভর্তি হয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন
১৯ বছর পর খেলোয়াড় কোটা চালু, লাগে না লিখিত পরীক্ষা
১৯ বছর পর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পুনরায় চালু হওয়া খেলোয়াড় কোটায় আবেদনকারীদের অন্য প্রার্থীদের মতো ইউনিটভিত্তিক লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তারা মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নিশ্চিত করতে পারবেন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এই কোটায় পরীক্ষা ছাড়াই ৪৯ জন এবং ২০২৩-২৪ সেশনে ৬০ জনকে ভর্তি করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি-ইচ্ছুক প্রার্থীদের জাতীয় দলের বর্তমান খেলোয়াড় হতে হবে। এ ছাড়া, প্রার্থীদের গত তিন বছরের মধ্যে জাতীয় দল, জাতীয় ‘এ’ দল এবং বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব ২৩, ২০, ১৯, ১৭ কিংবা ১৬ দলের সদস্য হয়ে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।
ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটায় কোনো শিক্ষার্থীর বাবা অথবা মা বা উভয়েই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থাকেন তাহলে সেই শিক্ষার্থী এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। তবে, একজন উচ্চপদস্থ শিক্ষক বা কর্মকর্তার সন্তান কেন এই সুযোগ পাবেন, তা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। যেখানে সাধারণ গরিব কৃষকের সন্তান কোটা বৈষম্যের ফলে এক নম্বরের জন্য ভর্তির সুযোগ পান না, সেখানে নামেমাত্র নম্বর পেয়েও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা ভর্তি হয়ে থাকেন
অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, সাঁতার, টেনিস, দাবা, ক্যারমসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ১ থেকে ৫ এর মধ্যে থাকা প্রার্থীরাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখে ভর্তি-ইচ্ছুক প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ২৩ বছর হতে হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিটভিত্তিক ভর্তির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, খেলাধুলার মানোন্নয়ন, মানসম্মত খেলোয়াড় তৈরি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরির লক্ষ্যে খেলোয়াড় কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি ক্রিকেট বা ফুটবল ক্লাবও এক বছরে এত সংখ্যক জাতীয় দলের বা জাতীয় মানের খেলোয়াড় নেয় না, যত সংখ্যক খেলোয়াড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হয়।
কোটা-ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে বৈষম্য ও অনিয়মের অভিযোগ
ভর্তি কার্যক্রম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজাতি বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা, হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় কোটা, প্রতিবন্ধী কোটায় প্রতি বছর ন্যূনতম আসনও পূর্ণ হয় না। তারা সর্বসাধারণের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় এসব কোটা নিয়ে কেউ কখনও দ্বিমত পোষণ করেননি। কিন্তু পোষ্য কোটায় অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীরা পাস নম্বরও তুলতে পারেন না। কিন্তু তারা ভর্তির সুযোগ পান। অনেক সময় চান্স পাওয়ার পর সিরিয়াল নিচের দিকে থাকলেও কোটার কারণে অনেকে ভালো সাবজেক্ট পেয়ে যান।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে বলে অনেকে দাবি করেন।
খেলোয়াড় কোটার ক্ষেত্রেও প্রায় একই বিষয় প্রযোজ্য। তাদের নিয়মিত দেশ-বিদেশে টুর্নামেন্ট থাকায় তারা ক্লাস করেন না। এমনকি অধিকাংশ সময় পরীক্ষায় বসার সময় ও সুযোগ পান না। আবার দেখা যায়, পরীক্ষা দিলেও তারা পাস নম্বর তুলতে পারেন না। তবুও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীকে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন
ন্যূনতম পাস নম্বর ছাড়া শিক্ষার্থীকে কোটার সুবিধা দেওয়া ঠিক নয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোটাগুলোর স্পষ্ট ও বিস্তারিত সংজ্ঞায়ন জরুরি, যেন কোনো রকম অনিয়মের সুযোগ না থাকে। বাংলাদেশের মতো জায়গায় একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করা অসম্ভবও নয়। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে কোটার সুবিধা দেওয়া উচিত নয় বলে মত তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেলালুর রহমান বলেন, পোষ্য কোটা একেবারে অযৌক্তিক। এটি সাধারণ গ্রামের একজন কৃষক, শ্রমিকের সন্তানের জন্য বোঝা। যেখানে তারা অনেক কষ্ট সহ্য করে একটা সিরিয়াল পান, কিন্তু কোটার জন্য ভর্তির সুযোগ পান না। অন্যদিকে, তার চেয়ে পেছনের সারির একজন ভর্তির সুযোগ পান। ফলে মেধাবী ওই শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে নিজের পরিবারকে সাহায্য করার পথ অনেকটা রুদ্ধ হয়ে যায় তার। এ কারণে পোষ্য কোটা অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন।
‘অন্যদিকে, খেলোয়াড় কোটায় যারা ভর্তি হন তাদের কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। ভর্তির পর তাদের কেউ ক্লাস করেন না। এমনকি পরীক্ষাও দিতে পারেন না সময়ের অভাবে। দেখা যায় চার বছরের অনার্স তিনি সাত থেকে আট বছরে শেষ করেন। এমনিতেই তিনি ভালো জায়গায় আছেন, সেখানে কেন আবার তাকে ঢাবিতে ভর্তি হতে হবে? তার আসনটা অন্য একজন শিক্ষার্থী পেলে সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে। নিজের পরিবারের পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করতে পারবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষায়তন, কোনো ক্লাব নয় যে খেলোয়াড় কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করতেই হবে। গত দুই বছর যেভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা যথাযথ হয়নি। তাদের ঢালাওভাবে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে অন্তত এমসিকিউ পরীক্ষায় পাস নম্বর তোলার যোগ্যতা অর্জন করার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত।’
পোষ্য কোটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এমসিকিউ ও লিখিত উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তালিকায় তার নাম আসে, এরপর সে পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পায়। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি কখনও এমন হয় যে, কোনো শিক্ষার্থী ন্যূনতম পাস নম্বর না তুলেও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে তাহলে সেটা অনিয়ম হবে।’
আরও পড়ুন
পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করা বৈষম্যমূলক ও স্বেচ্ছাচারী
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, সংবিধানের ২৮ (০৪), ২৯ (১) ও ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নারী বা শিশুদের অনুকূলে বা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের উন্নতির জন্য বিশেষ বিধান বা কোটার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েরা সেই মানদণ্ড পূরণ করেন না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করা বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী ও অযৌক্তিক।
তিনি বলেন, খেলোয়াড় কোটা সংরক্ষণ রাখাটাও সংবিধান পরিপন্থি। কাদের জন্য কোটা প্রয়োজন সে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ সবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা জরুরি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই।
খেলোয়াড় কোটায় আবেদনকারীদের অন্য প্রার্থীদের মতো ইউনিটভিত্তিক লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তারা মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নিশ্চিত করতে পারবেন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এই কোটায় পরীক্ষা ছাড়াই ৪৯ জন এবং ২০২৩-২৪ সেশনে ৬০ জনকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি-ইচ্ছুক প্রার্থীদের জাতীয় দলের বর্তমান খেলোয়াড় হতে হবে। এ ছাড়া প্রার্থীদের গত তিন বছরের মধ্যে জাতীয় দল, জাতীয় ‘এ’ দল এবং বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব ২৩, ২০, ১৯, ১৭ কিংবা ১৬ দলের সদস্য হয়ে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোটা রিভিউ কমিটির এক সদস্য বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার সন্তানকে কেন কোটা দিতে হবে? একজন কর্মকর্তার ছেলের কেন কোটার প্রয়োজন হবে? সাধারণত তাদের সন্তানেরা কোটা ছাড়াই চান্স পেয়ে থাকে। কোটা তো প্রয়োজন সেই দরিদ্র কৃষকের সন্তানের যে এত কষ্ট করেও ভালো জায়গায় পড়তে পারছে না। এই কোটা ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সন্তানেরা কিছুটা সুবিধা পেয়ে থাকেন। আমরা পরবর্তী সভায় পোষ্য ও খেলোয়াড় কোটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রশাসনের কাছে একটা সুপারিশ করব।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষা কমিটির মিটিং ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে কোটার বিষয়ে আলোচনার পর আমরা বিশেষজ্ঞ কোটা সংস্কার কমিটি গঠন করি। সেই কমিটি কাজ শুরু করেছে এবং প্রথম সভায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
‘পরবর্তীতে তারা আরও বৈঠক করবে এবং অন্যান্য কোটার বিষয়ে আলোচনার পর প্রশাসনকে সুপারিশ করবে। সেই সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটিতে উত্থাপিত হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
কেএইচ/এমজে/এমএআর/