শিশু আয়হামের চিকিৎসায় ‘ভয়াবহ’ অবহেলার প্রমাণ
আহনাফ তাহমিদ আয়হাম। একটি সবুজ-শ্যামল গাছের ছবি এঁকে সেটির নাম দিয়েছিল ‘ফ্যামিলি ট্রি’। সেই ছবিতে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল বাবা-মা ও ভাইসহ নিজের ছবি। এখন ছবিটা শুধুই স্মৃতি! কারণ সেই ফ্যামিলি ট্রি থেকে সবার আগেই ঝরে গেছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়হাম। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সুন্নাতে খতনা করাতে গিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘ভয়াবহ অবহেলায়’ নিভে যায় আয়হামের জীবন প্রদীপ।
মৃত্যুর ৮ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও শিশু আয়হামের বেডরুমটি এখনও সেই আগের মতোই আছে। বেশ পরিপাটি, গোছানো, পড়ার টেবিলে থরে থরে সাজানো বই-খাতা। ড্রয়ারে রং-পেনসিল। স্কুল ব্যাগটাও আছে আগের জায়গায়। আয়হামের ব্যবহৃত এসব জিনিসপত্রে লেগে থাকা তার স্পর্শগুলো নষ্ট হবে, এমনটা ভেবে এই কক্ষে থাকে না কেউ। আয়হামের মা মনে করেন তার ছেলে এখনো বেঁচে আছে। তার সঙ্গে কথা বলে। প্রতিদিন অপেক্ষা করেন ছেলে বাড়ি ফিরবে...
না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো শিশু আয়হামের মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে সম্প্রতি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুটি চেতনানাশক ইনজেকশনের কারণেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে আয়হাম।
আয়হামের চিকিৎসায় ‘ভয়াবহ’ অবহেলার প্রমাণ
গত ২০ ফেব্রুয়ারি খতনা করাতে গিয়ে রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে মৃত্যু হয় আয়হামের। মৃত্যুর প্রায় ৮ মাস পর অবশেষে আয়হামের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এসেছে। রিপোর্ট বলছে, শিশু আয়হামের চিকিৎসায় ভয়াবহ অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। তার রক্তে দুই ধরনের চেতনানাশক পাওয়া গেছে। মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। এমনকি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আয়হামের শ্বাসনালি ক্ষত-বিক্ষত ছিল বলেও জানা গেছে। বলা হয়েছে, বড় মানুষদের জন্য ব্যবহৃত নল তার মুখে দিয়ে জোর করে ভেতরে ঢুকানোর সময় শ্বাসনালি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
আর পুলিশের তদন্তে দেখা যায়, অভিভাবকদের না জানিয়ে ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয় আয়হামকে। পুলিশের তদন্ত বলছে, সেই হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্ট ছিল না। এমনকি রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে অর্থোপেডিক সার্জন ইশতিয়াক আজাদ পালিয়ে যান বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।
এসব প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান ডা. এস এম আব্দুল আলিম বলেন, সব ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ ডোজ আছে। আমি যদি সরাসরি রক্তনালীতে দেই, তাহলে এর জন্য এক ধরনের ডোজ। আবার যদি এই ওষুধটি মাংসপেশি বা চামড়ার নিচে দেই নিচে দেই, তাহলে তারজন্য আরেক ধরনের ডোজ। যদি আমি ডোজ অতিক্রম করে ফেলি, তাহলে যেকোনো বয়সের ব্যক্তিরই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আবার ডোজ যদি কমও দেওয়া হয়, তাহলেও রোগীর ব্যথা কম হবে, অক্সিজেনের অভাব হবে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হবে এবং রোগীর মৃত্যু হবে। অর্থাৎ আমাকে অবশ্যই বুঝেশুনে রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা বুঝেই ডোজ প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন
আয়হামের আঁকা ফ্যামিলি ট্রি, নেই শুধু আয়হাম
বেশ পরিপাটি, গোছানো কক্ষ। পড়ার টেবিলে থরে থরে সাজানো বই-খাতা। ড্রয়ারে রাখা রং-পেন্সিল। স্কুল ব্যাগটাও আছে আগের জায়গায়। শুধু নেই আয়হাম। টেবিলে মিললো আয়হামের আঁকা ছবি, ফ্যামিলি ট্রি। ছোট ভাই আর বা-মার সঙ্গে আয়হাম। অথচ সবার আগে ঝরে পড়ল সে।
শিশুর মা খায়রুন নাহার বলেন, অনেকে বলে আয়হামের টেবিলটা ময়লা হয়ে আছে। বইপত্রগুলোতে ধুলাবালি জমে গেছে, এগুলো মুছে রাখো। কিন্তু আমি যখনই টেবিলের কাছে আসি, তখন আর মুছতে পারি না। মুছতে এলে মনে হয় যদি আয়হামের স্পর্শগুলো মুছে যায়! প্রতিটি জিনিসেই তো তার স্পর্শগুলো লেগে আছে।
তিনি বলেন, আমার যখন খুব বেশি মন খারাপ হয়, তখন আমি তার বই-খাতা আর জামাকাপড়গুলো ধরি। তখন মনে হয় যেন আয়হামকেই আমি ধরতেছি, তাকে আমি আদর করতেছি।
খায়রুন নাহার আরও বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না আমার আয়হাম নেই। আয়হাম আমার অস্তিত্ব, মনে হয় যেন সে সবসময়ই আমার সঙ্গে আছে। আমি নিজেই নিজের মনকে বলি আয়হাম স্কুলে আছে বা পড়তেছে। কিছুক্ষণ পরই বাসায় আসবে।’
মতিঝিল আইডিয়ালের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল আয়হাম। ছিল ক্লাস ক্যাপটেন। একটি প্রতিযোগিতায় সেরাও হয় আয়হাম, সেই পুরস্কার পরিবারের কাছে আসে তার মৃত্যুর পর। এবিষয়ে শিশু আয়হামের মা বলেন, আয়হামের মৃত্যুর দুদিন পর তার স্কুল থেকে ফোন আসে যে সে স্কুলের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। এই খবরটি আমার জন্য আরও বেদনাদায়ক। শুধু আমিই নয়, আমার পরিবার-আত্মীয় স্বজন কেউই আয়হামের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। এখন আমাদের একটাই চাওয়া, জড়িতদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে পারি।
২০ মিনিটে খতনার কথা বলে দুই ঘণ্টা পর নিথর দেহ দেয় ডাক্তাররা
সুন্নতে খতনা করানোর জন্য জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারের চিকিৎসকরা ২০-২৫ মিনিট সময় চেয়েছিলেন শিশু আহনাফ তাহমিদ আয়হামের বাবার মোহাম্মদ ফখরুল আলমের কাছে।
আরও পড়ুন
ঘটনার স্মৃতিচারণ করে ফখরুল আলম বলেন, শুরুতে ২০-২৫ মিনিটের কথা বলা হলেও অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেওয়ার পর যখন আধ ঘণ্টা পার হয়ে যায়, তখনও কোনো আপডেট না পেয়ে জোর করে ভেতরে প্রবেশ করি। সেখানে গিয়ে দেখি আমার ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে, তখন তার মুখ ও নাগ দিয়ে রক্ত পড়ছে। পরে ওটি রুম থেকে এক পর্যায়ে জোর করে আমাকে বের করে দেয় চিকিৎসকরা। এরপর এভাবেই আরও দুই ঘণ্টা কেটে যায়। এরপরও ছেলের খোঁজ না পেয়ে আবার ওটিতে জোর করে প্রবেশ করি। তখন ভেতরে গিয়ে ছেলের অবস্থা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন আয়হাম মারা গেছে।
তিনি বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ডাবল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়েছে তাকে। ওটিতে নেওয়ার ২০ মিনিট পরেই আমার ছেলে মারা যায়। আমি বার বার ভেতরে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা যেতে দেয়নি। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
আসামিরা আয়হামের বুকে চাপাচাপি ও হাত-পায়ে মালিশ করতে থাকেন। ছেলেকে নিথর অবস্থায় দেখে এসময় অস্থির হয়ে পড়েন ফখরুল আলম। তার অস্থিরতা দেখে আসামিরা তাকে ওটি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন
রোগীর মৃত্যুতে গাফিলতি পেলে কোনো ছাড় নয় : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
এদিকে যেকোন রোগীর মৃত্যুর পেছনে যদি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের কোনো গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের কোনো ছাড় নয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান।
তিনি বলেন, সামান্য একটা মুসলমানির জন্য শিশু আয়হামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার সময় শিশুটিকে অজ্ঞান করার পর আর তার জ্ঞান ফেরেনি। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি আমরা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছি। শুধু তাই নয়, তাৎক্ষণিক আমরা গিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করেছি।
মইনুল আহসান বলেন, হাসপাতালটির সমস্ত তথ্য-প্রমাণ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে যতটুকু পেয়েছি, প্রতিষ্ঠানটির হাসপাতাল কার্যক্রম চালানোর কোনো অনুমোদন ছিল না। তবে তাদের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন ছিল। সুতরাং তারা যদি কোনো রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া দেয়, সেটি গুরুতর অন্যায়। আয়হামের ঘটনার ঠিক কিছুদিন আগেই ইউনাইটেড হাসপাতালে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটে, তার পরিপ্রেক্ষিতেও আমরা তাৎক্ষণিক ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধ করে দেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য একটাই, চিকিৎসা নিতে গিয়ে যদি কোনো রোগীর মৃত্যু হয়, এর পেছনে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের কোনো গাফিলতি থাকে, তাহলে অবশ্যই চলমান আইন অনুযায়ী মামলার মাধ্যমে তাদের বিচার হবে।
মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে
চিকিৎসায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জেএস হাসপাতালের তিন চিকিৎসককে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন, জেএস হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম মুক্তাদির, চিকিৎসক ডা. মাহাবুব মোরশেদ (৩৯) ও ডা. ইশতিয়াক আজাদ (৪৫)। এরপরই ডা. এস এম মুক্তাদির ও চিকিৎসক ডা. মাহাবুব মোরশেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় মোহাম্মদ ফখরুল আলম তার ছেলে আহনাফ তামহিদ আয়হামের (১০) সুন্নতে খতনা করার জন্য রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে নিয়ে যান। হাসপাতালে গিয়ে তিনি তার ছেলেকে ডা. এস এম মুক্তাদিরের কাছে নিয়ে যান। তখন ডা. মুক্তাদির আয়হামের কিছু টেস্ট লিখে দেন। টেস্টগুলো করিয়ে ফখরুল আলম ছেলেকে নিয়ে খিলগাঁওয়ের বাসায় চলে আসেন। পরে ওইদিন রাত ১১টার দিকে ডা. মুক্তাদির ফোন করে ফখরুল আলমকে জানান, তার ছেলের সবগুলো টেস্টের রিপোর্ট ভালো এসেছে। এখন তার সুন্নতে খতনা করাতে কোনো সমস্যা নেই। পরের দিন অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে ছেলের সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আবার জেএস হাসপাতালে ছেলে নিয়ে যান ফখরুল ইসলাম। হাসপাতালে নেওয়ার পর আয়হামকে ওটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসময় ডা. এস এম মুক্তাদির ও বাকি আসামিরা ফখরুল আলমকে জানায়, আয়হামের সুন্নতে খতনা করাতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে। আয়হাম ওটিতে যাওয়ার পর, ফখরুল আলম স্ত্রীকে নিয়ে ওটির দরজার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। যখন ২৫ মিনিট পার হয়ে যায়, তখন ফখরুল আলম ওটির দরজায় নক করলে চিকিৎসকরা জানায় তাদের আরও সময় লাগবে। এর পর প্রায় ১ ঘণ্টা পার হয়ে গেলে ফখরুল আলম ওটিতে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। ভেতরে থাকা চিকিৎসকরা ফখরুল আলমকে আরো অপেক্ষা করতে বলেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, চিকিৎসকদের এমন আচরণে ফখরুল আলমের মনে সন্দেহ জাগে। পরে তিনি এক প্রকার জোর করে ওটিতে প্রবেশ করেন। ওটিতে প্রবেশ করে দেখেন তার ছেলে আয়হাম অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ফখরুল আলম ওটিতে আরো দেখেন তার ছেলের বুকে আসামিরা চাপাচাপি করছে।
এছাড়া তিনি দেখতে পান তার ছেলের নাকে ও মুখে লাগানো নল দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি ডা. মুক্তাদিরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দেয়নি। এসময় ডা. মাহাবুব মোরশেদ আয়হামকে বেশ কয়েকটি ইনজেকশন দেন। ছেলেকে কীসের ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেয়নি আসামিরা। ছেলের এই অবস্থা দেখে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান ফখরুল আলম। কিন্তু ফখরুল আলমের কথা কর্ণপাত না করে আসামিরা আয়হামের বুকে চাপাচাপি ও হাত-পায়ে মালিশ করতে থাকেন। ছেলেকে নিথর অবস্থায় দেখে এসময় অস্থির হয়ে পড়েন ফখরুল আলম। তার অস্থিরতা দেখে আসামিরা তাকে ওটি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আয়হামকে ওটিতে নেওয়ার প্রায় ২ ঘণ্টা পর ছেলের শারীরিক অবস্থা জানতে চান ফখরুল ইসলাম। কিন্তু আয়হামকে শারীরিক অবস্থার কথা না বলে আসামিরা কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে ফখরুল আলম জোর করে ওটিতে প্রবেশ করে আয়হামের অবস্থা জানতে চাইলে আসামিরা জানায় আপনার ছেলে মারা গেছে।
টিআই/এসএম