হেফাজত ইস্যুতে কৌশলী আওয়ামী লীগ
হেফাজতে ইসলাম ইস্যুতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা সরাসরি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তারা হেফাজতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা বলছেন। পাশাপাশি সংগঠনটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না বানিয়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের হেফাজতের উগ্রতা থেকে রক্ষা করার কথা বলছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে যারাই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
তারা বলছেন, সরকার কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, হেফাজতে ইসলামকে নয়। হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগ বিরোধীদের একটি প্লাটফর্ম। বিতর্কিত হেফাজত নেতাদের হাত থেকে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে হবে।
দলটির নেতারা আরও বলছেন, সরকার কাওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, হেফাজতে ইসলামকে নয়। হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগ বিরোধীদের একটি প্লাটফর্ম। বিতর্কিত হেফাজত নেতাদের হাত থেকে কাওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে হবে
হেফাজতের হরতালের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ৩১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে সাংবাদিকদের হানিফ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্ম ব্যবসায়ী দলের ওপর ভর করে বিএনপি ও জামায়াত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলব; যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে স্বাধীন রাষ্ট্রে এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যাবে না। এগুলো কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আমরা কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেবো।
হেফাজতকে তো আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে না। তাদের মোকাবিলা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারণ তারা যে কর্মকাণ্ড করছে তা তো দেশের আইনশৃঙ্খলাবিরোধী। পুলিশ সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে জনগণের পক্ষে। আমরা জনগণের জীবনযাত্রা কোনোভাবে ব্যাহত হোক তা চাই না
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান
তিনি আরও বলেন, ‘হেফাজতের যারা এখানে আছেন, তাদের কাছে তো গানপাউডার থাকার কথা নয়। গানপাউডারের ব্যবহার আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছি। দেখেছি জামায়াতের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে গানপাউডারের ব্যবহার দেখে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, হেফাজতের কাঁধে ভর করেছে জামায়াত ও বিএনপি। তারাই এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘তারা কিছু টাকা পেয়েছে। সেই টাকা হালাল করার জন্য হরতালের নামে এ অপকর্ম করেছে। আমি মনে করি, তাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে ‘
কোনো বিদেশি মেহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে তারা হরতাল-নৈরাজ্য করবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এটা অমানবিক। আমাদের মুসলিম ধর্মে এমনটা নাই। এটা তো ঠিক নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘হেফাজতকে তো আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে না। তাদের মোকাবিলা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারণ তারা যে কর্মকাণ্ড করছে তা দেশের আইনশৃঙ্খলাবিরোধী। পুলিশ সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে জনগণের পক্ষে। আমরা জনগণের জীবনযাত্রা কোনোভাবে ব্যাহত হোক তা চাই না।’
দলটির অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কোনো বিদেশি মেহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে তারা হরতাল-নৈরাজ্য করবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এটা অমানবিক। আমাদের মুসলিম ধর্মে এমনটা নেই। এটা তো ঠিক নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
হেফাজতের কর্মকাণ্ডে আমরা ব্যথিত। কিন্তু এত সহজে এদের ছাড় দেবো, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। আইন আমরা নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাই না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের কাজ করবে। আমরা মানুষকে সজাগ রাখার কাজ করছি
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম তো নিজেদের রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে না। আমাদের তো কোনো দরকার নেই গায়ে পড়ে হেফাজতকে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বানানোর। রাজনীতির মাঠে বা ভোটের মাঠে কৌশল থাকবেই।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘হেফাজতের কর্মকাণ্ডে আমরা ব্যথিত। কিন্তু এত সহজে এদের ছাড় দেবো, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। আইন আমরা নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাই না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের কাজ করবে। আমরা মানুষকে সজাগ রাখার কাজ করছি।’
আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলব। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমি আহ্বান করব, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তিকে এ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলব। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমি আহ্বান করব, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তিকে এ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর অপর এক সদস্য বলেন, ‘মূলত শফী হুজুর (আল্লামা শাহ আহমদ শফী) মারা যাওয়ার পর হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। বলা যায়, শফী হুজুর থাকতে হেফাজতে ইসলামের ওপর আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তা নেই।’
দলটির অপর সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। এর অর্থ এই নয় যে হেফাজতকে স্বীকৃতি দিয়েছি। কওমি শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক মানুষ লেখাপড়া করে। তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। এ জনগোষ্ঠীকে সম্মানিত করা, চাকরির সুবিধা ও রাষ্ট্রের মূলধারায় কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।’
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়।
এইউএ/এসএম/এমএআর/জেএস