আশা জাগাচ্ছে মেট্রোরেল, কমাবে যানজটের ভোগান্তি
দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। শুরুতে চলবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। দ্রুতগতির এ বাহন মতিঝিল ও কমলাপুর পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হলে সুফল পাবেন নগরবাসী। মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘিরে ইতোমধ্যে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে মানুষ। রাজধানীর বুকে বিশাল এই উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকাবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
মেট্রোরেল নগরবাসীর যানজটের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব করবে। তাই স্বস্তির আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। অত্যাধুনিক এই যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন : আধুনিক প্রবেশ ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারবেন শুধু টিকিটধারী
মেট্রোরেল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কবিতা রাণী মৃধা বলেন, ঢাকাবাসীর যাতায়াতের একটি সুবিধাজনক মাধ্যম হবে মেট্রোরেল। কারণ এটি দিনে লক্ষাধিক যাত্রী বহন করতে পারবে। আর নারীরা, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে মেট্রোরেলের মাধ্যমে। কারণ বর্তমানে যে গণপরিবহনগুলো রয়েছে সেগুলোতে নারীদের প্রায়ই হয়রানির মুখে পড়তে হয়। কিন্তু বিকল্প কোনো পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বাধ্য হয়েই এসব কষ্ট স্বীকার করে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। এখন মেট্রোরেল চালু হলে নারীরাই সবচেয়ে বেশি মেট্রোরেল ব্যবহারে আগ্রহী হবে বলে আমি মনে করি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মো. রনি বলেন, মিরপুর কিংবা উত্তরার দিকে যেতে প্রতিবারই ট্রাফিক সিগন্যাল আর যানযটের কারণে নাকাল হতে হয়। এখন মেট্রোরেলে অল্প সময়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন : ‘প্রসব বেদনা’ ভুলতে মুখিয়ে মিরপুরবাসী
মেট্রোরেল নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য মেট্রোরেলের ব্যবহার রয়েছে। আশা করি, আমাদের দেশে মেট্রোরেল চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। কিছুটা হলেও জনজীবনে যানজটের ভোগান্তি লাঘব ঘটবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মেট্রোরেল। ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গণপরিবহন রয়েছে তা এখানকার জনগোষ্ঠীর তুলনায় অপ্রতুল। তাই গণপরিবহনে মানুষের অতিরিক্ত চাপ দেখা যায়। মেট্রোরেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষের যাতায়াতকে সহজ করবে। যানজট নিরসনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মেট্রোরেল চালু হলে শিক্ষার্থীদের যানজটের সমস্যা দূর হবে, পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় কমবে।
আরও পড়ুন : চাকা ঘোরার অপেক্ষায় মেট্রোরেল
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপদান করার জন্য মেট্রোরেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ঢাকাবাসী যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাবে। যানজটের কারণে আমাদের অনেক বড় একটি সময় অপচয় হয় এবং এর কারণে বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হই তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দেবে মেট্রোরেল। যেটা আমাদের জিডিপিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। এখন কাজ হচ্ছে, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এটাকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সেবার মান অব্যাহত রাখা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আমাদেরকে মেট্রোরেলের মতো বড় বড় মেগা প্রজেক্ট উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। এই মেট্রোরেল থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তারা যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহনের ব্যবহার কমিয়ে মেট্রোরেল ব্যবহার করবেন বলে আমি মনে করি। এতে দেশের জ্বালানি সাশ্রয় ও বায়ু দূষণ রোধ হবে। যেহেতু আমাদের দেশে প্রথম মেট্রোব্যবস্থা চালু হচ্ছে তাই এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা থাকবে তাদেরও স্মার্টলি দায়িত্ব পালন করতে হবে। সর্বোপরি আমাদেরও এটার রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একসময় যারা আমাদের দেশকে বটমলেস বাস্কেট বলত তাদের সেই কথার মোক্ষম জবাব হলো আমাদের মেট্রো ব্যবস্থায় প্রবেশ।
এমএল/এসএসএইচ/