আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ‘ট্রাম্প কার্ড’ মেট্রোরেল
• মেট্রোরেলে যানজট শেষ হবে, এটাই প্রত্যাশা : কাজী জাফর উল্লাহ
• যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে : আব্দুর রহমান
• স্বাধীনতার ৫১ বছরে নতুন মাইলফলক মেট্রোরেল : নাছিম
• প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের উদাহরণ মেট্রোরেল : আহমদ হোসেন
• শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল : মোজাম্মেল হক
• বিজয়ের মাসে আরেকটা বিজয় মেট্রোরেল : আবদুস সবুর
আগামী বছরের শেষের দিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বহুকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। যা মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম মেট্রোরেল, যা শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন। আগামী নির্বাচনের কমলাপুর পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেলের পাশাপাশি ‘এমআরটি’র আরও কয়েকটি লাইনের উদ্বোধন হতে পারে। যা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মাধ্যমে শুধু রাজধানীতে নয়, দেশজুড়েও ভোটের মাঠে অনেকটা এগিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ— বলছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
মেট্রোরেল চালু উপলক্ষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা ভালো খবর। কারণ সময় মতো শুরু হচ্ছে। তবে, যতটুকু হওয়ার কথা ছিল ততটুকু হচ্ছে না। তারপরও শুনলাম, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত হবে। আমার মনে হয় যারা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে, শহরের মধ্যে এ ধরনের উন্নয়নকাজ করা কঠিন, তারপরও যারা এটা করতে সক্ষম হয়েছেন, বিশেষ করে আমাদের সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ প্রত্যেকটা কর্মচারী ও অফিসারদের আমি স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই।’
‘আমি আশার করি, এটা শুরুর মাধ্যমে আমাদের যানজট শেষ হবে।’ ভোটের মাঠে এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেমন প্রভাব পড়বে, এটা বলা কঠিন। কারণ, মানুষ একবার পেয়ে গেলে রাতারাতি তা ভুলে যায়। কিন্তু প্রভাব থাকা উচিত। এত বড় প্রকল্প সময়মতো শেষ হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্টরা দিন-রাত পরিশ্রম করে এ ধরনের একটা মেগা প্রকল্প করতে সক্ষম হয়েছে, কিছু প্রভাব তো থাকা উচিত।’
আগামীকাল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এটি। কর্তৃপক্ষ বলছে, পৌনে ১২ কিলোমিটারের এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড। যানজটের নগরী ঢাকায় বাস কিংবা অন্য যানবাহনের চেয়ে এত দ্রুত যাতায়াত ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেবে, সড়ক যোগাযোগে উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্তের।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটি শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের মাইলফলক। মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক যে অঙ্গিকার তার অভাবনীয় প্রতিফলন এটি। আগামী নির্বাচনের জন্য মেট্রোরেল ট্রাম্প কার্ড হবে কি না, তা প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হলো এটি মানুষের উপকারে আসবে কি না। নিশ্চয়ই এটি মানুষের উপকারে আসবে। যাতায়াতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। মানুষ যদি উপকার পায় তাহলে অবশ্যই রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।’
ঢাকা মহানগরীতে ২০টি নির্বাচনী আসন রয়েছে। নির্বাচনী এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতের দ্রুততম ব্যবস্থা হবে মেট্রোরেল। রাজধানীবাসী মেট্রোরেলের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। এ কারণে রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনের নির্বাচনে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে পারে মেট্রোরেল। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে রক্ষা মেলায় ভোটাররা খুশি হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন— মনে করছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। নির্বাচনী প্রচারণায়ও প্রাধান্য পাবে মেট্রোরেল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেট্রোরেল একটি উন্নত ও আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা। আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশেই এই ধরনের মেট্রোরেল সার্ভিস নেই। ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনা সরকারের অন্যরকম অর্জন মেট্রোরেল। বিজয়ের মাসে আমরা তা উপভোগ করব। স্বাধীনতার ৫১ বছরের নতুন মাইলফলকও এই মোট্রোরেল।
তিনি বলেন, কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার সততা, দক্ষতা ও অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে- সেগুলো হলো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীলতা। এই সবকিছু আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে এবং জনমত সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে। সেই যাওয়া পথে পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ মেগাপ্রকল্পসহ মেট্রোরেল যেটা চালু হচ্ছে সেটার প্রভাব ভোটে পড়বে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে, মেট্রোরেলের মাধ্যমে সেই বার্তা আবারও যাবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে। মেট্রোরেলের মাধ্যমে ঢাকা সিটির যানজটের সমাপ্তি ঘটবে। সাধারণ মানুষ খুব সহজে এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আধুনিক প্রযুক্তির একটা উদাহরণ সৃষ্টি হবে।’
‘শুধু মেট্রোরেল নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বিশেষ করে ব্রিজ-কালভার্ট, রাস্তা নির্মাণ, বাইপাস, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল বা মেট্রোরেল— সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে গতি সেই গতি হচ্ছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা। যে জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেবে। সেই ভোটের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে।’
আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাঙালি জাতির চরম আকাঙ্ক্ষার একটা ব্যবস্থা হলো মেট্রোরেল। শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও ভিশনারি লিডারশিপের কারণে আজ বাংলাদেশের মানুষ একটা নতুন সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পেল। বাংলাদেশে মেট্রোরেল চালু হতে যাচ্ছে— এটা আমাদের বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের।
‘দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য একটা সরকার কী কী কাজ করল, সেটা দেখেই মানুষ ভোট দেয়। সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষ মেট্রোরেলের মাধ্যমে উপকৃত হবে। আমাদের ঢাকা শহরের যানজট লাঘব হবে। সব কাজ শেষ করতে পারলে ঢাকা শহরে দুর্বিষহ যানজট আর থাকবে না। এটা সরকারের পজিটিভ দিক। মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে— এটা জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।’
মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মাধ্যমে রাজধানীবাসীর ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। যোগাযোগের নতুন এ ব্যবস্থা ঘিরে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন মিরপুর, আগারগাঁওসহ ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আধুনিক সিটি ঢাকার জন্য আরেকটা নতুন অধ্যায় রচনা হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেট্রোরেল ভূমিকা রাখবে। মেট্রোরেল হবে স্মার্ট বাংলাদেশের একটা ধারাবাহিকতা।
‘২০৪১ সালের যে আকাঙ্ক্ষা- উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, এটা নির্মাণে বিশাল ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। আর এর উদ্বোধন হবে বিজয়ের মাসে, বাঙালি জাতির জন্য শেখ হাসিনার নতুন উপহার হবে এটি। বিজয়ের মাসে যেন আরেকটি বিজয়। আমি বিশ্বাস করি, মেট্রোরেলের কারণে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য সুবিধাভোগী জনগণ একত্রিত হয়ে কাজ করবেন।’
এমএসআই/এমএআর/